X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

নীলফামারী প্রতিনিধি
১৬ আগস্ট ২০১৮, ১২:০০আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১২:০৪

ভেঙে পড়ছে আশ্রয় প্রকল্পের পিলার নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।  ঘর তৈরির জন্য নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে আরসিসি পিলার (খুঁটি) মাটিতে গাঁথার সময় ভেঙে রড বের হয়ে আসে। আর এই ভাঙা খুঁটি রক্ষার জন্য রশি দিয়ে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বজলুর রশীদ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অন্ধকারে রেখে এসব অনিয়ম করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের অধীন উপজেলায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৩০০ ঘরের প্রতিটির জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ। পাঁচটি ইউনিয়নে ৬০টি করে ঘর নির্মাণ হবে। পাঁচ সদস্যের পিআইসির অন্য সদস্যরা হলেন পিআইও (সদস্যসচিব), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা।

নাম প্রকাশ্যে অনচ্ছুক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানান, কাজের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। অথচ এখনও ৩০০ ঘরের মধ্যে একটিরও নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে শুধু আরসিসি পিলার ও কাঠের দরজা-জানালা তৈরির কাজ চলছে। অন্যান্য উপজেলায় ঘর নির্মাণ শেষ হলেও সৈয়দপুরে ঘর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় লোকজন বার বার অনুরোধ করছেন । তারা বলেন, ‘আমরাতো ইউএনও স্যারের ওপর দিয়ে কথা বলতে পারি না।’

অভিযোগে বলা হয়, প্রকল্প নীতিমালায় পিআইসির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) কাজটি করার কথা থাকলে সভাপতি তা করেননি। তিনি একক ক্ষমতাবলে তার পছন্দের ঠিকাদারকে সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ঘরের পিলার ও কাঠের দরজা-জানালা তৈরির কাজ করছেন। দরজা-জানালা তৈরিতে শাল, গর্জন, জামরুল, কড়াই, শিশু, আকাশমণি গাছের কাঠ ব্যবহারের কথা থাকলেও অল্প বয়সী ও অসার ইউক্যালিপটাস কাঠ দিয়ে তড়িঘড়ি কাজ করছেন। ফলে ঘরের টেকসই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে সুফলভোগীসহ চেয়ারম্যানরা অসন্তোষ প্রকাশ করছে।

শিডিউলে ১৭৫ বর্গফুট আয়তনের একটি টিনের ঘরে পিলার ১২টি, বারান্দায় পাঁচটি ও ল্যাট্রিনে চারটি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ঘরের জন্য চার বর্গফুটের পিলারের উচ্চতা ১২ ফুট, বারান্দা ও ল্যাট্রিনের পিলারের উচ্চতা ১০ ফুট পিলার মেশিনে তৈরি হবে। পিলারে থাকবে ছয় এমএম গ্রেড রড (চারটি)। কিন্তু নন-গ্রেড রড ব্যবহার করা হচ্ছে। পিলালের রড বাঁধাইয়ে রিং (চুড়ি) হিসেবে রডের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে ৮ নম্বর জিআই তার।

উপজেলা পরিষদ কার্যালয় চত্বরে পিলারের রড বাঁধাইয়ের পর সেসব ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে দেখা যায়, পিলারের বাঁধা রড ট্রাক-ট্রাক্টর থেকে নামাতে গিয়ে আঁকাবাঁকা হয়ে রিং খুলে ও হেলে পড়েছে। এগুলি মেরামত না করে স্টিলের ফর্মায় ফেলে ঢালাই করা হচ্ছে।

তৃতীয় শ্রেণির ইটের খোয়া (ডাস্টসহ) দিয়ে পিলার বানানো হচ্ছে। পিলার ঢালাই শেষে চটের মাধ্যমে ১৪ থেকে ২১ দিন পানি দেওয়ার (কিউরিং) কথা। কিন্তু সেখানে চটের বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে না, নেই পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা শেষ হওয়ায় দায়সারাভাবে পিলার তৈরির কাজ করা হচ্ছে।

উপজেলার কামারপুকুর, কাশিরাম বেলপুকুর, বোতলাগাড়ী, বাঙ্গালীপুর ও খাতামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে দেখা যায়, ঘরের পিলার, দরজা-জানালা তৈরি কাজ চলছে। কিন্তু কাজ দেখার জন্য কারিগরি (দক্ষ) কোনও লোক নেই। রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রিরা ইচ্ছে মতো কাজ করছেন। পিলার গুলো যথাযথভাবে কিউরিং না করায় গাড়িতে তুলতে গিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। বাঙ্গালীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এমন কিছু ভাঙা পিলার পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০০টি ঘরের নির্মাণকাজ চুক্তিতে দেওয়া হয়েছে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাককে। তিনি আবার ইউনিয়ন ওয়ারি রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রিদের সাব চুক্তিতে দিয়েছেন।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রতিটি ঘর তৈরিতে মজুরি বাবদ ১৭ হাজার টাকা ইউএনও স্যারের সঙ্গে আমার মৌখিক চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী আমি শ্রমিক লাগিয়ে কাজ করছি। ঘর তৈরিতে সব মাল স্যার সরবরাহ করছেন।’

বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শ্রী প্রণোবেশ চন্দ্র বাগচী বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হলেও সার্বিক বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কাজের নীতিমালা ও শিডিউল আমাকে দেওয়া হয়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বজলুর রশীদ অনিয়মের কথা অশ্বীকার করে বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী ও নকশা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। এতে অনিয়মের সুযোগ নেই। বাইরের লোককে নিয়ে সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়। এসব কথা ভিত্তিহীন।’

সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন বলেন, আমি স্থানীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর কাজের বিষয়ে জানতে পারি। এ নিয়ে স্থানীয় ঠিকাদাররা ক্ষিপ্ত আছেন। প্রকল্পের ঘর-২ নির্মাণকাজে নিম্নমানের রড সিমেন্ট, বালু, ইটের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তিনি কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

এ ঘটনায়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম শনিবার (২৮ জুলাই) সৈয়দপুরে প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শাহীনুর আলমকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শাহীনুর আলম বলেন, ‘ডিসি স্যার এ নিয়ে আমাকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করবো।’

 

 

 

/এসএসএ/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ