X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু সেতু ও শহর রক্ষা বাঁধসহ টাঙ্গাইলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন

এনায়েত করিম বিজয়, টাঙ্গাইল
১৪ জুলাই ২০১৮, ১৩:১৯আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৩:১৯

বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষা গাইড বাঁধ এলাকার সেতুর পূর্ব পাড় গরিলাবাড়ী অংশে ভাঙ্গন

টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষা গাইড বাঁধ, রানা গাছা এলাকার ঝিনাই নদীতে শহর রক্ষা বাঁধ, পৌলী নদী ও ধলেশ্বরী নদীসহ নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক ভিটাবাড়িসহ আবাদী জমি। বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষা গাইড বাঁধ এলাকার সেতুর পূর্ব পাড় গরিলাবাড়ি অংশে গত দুই-তিনদিন ধরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় ধসসহ প্রায় ১০টি বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মধ্যে রয়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গবন্ধু সেতু। ভাঙন ঠেকাতে সেতু কর্তৃপক্ষ জিও ব্যাগ ফেললেও কোনও কাজে আসছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব কালিহাতী উপজেলার গরিলাবাড়ি এলাকায় সেতুর দক্ষিণে যমুনা নদীতে সিসি ব্লক ও কার্পেটিং করে গাইড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। 

এদিকে টাঙ্গাইল সদরের ঘারিন্দা ইউনিয়নের রানাগাছা এলাকার ঝিনাই নদীতে শহর রক্ষা বাঁধে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে বাঁধের বেশির ভাগ অংশ ভেঙে গেছে। কবরস্থান, রাস্তাঘাট ও এ এলাকার শাহাদত এবং সিদ্দিক আলীসহ ৮/১০ জনের বস ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোনও সময় এই বাঁধটি ভেঙে গিয়ে শহরে পানি প্রবেশ করতে পারে। আর এ কারণে আতঙ্কে রয়েছে এ এলাকার মানুষ।

রানাগাছা এলাকায় ঝিনাই নদীতে শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন

রানা গাছা এলাকার আব্দুল জলিল বলেন,‘আমাদের এলাকার রাস্তাটি টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। রাস্তাটির আংশিক ভেঙে গেছে। বাকি অংশতেও ফাঁটল ধরেছে। রাস্তাটির ভেঙে যাওয়া রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা।’

কালিহাতী উপজেলার ধলেশ্বরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যেই কদিম হামজানী, দশকিয়া ও জোকারচর এলাকার বেশ কয়েকটি বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী পারের মানুষ।

অপর দিকে এলেঙ্গার পৌলী নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে নদীর বাম তীরে ৬শ’ মিটার ও ডান তীরে ৮শ’ মিটার এলাকার ৮/১০টি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। ডান তীরের ভাঙন টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে। পৌলী নদীর বাম তীরে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভা ও সহদেবপুর ইউনিয়ন এবং ডান তীর সদর উপজেলার গালা ও ঘারিন্দা ইউনিয়নের আওতায়। নদীর বাম তীরে (উত্তরাংশে) অর্থাৎ এলেঙ্গা পৌরসভার অংশে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। গত এক সপ্তাহের ভাঙ্গনে এলেঙ্গা পৌরসভার ফটিকজানী ও মহেলা গ্রামের ৬শ’ মিটার এলাকার আবাদি জমি এবং মহেলা গ্রামের সেকান্দার আলীসহ কয়েকজনের ৮-১০টি বাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। এ নদীর ভাঙ্গন চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধটি ভেঙে গেলে কালিহাতী উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি-ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার অপুরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে।

পৌলী নদীর ডান তীরে রেলব্রিজ সংলগ্ন এলাকাটিও এলেঙ্গা পৌরসভার মহেলা আদর্শ গ্রাম এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের পাছবেথইর, আগবেথইর ও শালিনা গ্রামের অংশেও ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে ৮শ’ মিটার এলাকা ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে বর্তমানে কম্পার্টমেন্টা লাইজেশন পাইলট প্রকল্পের বাঁধ (টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ) ছুঁই ছুঁই করছে পানি। এ বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে টাঙ্গাইল শহর, গালা, ঘারিন্দা, করটিয়া ইউনিয়নসহ বাসাইল উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ডুবে যাবে।

বাসাইল উপজেলার ঝিনাই নদীর তীরবর্তী কাশিল কেবিএন উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ ভেঙে গেছে

বাসাইল উপজেলার ঝিনাই নদীর ভাঙনে কাশিল কেবিএন উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ, নথখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের একটি অংশ ও শহীদ মিনারি এরইমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর এ উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়। 

স্থানীয়রা জানান, শুকনো মৌসুমে এসব নদীতে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করায় প্রতি বছর ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব নদী থেকে প্রতি বছর বালু উত্তোলন চললেও স্থানীয় প্রশাসনের উল্লেখ যোগ্য কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বালু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে একটি মহল, আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সেতু রক্ষা গাইড বাঁধ এলাকার সেতুর পূর্ব পাড় গরিলাবাড়ীর ভাঙন

টাঙ্গাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ জানান, ‘ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদিত হলে ভাঙ্গনরোধে কাজ করা হবে।’

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন,‘ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,‘ভাঙ্গন প্রতিরোধে দুই স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং শুকনো মৌসুমে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা।’

 

 

/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ