ভিটেমাটিহীন দিনমজুর জামিনুর ইসলাম একটু বেশি রোজগারের আশায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে প্রায় সাত বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে যান। সেখানে একটি ইটভাটায় স্ত্রী আলমিনা খাতুনকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। রোজগারও ভালোই হচ্ছিল। ভারতে যাওয়ার পর আরও একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয় জামিনুর-আলমিনা দম্পতির। দেশে ফিরে স্ত্রী-সন্তানসহ একটু ভালোভাবে থাকার আশায় রোজগারের বেশিরভাগই জমাচ্ছিলেন। বছর দুয়েক আগে সঞ্চিত অর্থ, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশের উদ্দেশে রওনা দেন। হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় দালালের খপ্পরে পড়ে তার স্বপ্ন সীমান্তের কাঁটাতারে আটকা পড়ে। দালালরা জামিনুরের কাছে থাকা সব অর্থ কেড়ে নিয়ে তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। সেই থেকে জামিনুর পরিবারসহ ভারতের বরমপুর কারাগারে বন্দি। আর তার বড় মেয়ে জেসমিন (১৪) সম্প্রতি দেশে ফিরেছে।
জামিনুরের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনি দীঘিরপাড় গ্রামে। প্রায় সাত বছর আগে ফুলবাড়ীর কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে দালালদের সহায়তায় সপরিবারে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন জামিনুর। দুই বছর আগে দেশে ফেরার সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হন জামিনুর, তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান। আর ভারতের সেফহোমে ২২ মাস কাটিয়ে ২০ এপ্রিল দেশে ফিরেছেন জেসমিন।
জেসমিন জানায়, ১৯ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর পথ দিয়ে বাংলাদেশের আরও ৮ কিশোরীকে ফেরত দেয় বিএসএফ। সেখান থেকে শিবগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয় তাদের। পরে তার মামা আঙ্গুর হোসেনের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। জেসমিন বর্তমানে নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দেওয়ানটারী গ্রামে নানা আজিজার রহমানের বাড়িতে রয়েছে।
সে বলে, ‘বাবা-মা পাঁচ বছর ভারতে কাজ করে দেশে ফেরার সময় সীমান্তে দালালরা আমাদের কাছ থেকে সব টাকা নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। তখন থেকে আমার বাবা-মা ও দুই বোন ভারতের বরমপুর কারাগারে বন্দি আছে। আমি মালদহের একটি সেফহোমে ছিলাম। আমি দেশে এলেও বাবা-মা সেখানে বন্দি।’
আঙ্গুর হোসেন জানান, তার বোন ও বোনজামাই নিঃস্ব অবস্থায় ভারতে গিয়ে কিছু রোজগার করে দেশে ফেরত আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের পরিশ্রম করে রোজগারের সব টাকা লুট করে নিয়েছে ভারতের দালালরা।
তিনি আরও বলেন, ‘দুই মাস পর ওরা মুক্তি পাবে। তখন যেন তারা নিরাপদে দেশে ফিরতে পারে। আর যেন কোনও হয়রানির শিকার না হয়।’
শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত জেসমিনের পড়াশোনার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শঙ্কর কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, ‘আমরা জেসমিনের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগিতা করবো। ওর পরিবার যেন আমাদের (উপজেলা প্রশাসনের) সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখে।’