X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অনুমোদনের ৮ বছরেও হয়নি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
২১ মার্চ ২০২৪, ১২:৫২আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪, ১২:৫২

দুই চোখে অযত্নে লাগানো কাজল। শরীর ও হাত-পা ছড়িয়ে হুইলচেয়ারে বসে আছে। মুখে অমলিন ও অকৃত্রিম হাসি। তবে হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে কষ্ট। ১১ বছর বয়সে পৃথিবীর অন্য শিশুদের মতো হাঁটাচলা করতে না পারার দুঃখ-বেদনায় ভারাক্রান্ত প্রতিবন্ধী শিশু নুরি আক্তার (১১)।

নুরির বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের রাজমাল্লি গ্রামে। বাবার নাম নুর ইসলাম। জন্ম থেকে শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নুরির অর্থাভাবে চিকিৎসা হয়নি। ১১ বছর বয়সেও শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। তাকে ফেলে রেখে সংসার ত্যাগ করেছেন মা। সেই থেকে নুরির অবলম্বন বাবা ও একটি হুইলচেয়ার। খাওয়া ও গোসলসহ যাবতীয় পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করেন বাবা। মেয়েকে রেখে কোথাও যেতে পারেন না। হুইলচেয়ারে করে মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন বের হন মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য নিতে। সংগ্রহ করা অর্থের টানাপোড়েনে চলে নুরির খরচসহ সংসারের ব্যয়।

এমনটা জানিয়ে নুর ইসলাম বলেন, ‘আমার সাধ্য নেই চিকিৎসা করানোর। মেয়েকে রেখে রোজগারের জন্য বের হতে পারি না। তাকে নিয়েই সাহায্য তুলতে বের হই। মানুষ দয়া করে যে টাকা দেয়, সেটা দিয়েই কোনও রকমে খরচ মেটাই। কিন্তু কুলায় উঠতে পারছি না।’

নুরির মতো এমন প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে কুড়িগ্রামের হাজারো পরিবারে। সামর্থ্যবানরা চিকিৎসা করাতে পারলেও বেশিরভাগ পরিবারের অবস্থা নুরির বাবার মতো। সামর্থ্যের অভাবে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার। এমন সব প্রতিবন্ধীর চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের স্বার্থে ২০১৬ সালে কুড়িগ্রামে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল কাম-পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ আট বছর পার হতে চললেও ভূমি বন্দোবস্তের ‘জটিলতায়’ ভেস্তে যেতে বসেছে প্রকল্পটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর প্রকল্পটি শুরু করতে না পারলে এটি আর বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম হাসপাতাল-১

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিবন্ধীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির জন্য ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি চাহিদাপত্র পাঠায়। সে বছরই জমির চাহিদা জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় ভূমি বন্দোবস্তের বিষয়টি ঝুলে যায়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ও জেলা শিশু পরিবার ভবনের পূর্ব দিকে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। ২০১৭ সালে প্রথম পর্যায়ে ৯ দশমিক ৩২৭২ একর জমি নির্ধারণ করে পত্র দেয় জেলা প্রশাসন। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তারা। প্রদানযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে প্রায় ৫ একর নির্ধারণ করে ২০১৮ ও ২০২০ সালে আবারও ভূমি মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয় প্রশাসন। জমির দামও নির্ধারণ করা হয় আকাশচুম্বী। নির্ধারিত ভূমির বিষয়ে মতামত চেয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে পত্র দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি নিয়ে প্রতিবন্ধকতার চিঠি চালাচালিতে সেই থেকে আটকে আছে বিশেষায়িত হাসপাতাল কাম-পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্মাণকাজ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার বিশেষায়িত হাসপাতালের বিষয়টি আবারও উত্থাপন করলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর আবারও পত্র দেন। ওই পত্রে তিনি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৬৪৪ একর অখণ্ড অকৃষি জমি বন্দোবস্ত প্রদানের সম্মতি জানিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। ১৩ ফেব্রুয়ারি পাঠানো ওই পত্রের বিষয়ে এখনও কোনও উত্তর পাঠায়নি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন থেকে প্রস্তাবিত জমির প্রতীকী মূল্য না ধরে বাজারমূল্যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি একটি সেবামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে বাজার দরে জমির দাম নির্ধারণ করায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগ বলছে, চলতি বছর চালু করা না গেলে প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে পারে। ফলে কুড়িগ্রামের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী একটি অনন্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে প্রকল্পটি আর নাও হতে পারে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হান বলেন, ‘আমরা এখনও জমি বুঝে পাইনি। ফলে পরবর্তী কার্যক্রমে যেতে পারছি না। এ বছর শুরু করা না গেলে প্রকল্পটি হয়তো আর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ৫ দশমিক ৩৬৪৪ একর জমি বন্দোবস্তের সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন।’

কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার বলেন, ‘প্রস্তাবিত জমির মূল্য নিয়ে জটিলতা রয়েছে। বাজারমূল্য না ধরে জমির প্রতীকী মূল্য নির্ধারণের জন্য আবেদন করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবো। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’

জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে ৭৭  হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল কাম-পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি হলে জেলার অসহায় এই জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে।

/এএম/
সম্পর্কিত
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব
নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন প্রকল্প গৃহীত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
দায়িত্ব পালনকালে কতটা সুরক্ষা পাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস আজদায়িত্ব পালনকালে কতটা সুরক্ষা পাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা
শাহীনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের সিরিজ ভাগাভাগি
শাহীনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের সিরিজ ভাগাভাগি
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু