গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে তিন কিশোরকে অপহরণের ৯ দিন পর চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই শাশুড়িসহ মেয়ের জামাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার সুজা কাঠঘর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর থানার পশ্চিম আবদুল্লাহপুর গ্রামের সামসুদ্দিনের ছেলে মোস্তফা কামাল ভাবন (২৪), ভাবনের শাশুড়ি একই থানার দাড়িয়াকান্দি গ্রামের আব্বাস আলীর স্ত্রী সোহেনা (৩৫) এবং ভাবনের চাচি শাশুড়ি মো. শিশু মিয়ার স্ত্রী রিতা (৩৫)। গ্রেফতারকৃতরা গাজীপুরের টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো।
অপহৃতদের স্বজনদের বরাত দিয়ে কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের তিন কিশোর মোখলেছুর রহমানের ছেলে সহিদ (১৩), একই এলাকার দুলাল মোড়লের ছেলে ইকবাল মোড়ল (১৭) ও ফরিদ মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া (১৯) বেশ কিছুদিন ধরে কাজের সন্ধান করছিল। হঠাৎ তাদের সঙ্গে মোস্তফা কামাল ভাবনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে ভাবন ওই কিশোরদের জুতা তৈরির কারখানায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে কৌশলে গত ১৫ মে (মঙ্গলবার) দুপুরের দিকে যাত্রীবাহী বাসে করে কাপাসিয়া থেকে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকায় অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ভাবন ও তার সহযোগীরা একটি বাসায় কিশোরদের আটকে রেখে মারধর ও মুক্তিপণ দাবি করে। এ সময় অপহৃত কিশোরদের অভিভাবকদের মোবাইলে ফোন করে অপহরণকারীরা জানায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ওই তিন কিশোর গুরুতরভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাদের বাঁচাতে হলে দ্রুত টাকা পাঠাতে হবে। তাদের কথামতো তিন কিশোরের অভিভাবক অহরণকারীদের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে ২১ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা আরও টাকা দাবি করে। তাদের স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে তাদের খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। নিখোঁজ কিশোরদের সন্ধান না পেয়ে গত ১৯ মে অপহৃত সোহাগ মিয়ার বাবা ফরিদ মিয়া কাপাসিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। একপর্যায়ে পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে অপহরণকারীরা চেতনানাশক খাইয়ে অপহৃতদের টঙ্গী থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনির হোসেনের নেতৃত্বে কাপাসিয়া থানার পুলিশ বুধবার ভোর রাতে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোহেনা ও রিতাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য ভিত্তিতে ও মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার সুজা কাঠঘর এলাকা থেকে অপহরণকারীচক্রের মূলহোতা ভাবনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকার পরিত্যক্ত টিনশেডের একটি কক্ষ থেকে অপহৃত ওই তিন কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা অপহরণকারীচক্রের সদস্য বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।