X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদপুরে ২ শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, পাঠদান ব্যাহত

ইব্রাহিম রনি,চাঁদপুর
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২২আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:৩৭

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে স্কুলের কার্যক্রম চাঁদপুরে ২৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে  শিশুদের পাঠদান চলছে।  এসব স্কুল ভবনের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে প্রায়ই। কোনোটির আবার নড়বড়ে অবস্থা। আর বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায়  থাকেন বেশির ভাগ অভিভাবক।  এসব স্কুলের কোনও কোনোটিতে আবার খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, জেলার ৮টি উপজেলায় ১১৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৭৪টি স্কুলের ভবন  অতি জরাজীর্ণ ও ঝঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এই স্কুলগুলো হচ্ছে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ২৯টি, কচুয়া উপজেলায় ২৬টি, হাজীগঞ্জে ৪৩টি, হাইমচর উপজেলায় ৪টি, শাহরাস্তি উপজেলায় ২৮টি, ফরিদগঞ্জে ৮০টি, মতলব দক্ষিণে ২৭টি এবং মতলব উত্তর উপজেলায় ৩৭টি স্কুলের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ।

হাজীগঞ্জ উপজেলার দেশগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাবিহা সুলতানা জানায়, ঝড়-বাতাস শুরু হলে স্কুলঘরের চাল ভেঙে মাথায় পড়ার ভয়ে থাকি।

শিক্ষার্থী মিনহাজ বিন উমর জানায়, বৃষ্টি হলে বই নিয়ে স্থান পরিবর্তন করতে হয়। বেশি বৃষ্টি হলে রুম পরিবর্তন করতে হয়। তা না করলে বইসহ আমাদেরকে ভিজতে হয়। অনেক সময় বেশি বৃষ্টি হলে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেন স্যারেরা।

পূর্ব জাফরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন শিক্ষার্থী ফাইজা ও আয়েশা জানায়, ভবন জরাজীর্ণ থাকায় আমাদের ক্লাসে কোনও ফ্যান লাগানো হয় না। ফলে গরমের সময় ক্লাস করতে ভীষণ অনেক কষ্ট হয়।

দেশগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুর রহমান বলেন, ‘স্কুল ভবনের অবস্থা দেখলে হতবাক হয়ে যাবেন যে কেউ। আমাদের স্কুল ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। চাল ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘বহু দিন ধরে এই ভবনেই ক্লাস চলছে। কারণ, জরাজীর্ণ হলেও এখনও সংশ্লিষ্টরা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেননি। তাই বাধ্য হয়েই এখানে ক্লাস করাতে হচ্ছে। তবে বৃষ্টির পানি পড়া ঠেকাতে কয়েকদিন আগে  ভবনের চালায় নতুন টিন লাগিয়েছি।’

চাঁদপুর সদর উপজেলার পূর্ব জাফরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়ন্তী বলেন, ‘এ স্কুলের একটি ভবন জরাজীর্ণ এবং আরেকটি পরিত্যক্ত। তাই বাচ্চাদের ঠিক মতো বসানো যাচ্ছে না। ছোট্ট একটি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে যেখানে ৩০ জন বাচ্চা বসতে পারে, সেখানে ৫০ জন বাচ্চা বসাতে হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদানও।’ তিনি বলেন, ‘মায়েরা এলাকার ছোট ছোট বাচ্চাদের এখানে ভর্তি করার জন্য নিয়ে এলেও বাচ্চারা এই ভাঙা স্কুল দেখে ভর্তি হতে চায় না।’

জরাজীর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান কচুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এএইচ এম শাহরিয়ার রসু বলেন, ‘আমাদের এখানে যেসব বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে, তার একটি তালিকা এরইমধ্যে জেলা অফিসে পাঠানো হয়েছে।’

মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার একেএম শহীদুল হক মোল্লা বলেন, ‘অধিদফতর ও জেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা মতে আমরা এরইমধ্যে পুরো উপজেলা ঘুরে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পেয়েছি। সেগুলোর তালিকা তৈরি করে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অন্য কোনও উপায় না থাকায় এই বিদ্যালয়গুলোতেই এখন পাঠদান চলছে।’ প্রতিটি বিদ্যালয়েই অন্তত ১০০ থেকে পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে বলে তিনি জানান।

চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগম বলেন, ‘জরাজীর্ণ ভবনের গত বছরের তালিকায় থাকা কয়েকটি স্কুলে সংস্কার কাজ চলছে। কয়েকটির ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। এখনও কিছু ভবন জরাজীর্ণ রয়ে গেছে।’

পরিত্যক্ত ভবনে চলছে ক্লাস চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বরাবর জরাজীর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা পাঠানোর পর বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এখন সেগুলোর সংস্কারের কাজ চলছে। সর্বশেষ গত জুলাই মাসে নতুন করে ২৭৪টি জরাজীর্ণ-ঝূঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনের তালিকা অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ের ভবন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো আমরা দ্রুত অপসারণের চেষ্টা করছি এবং সেগুলোতে ক্লাস বন্ধ রেখে বিকল্প পাঠদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক জায়গায়ই আমরা চেষ্টা করেছি শিশুদের জীবনের নিরাপত্তা এবং শিক্ষা নিশ্চিত করতে। মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বিগত অর্থবছরে আমাদের তালিকা অনুযায়ী বরাদ্দ দিয়েছেন। আশা করি, এবারও তালিকা অনুযায়ী স্কুলগুলো বরাদ্দ পাবে এবং ঝূঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনগুলো দ্রুত মেরামত করে শিক্ষার সুষ্ঠু এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে।’

 

 

 

 

/এপিএইচ
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড
ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী