কুমিল্লা বিআরটিসি ডিপোতে পরিত্যক্ত অবস্থায় অনেকগুলো বাস পড়ে আছে। অযত্নে পড়ে থাকা ভাঙা সিট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একেকটি বাসের কঙ্কাল। এসব বাসের ইঞ্জিন, চেসিস ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ কিছুই অবশিষ্ট নেই। অভিযোগ আছে, ডিপোর একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এসব বাসের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ লোপাট করা হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কুমিল্লা বিআরটিসি কার্যালয়ের পরিত্যক্ত স্থানে পড়ে আছে ৩০টির বেশি বাস। কর্মকর্তাদের রদবদল হলেও এই বাসগুলো অকশনের মাধ্যমে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রায় অর্ধেকের বেশি বাস ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তাদের এই অবহেলায় সরকার কোটি কোটির টাকার সম্পদ হারাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বাসগুলোর টায়ার, চাকা, সিট ও ইঞ্জিনসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করা হয়েছে। বেশির ভাগ বাসের ইঞ্জিন, চেসিসসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে শুধু বডি ফেলে রাখা হয়েছে।
ডিপোতে সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব এবং দক্ষিণ পাশে সারিবদ্ধভাবে ছোট-বড় অনেকগুলো বাস পড়ে আছে। চারপাশে ময়লা-আবর্জনা, কোনও কোনও বাসের অংশবিশেষ পানিতে ডুবে আছে। পূর্ব পাশের পরিত্যক্ত স্থানে থাকা বাসগুলোর চারদিকে জঙ্গল বাসা বেঁধেছে। বাসের বডিতে জন্মেছে পরগাছা।
কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন সড়কের পাশেই অবস্থিত বিআরটিসি ভবন। এই সড়কের দু’পাশে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকান, গ্যারেজ। এছাড়া, নতুন ও পুরনো পার্টস বেচাকেনারও অনেক দোকান আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন সড়কের এসব দোকান বাসের ইঞ্জিন বা যন্ত্রাংশ বিক্রির একটি আদর্শ স্থান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিআরটিসির এসি ও নন-এসি প্রায় অর্ধশতাধিক বাস রয়েছে। কিছুদিন আগে সরকার বিআরটিসিকে কুমিল্লায় যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে ১৪টি এসি বাস দিয়েছে। বাসগুলোর উদ্বোধন করেছেন কুমিল্লা সদর ৬-আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
বাকি নন-এসি বাসগুলো বর্তমানে লক্কর-ঝক্কর অবস্থা। ফিটনেস ও রুট পারমিটসহ কাগজপত্র নেই এসব বাসের। ফলে প্রতিনিয়ত বাসগুলো দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সংকট থাকায় তারা বিআরটিসির এই বাসগুলো ভাড়ায় নিয়ে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনা করে আসছে।
বিআরটিসি ডিপোতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মচারী জানান, কুমিল্লা বিআরটিসি ডিপোতে বাসের ইঞ্জিনসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি লুটপাট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলে গাড়ি থেকে ইঞ্জিন এবং যন্ত্রাংশগুলো খুলে ফেলা হয়।পরে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করা হয়। তারা অভিযোগ করেন, যে কয়েকটি বাস এখনও চলাচল করছে সেগুলো থেকে প্রতিদিনকার আয়ের অর্ধেকও জমা হয় না।
কুমিল্লা স্টেশন রোডের গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতা এবং মোটর মেকানিক হানিফ ও ইউসুফ জানান, বিআরটিসি গাড়িগুলো নষ্ট হলে মেরামতের জন্য বাস থেকে ইঞ্জিন নামানো হয়। এ অবস্থায় যেসব ইঞ্জিন একেবারে অচল হয়ে যায়,সেগুলো আর বাসে ওঠানো হয় না। এই অচল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশই বিভিন্ন সময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। একই কথা বলেন, বিআরটিসির কয়েকজন মেকানিকও।
পরিত্যক্ত বাসের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসি কুমিল্লা বাস ডিপোর ম্যানেজার কামরুজ্জামান প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। পরবর্তীতে তিনি জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে কথা বলা যাবে না। কথা না বলার জন্য চেয়ারম্যানের নির্দেশ রয়েছে।।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহনকরপোরেশনের (বিআরটিসি) ডিজিএম অপারেশনস (ঢাকা) ঢালি বাবু এ বিষয়ে বলেন,‘বিআরটিসি স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় জেলার বাস ডিপোর ম্যানেজাররা গণমাধ্যমের বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। হয়তো সেজন্য তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা বাস,ইঞ্জিন এবং যন্ত্রাংশ লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে বিআরটিসির জেনারেল ম্যানেজার মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘দেশের যেসব জেলার ডিপোতে নষ্ট ও পরিত্যক্ত অবস্থায় বাস পড়ে আছে, সেগুলো অকশনের মাধ্যমে বেচার জন্য গণমাধ্যমে আমরা বিজ্ঞাপন দিয়েছি।’ তিনি বলেন,‘অভিযোগগুলো সরেজমিনে গিয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’