নরসিংদীতে জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ‘গর্ডিয়ান নট’ এ নিহত আবু আবদুল্লাহ আল বাঙালির মূল নাম গোলাম মোস্তফা ওরফে রুবেল। সে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে। তার মায়ের নাম মর্জিনা বেগম। ওই গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সে এসএসসি পাশ করে। পরে সে কালীগঞ্জের মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে।
সেখান থেকে পাশ করে যশোর এমএম কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়। ২০১৪ সালে ঝিনাইদহ থেকে যাওয়ার পর খুব কমই বাড়িতে আসত । এলাকার মানুষের সঙ্গেও সে কম কথা বলত। সে যশোরে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগদানকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো।
পাঁচ মাস আগে আবু আব্দুল্লাহ ওরফে মোস্তফা ও আকলিমা আক্তার মনি প্রেম করে বিয়ে করেন। পড়াশোনা করায় তার স্ত্রী বাবার বাড়িতেই থাকতেন। চলতি মাসের ২ তারিখে মোস্তফা ঢাকায় শ্বশুরালয়ে গিয়ে তিনদিন থাকার পর স্ত্রীকে নিয়ে যশোর চলে আসেন। এরপর থেকে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বুধবার রাতে মোস্তফা রুবেলের বেজপাড়ার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনকে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।
এসময় তার সৎ বাবা আব্দুল মান্নান জানান, তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এই খবর পেয়ে নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। তারা বিষয়টি নিশ্চিত করবে। তবে আপাতত তারা যে খবর পেয়েছেন তাতে অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে যে নিহত ওই নারী তার পুত্রবধূ। আর ছেলের নাম ভিন্ন হওয়ায় এখনও নিশ্চিত হতে পারছেন না।
জঙ্গি আবু আবদুল্লাহ আল বাঙালির ওরফে গোলাম মোস্তফা ওরফে রুবেল এর চাচা নজরুল ইসলাম জানান, সে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। পাশাপাশি একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগদানকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো।
নজরুল ইসলাম আরও জানান, গাজিপুরের শহিদুল ইসলামের মেয়ে আকলিমা আক্তার মনিকে সে বিয়ে করেছে। বিয়েতে তাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যা উপস্থিত ছিলেন। তবে ওই পরিবার রক্ষণশীল হওয়ায় তারা পুত্রবধূকে দেখতে পারেননি।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, মোস্তফা রুবেল এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে সে যশোরে একটি মেসে থেকে পড়ালেখা করতো। বাড়িতে খুব কম আসতো। অন্যরা যেভাবে নামাজ আদায় করেন সে ভিন্নভাবে করতেন।
তার চাচা নজরুল ইসলাম জানান, গত ২ অক্টোবর সে বাড়িতে বলে যায় কয়েকদিন তার মোবাইল বন্ধ থাকবে। তবে বাড়ির সঙ্গে সে যোগাযোগ রক্ষা করবে। এরপর ৭ দিন পার হয়ে গেলেও সে কোনও যোগাযোগ না করায় তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা পুত্রবধূর বিষয়টি নিশ্চিত হয়,কিন্তু ছেলের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে অনেকটা মিলে যাওয়ায় বাড়িতে কান্নাকাটি চলছে।
বেজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ বলেন,‘গত ৭/৮ মাস ধরেই মোস্তফার চলাফেরা সন্দেহ হয়েছিল। তাকে অনেকবার নিষেধ করেছি কিন্তু কথা শোনেনি।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) ইউনুচ আলী বলেন, ‘নরসিংদীতে নিহত জঙ্গীর বিষয়ে আমাদের কাছে অফিশিয়ালভাবে কোনও ম্যাসেজ আসেনি। আমরা এ ব্যাপারে কোনও কিছুই জানি না। তবে লোক মুখে শুনার পর তার মা মর্জিনা বেগম ও পালিত পিতা আব্দুল মান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।