কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে চর জেগে উঠেছে চর। এর ফলে রাঙামাটির জেলা শহরের সঙ্গে সাত উপজেলার লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যাতায়াতের চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ৬ উপজেলার সাড়ে ৪ লাখের বেশি মানুষ। একই কারণে পণ্য পরিবহনেও ভোগান্তি বাড়ছে। কাপ্তাই হ্রদে পলি জমে গভীরতা কমে যাওয়ায় এই দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণত অক্টোবর মাসের পরে তেমন কোনও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হ্রদের রিজার্ভ (সংরক্ষিত) পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ছাড়তে হয়। আবার জলেভাসা জমিতে চাষাবাদের জন্যও হ্রদে প্রচুর পানি ধরে রাখাও সম্ভব হয় না। সব মিলিয়ে চৈত্রের পর থেকেই পানি কমে যাওয়া ও হ্রদে প্রচুর পলির কারণে রাঙামাটির সঙ্গে উপজেলাগুলোর নৌপথে যোগাযোগে সমস্যা সৃষ্টি হয়। পণ্য পরিবহনসহ যাত্রীদের প্রচুর দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসময়।
রাঙামাটির সাতটি নৌপথে উপজেলার সঙ্গে সদরের যোগাযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কাপ্তাই, নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়িতে সড়কপথ থাকলেও বাকি চারটি উপজেলা বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু ও বিলাইছড়ির সঙ্গে সরাসরি নৌপথে আসা-যাওয়া করতে হয়। ইতোমধ্যে সবগুলো নৌপথে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট ছোট বোট করে উপজেলাগুলোতে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে। এতে খরচ যেমন বেড়েছে, তেমটি সময়ও লাগছে দ্বিগুণ। পণ্য পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় উপজেলাগুলোতে বেড়েছে দ্রব্যমূল্যের দাম।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের পরিচালক হেফাজত সবুজ বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটা, জুমচাষের জন্য পাহাড় কাটা ও বসতি স্থাপনের জন্য পাহাড় কাটার প্রভাব পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের ওপর। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার জন্য প্রাকৃতিক কারণের চেয়ে মানবসৃষ্ট কারণগুলোই বেশি দায়ী।’
এদিকে লঞ্চচালক ও যাত্রীরা জানায়, প্রতিবছর চৈত্র থেকে আষাঢ় পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জেলার উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও নির্বিঘ্ন রাখার জন্য যে উদ্যোগ তা চোখে পড়ছে না। জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং শুরুর আশ্বাস দিলেও এর কোনও কার্যক্রম চোখে না পড়ায় হতাশ ব্যক্ত করেন ভুক্তভোগীরা।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানি রয়েছে ৭৮.৪০ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) যা রুলকার্ভ অনুসারে এই সময়ে হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৩.২০ এমএসএল। সে হিসেবে কাপ্তাই হ্রদে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুট পানি কম আছে।’
রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দীন সেলিম বলেন, ‘পানি কমে যাওয়ায় আমরা লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। এখন কিছু ছোট ছোট বোটের মাধ্যমে যাত্রী সেবা অব্যাহত রেখেছি। ডুবোচরগুলো কারণে বোট চালাতেও কষ্ট হচ্ছে।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, ‘হ্রদ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি সহসাই কোনও উত্তর পাওয়া যাবে।’