X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে রোহিতপুরের তাঁত শিল্প

মো. আব্দুল গনি, কেরানীগঞ্জ
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৫০আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:০০

বিলুপ্তির পথে রোহিতপুরের তাঁত শিল্প কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্তির পথে কেরানীগঞ্জের রোহিতপুরের তাঁত শিল্প। এখানকার তাঁতে বোনা লুঙ্গি (রোহিতপুর লুঙ্গি নামে পরিচিত) এখনও বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও লোকসানের মুখে পড়ে তাঁত শিল্প ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
একসময় তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত ছিল কেরানীগঞ্জের রোহিতপুরের তাঁত শিল্প এলাকা। এই তাঁত শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বড় ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সৃষ্টি হয়েছিল হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান।
এলাকাবাসী জানান, রোহিতপুর ইউনিয়নের উত্তর রামের কান্দা, দক্ষিণ রামের কান্দা,বাগ রামের কান্দা, নারায়ণ পট্টি, রোহিতপুর, কামারতা ও গোয়ালখালী গ্রামে প্রায় ১০ হাজার হস্তচালিত তাঁত ছিল। প্রতিটি বাড়িতেই দুই থেকে তিনটি তাঁত ছিল। রঙ, সুতা ও বুনন শৈলীতে রোহিতপুরের লুঙ্গির কদর ছিল সবার কাছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হতো। কিন্তু রঙ, সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লুঙ্গির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এতে লুঙ্গির বাজার মূল্যের চেয় উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ে যায় ব্যবসায়ীরা। এ কারণে ধীর ধীরে সিংহভাগ তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যায়। এই ঐতিহ্য শিল্প ধরে রাখতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা এলাকাবাসীর।
উত্তর রামের কান্দা এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম রাজু বলেন, আমাদের বাড়িতে একসময় ১০/১২টি তাঁত ছিল। একটি তাঁতের পেছনে ১০ জন লোক কাজ করতেন। এখন কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁত বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। বিলুপ্তির পথে রোহিতপুরের তাঁত শিল্প
বাগ রামের কান্দা গ্রামের সফর আলী বলেন, আমাদের বাড়িতেও এসময় তাঁত ছিল। কিন্তু লোকসানের মুখে টিকতে না পেরে বন্ধ করে দিয়েছি। বাঁচার তাগিদে এখন বাবুর্চির কাজ করছি।
নারায়ণ পট্টি এলাকায় তাঁতি শরীফ হোসেন বলেন, বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশা এখনো আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। কারখানায় হস্তচালিত ৮টি তাঁত রয়েছে। বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ কর্মী রয়েছেন। কেউ সানাভরা, কেউ তানামাঝা, কেউ তানা কাড়ানো এবং কেউ তাঁত বুননের কাজ করছেন।
তাঁতের কারিগড়র নয়ন (৫০) বলেন, প্রতি পিছ লুঙ্গির মজুরি মাত্র ১০০ টাকা। দিনে ২টির বেশি বুনতে পারি না। এই মজুরি দিয়ে সংসার চলে না।
বিলুপ্তির পথে রোহিতপুরের তাঁত শিল্প শরিফ কারখানার তত্ত্বাবধায়ক মো. রফিকুল বলেন, ‘রোহিতপুরী একখান লুঙ্গি (৪ পিস) তৈরি করতে খরচ হয় তিন-চার হাজার টাকা আর তা বাজার বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে দেড়-দুই হাজার টাকা। সুতাসহ আনুসাঙ্গিক সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেক তাঁত ব্যবসায়ী। এছাড়াও ভারত থেকে কমদামে লুঙ্গি আসায় তার ওপর প্রভাব পড়েছে।’
রোহিতপুর তাঁতি সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, ‘সরকার যদি হ্যান্ডলুম বোর্ডের মাধ্যমে তাঁতিদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে এবং রঙ, সুতার দাম কমায় তাহলে আমাদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এই রোহিতপুরী তাঁত শিল্পের হাড়ানো গৌরবকে উদ্ধার সম্ভব হবে।’

/এমএফ /এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ