X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নরসিংদীতে বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ

আসাদুজ্জামান রিপন, নরসিংদী
১৮ জুলাই ২০১৮, ১৮:০০আপডেট : ১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০৫

টেংরা মাছ

নরসিংদী জেলার নদী, খাল-বিল ও ডোবা থেকে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, কীটনাশকের ব্যবহার ও নদী দূষণে এসব মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। তবে কত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে আর কত প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে –এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই মৎস্য দফতরে। এদিকে জেলার মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে পুকুর-জলাশয়ে চাষের মাধ্যমে বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম বেশ কিছু প্রজাতির মাছ রক্ষার চেষ্টা চলছে।

মৎস্য শিকারি, ব্যবসায়ী, মৎস্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদীতে ৯৪টি বিল, ৪টি নদীসহ অসংখ্য খাল রয়েছে। মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, ব্র‏হ্মপুত্র, পাহাড়িয়া, কলাগাছিয়া, শীতলক্ষ্যা, হাড়িধোয়া, চিনাদী বিলসহ প্রায় সব নদী ও খাল-বিলেই একটা সময় প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যেতো। মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করতেন হাজারো মানুষ। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও বিক্রি হতো এসব মাছ। জেলার প্রায় সব নদী, খাল-বিলের নাব্যতা কমে যাওয়া, পানির প্রবাহ না থাকা, কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার, নদী দখল ও শিল্প বর্জ্য ফেলার কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এ ছাড়া, প্রাকৃতিক কারণে ধ্বংস হচ্ছে মা মাছের আবাসস্থল, নষ্ট হচ্ছে মাছের বংশবিস্তার।

নরসিংদীর ভেলানগর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী প্রাণ কুমার বলেন, ‘আশির দশকে নরসিংদীর মেঘনা নদীতে ধরা পড়তো সিলন মাছ। মাছটি আকারে ৮-৯ ইঞ্চি লম্বা ও সাধারণত এক থেকে দেড় কেজি ওজনের হতো, ক্ষেত্রবিশেষে ওজন ৫-৬ কেজিও হতো। অত্যন্ত সুস্বাদু এই মাছ পচন রোগে বিলুপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া, পিয়ালী, খুরকুটি, কাশ খররা, খোকশা, জয়া, ফলি, নাপ্তানি, চেলি, চাটুয়া, রয়না মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’

সদর উপজেলার মেঘনা পাড়ের হাজিপুর জেলেপাড়ার রন দাস বলেন, ‘আগে পাঙ্গাস, গুছি, চিতল, বাঘাআইড়, খল্লা, বাছামাছ, বাতাইয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ মেঘনায় পাওয়া যেতো। এখন সেসব মাছের নামও ভুলে যেতে হচ্ছে। শিল্পকারখানার নিক্ষিপ্ত বর্জ্যের কারণে পানি দূষিত হওয়া ও অভয়াশ্রম না থাকায় এসব মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দিন দিন অন্যান্য মাছও বিলুপ্ত হচ্ছে।’

ছোট মাছ

পলাশ উপজেলার কুড়াতলী এলাকার জেলে দুলাল দাস বলেন, ‘পাবদা, শিং, কৈ, মেনি, খলিশা, মলা, ঢেলা, বাইন, বেলে, টাকি, শৌল, মাগুর, গজার, পাবদা, টেংরা, কানলা মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, নাব্যতা সংকট, পোনা ও প্রজনন সক্ষম মাছ ধরাসহ পরিবেশগত কারণে খাল-বিল ও নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।’

শিবপুর উপজেলার ভিটি চিনাদী গ্রামের জেলে বিপুল বর্মণ বলেন, ‘শিবপুরের ঐতিহ্যবাহী চিনাদী বিলে একটা সময় প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়তো। গত দেড় যুগ ধরে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছই পাওয়া যায় না। এর মধ্যে বইছা, খইলশা, গোলশা, রানী মাছ, কটকটি মাছ একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’

নরসিংদী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তোফাজ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নানা কারণে সারাদেশের মতো নরসিংদীতেও দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে এর সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই। দেশীয় মাছ রক্ষায় সরকারের নানান প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে জেলাজুড়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুকুর ও জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছের চাষ বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মেনি, শৈল, টাকি, বাইন, শিং, কই, পাবদা, গোলশা, খলিশার চাষ করা হচ্ছে। মাছের বংশবিস্তার ও রক্ষার জন্য একাধিক নদী ও বিলে অভয়াশ্রম তৈরির চেষ্টা চলছে।’

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ