X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরগুনায় নিষিদ্ধ জালে মারা পড়ছে বিভিন্ন জাতের পোনা মাছ

সুমন সিকদার, বরগুনা
১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৩৭আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৪৬

বরগুনায় অবৈধ জালে ধরা পড়ছে পোনা মাছ বরগুনা অঞ্চলে অবৈধ চরগড়া বা সুক্ষ ফাঁসের জাল (ঘোপ জাল) ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন অসাধু জেলেরা। এই জালের ব্যবহারের কারণে দেশীয় ও বিরল প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনাও ধরা পড়ছে। অবৈধ জালে যথেচ্ছ পোনা মাছ নিধনের কারণে মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবৈধ এসব জালে সংরক্ষিত বনের গাছ ব্যবহারের কারণে বনাঞ্চলও হুমকিতে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনার বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর মোহনায় জেগে ওঠা লালদিয়ার চড়সহ বিভিন্ন চরে অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। বিষখালী ও বলেশ্বরের মোহনায় কমপক্ষে ৩০টি ঘোপ বা চরগড়া দিয়ে ইলিশের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধরা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কতিপয় অসাধু জেলে।

তবে সাধারণ জেলেরা মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ও ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধিতে অবৈধ সুক্ষ ফাঁসের চরগড়া, ঘোপ, চিংড়ি, বেহুন্দি ও কারেন্ট জাল বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

জেলেরা জানান, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত লালদিয়ার চর। এই চরে প্রতি শীত মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবৈধ সুক্ষ ফাঁসের জাল (ঘোপ জাল) বা চরগড়া দিয়ে অবাধে মাছ ধরা হয়। দিনের বেলা ভাটার সময় এইসব চরে নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে খুঁটি ও জাল গেড়ে রেখে দেয় জেলেরা। এরপর রাতের বেলা জোয়ারের পানিতে যখন গোটা চর পানিতে তলিয়ে যায় তখন জাল টেনে বিভিন্ন জাতের মাছ ও পোনা আটকে দেওয়া হয়।

স্থানীয় পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা ও জেলে আবুল কালাম, আলম ও মো. ইউসুফের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর শীত মৌসুমে বরগুনার চরগুলোতে কিছু অসাধু জেলেরা চরগড়া দিয়ে মাছ শিকার করে আসছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় তাদের নিষেধ করা হলেও উল্টো তারা ভয়ভীতি দেখায়। শুধু মৎস্য সম্পদ ধ্বংসই নয় এই গড়া জালের জন্য তারা বিভিন্ন দুর্যোগে আমাদের রক্ষাকবচ বনগুলোকেও ধ্বংস করছে।

বরগুনা সদর উপজেলার সোনাতলা মৎস্য হ্যাচারির মালিক জাকির হোসেন মিরাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বরগুনার বিভিন্ন নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা চরে চরগড়া ও ঘোপ জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। সুক্ষ ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ শিকারের কারণে পোনা মাছ মারা পড়ছে। এতে মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়বে।

অবৈধ জালে দেশি বড় মাছের সঙ্গে ধরা পড়ছে বিভিন্ন জাতের পোনা মাছ স্থানীয় জেলেরা জানান, এক একটি ঘোপ বা চরগড়া তৈরি করতে বন বিভাগের অসাধু কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে লালদিয়া, হারিনঘাটা ও চরলাঠিমারা সংরক্ষিত বন থেকে গেওয়া ও কেওরা গাছ কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে। কম বয়সী লাঠি আকৃতির গাছ কেটে তৈরি করা হচ্ছে খুঁটি। এভাবে চলতে থাকলে নতুন জন্ম নেওয়া গাছ আর থাকবে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে সংরক্ষিত বন ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে ও অবৈধ জাল ধ্বংস করতে আমাদের অভিযান অব্যহত আছে। এছাড়াও অবৈধ জাল নিধনে ২১ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটি বিশেষ অভিযান করা হবে। আমরা আশাবাদী এই অভিযানের ফলে বরগুনাসহ উপকূলের নদ-নদী অবৈধ জালমুক্ত হবে।’

এ বিষয়ে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এত বড় বন রক্ষায় আমাদের জনবল পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া আমাদের দ্রুতগামী কোনও জলযান নেই। যে কারণে গাছ কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দুর্বৃত্তরা অন্যত্র পালিয়ে যায়।

গাছ কেটে জালে ব্যবহারের অভিযোগ শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টির তদন্তে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। যদি কেউ গাছ কেটে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বনদস্যু ও অবৈধ মৎস্য শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আমাদের সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলেদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে ক্যাম্পেইন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ