X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

টক-ঝাল-মিষ্টি চা, দিনে বিক্রি ৩০ হাজার টাকা

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০১আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০১

হরেক রকম চা তৈরি হয় দেশের বিভিন্ন দোকানে। কিন্তু দিনাজপুরে পাওয়া যায় ভিন্ন স্বাদের তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চা। লেবু, চায়ের লিকার, কাঁচা মরিচ, তেঁতুল, চিনি ও বিশেষ এক ধরনের মশলা দিয়ে এসব চা তৈরি হয়; যা টক, ঝাল ও মিষ্টি। দূর-দূরান্তের মানুষজনও ভিন্ন স্বাদের এই চা পান করতে আসেন। তৃপ্তি সহকারে পান করে প্রশংসা করতে দ্বিধা করেন না কেউ।

বাহারি পদের এই চা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দিনাজপুরের শাহ আলম (৫৫)। তার দোকানে সাত পদের চা পাওয়া যায়। প্রতিদিন তিন হাজার কাপ বিক্রি করেন। হিসাবে দিনে ৩০-৩৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। লেখাপড়া বেশি দূর না করলেও দিনরাত পরিশ্রম করে নিজেই গড়েছেন নিজের ভাগ্য। পৌরসভার পুলহাট এলাকায় রাস্তার পাশে দোকানের অবস্থান। ৩০ বছর ধরে চা বিক্রি করছেন। বাড়ি একই এলাকায়। এর মধ্যে গত ৯ বছর ধরে তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চা বিক্রি করছেন। দোকান করেই এক ছেলে ও এক মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। এখন তাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন এই দোকানি।

সাত পদের চা বিক্রি

তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চা ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় মালাই চা, মধু চা, দুধ চা, লাল চা। সারাদিন চা-প্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকে। সন্ধ্যার পর দ্বিগুণ বেচাকেনা হয়। সবমিলিয়ে দিনে বিক্রি হয় অন্তত তিন হাজার কাপ। এর মধ্যে তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চায়ের কাপের মূল্য ১৫ টাকা। মালাই চা ও মধু চা ২০ টাকা আর লাল চা পাঁচ টাকা। প্রতি কাপের মূল্য ১০ টাকা করে ধরলেও দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকা।

কাঁচা মরিচের চা জনপ্রিয়

তবে দোকানটি কাঁচা মরিচের চায়ের জন্য বেশ জনপ্রিয়। তৈরিতেও রয়েছে ভিন্নতা। প্রথমে চিনি দিয়ে পরে একটি লেবুর অর্ধেক রস দেওয়া হয়। এরপর চায়ের লিকার, গরম পানি ও একটি কাঁচা মরিচ ও বিশেষ মশলা দেওয়া হয়। যা দোকানি নিজেই তৈরি করেন। এরপর চামচ দিয়ে নেড়ে পরিবেশন করা হয়। তেঁতুল চাও একইভাবে তৈরি হয়। চিনি ও তেঁতুলের সঙ্গে দেওয়া হয় লিকার। এরপর গরম পানি ও বিশেষ মশলা দিয়ে পরিবেশন করা হয়। লেবু চায়ে থাকে লেবুর রস, গরম পানি ও চিনি। সব চায়ে দেওয়া হয় আদার কুচি।

দিনে বিক্রি হয় অন্তত তিন হাজার কাপ

চা-প্রেমীরা বলছেন অন্যরকম স্বাদ

এখানের চায়ের স্বাদ অন্যরকম উল্লেখ করে জেলা সদরের মাসিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেদিনই আমি শহরে যাই, ফেরার পথে এখানে কাঁচা মরিচের চা পান করি। খুবই ভালো লাগে। টক, ঝাল, মিষ্টি; অন্যরকম স্বাদ। বন্ধুবান্ধবদেরও পান করাই।’ 

শহরের নয়নপুর এলাকার ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। সপ্তাহে একদিন পুলহাট এলাকায় আসতে হয়। এখানে এলেই মরিচ চা অথবা তেঁতুল চা পান করি। বেশ ভালো লাগে। মাঝেমধ্যে বাড়িতে এমন চা তৈরির চেষ্টা করি, কিন্তু হয় না। তাই এখানেই আসি।’

ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানিতে চাকরি করা সুমন রায় বলেন, ‘চাকরির সুবাদে অনেক জেলায় গিয়েছি। কিন্তু এ ধরনের চা কোথাও পাইনি। অন্যরকম এক স্বাদ। পুরোপুরি ব্যতিক্রম। এর নাকি উপকারিতাও রয়েছে। কিন্তু সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকলেও স্বাদ ভিন্ন হওয়ায় প্রায়ই এখানে এসে চা পান করি।’ 

চা পানে একই অনুভূতির কথা জানালেন বড়বন্দর এলাকার সোহানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে সবসময় এখানে এসে চা পান করি। ভালো লাগে স্বাদটা। যখনই চা পানের ইচ্ছে হয়, এখানে চলে আসি।’

তরুণ উদ্যোক্তা ‘এমবিএফ হানির’ স্বত্বাধিকারী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘এই দোকানের চায়ের অন্যরকম স্বাদ। আমার খামারের মধু দিই এখানে। সেই মধু দিয়েই মধু চা তৈরি হয়। বিশেষ করে শীতের সময়ে মধু চায়ের চাহিদা বেশি থাকে। সঙ্গে লেবু চা, মরিচ চা, তেঁতুল চা তো আছেই। এখানকার চায়ের মতো স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আমার বাড়ি এই এলাকাতেই। বন্ধুবান্ধব নিয়ে সবসময় এখানেই চা পান করি।’

লেবু, চায়ের লিকার, কাঁচা মরিচ, তেঁতুল, চিনি ও বিশেষ এক ধরনের মশলা দিয়ে এসব চা তৈরি হয়

ছেলেমেয়ে চাকরি পেলে দূর হয়ে যাবে দুঃখ

সংসারে অভাব ও টানাপোড়েনের কারণে লেখাপড়া বেশি দূর করতে পারিনি জানিয়ে শাহ আলম বলেন, ‘সংসারে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে। ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছি। ছেলে আর্কিটেকচার প্রোগ্রামে পড়াশোনা করেছে, মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের বিয়ে দিয়েছি। মেয়ে যদি সরকারি কর্মকর্তা হয় আর ছেলে যদি ভালো পর্যায়ে যায়; তবেই আমার দিনরাত পরিশ্রম সার্থক হবে।’

৩০ বছর ধরে চা বিক্রি করছি জানিয়ে শাহ আলম আরও বলেন, ‘তবে তেঁতুল চা, মরিচ চা ও লেবু চা বিক্রি করছি ৯ বছর ধরে। একবার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে মরিচ চা খেয়েছি। এরপর রাজশাহীতে গিয়েও এমন চা তৈরি দেখেছি। তারপর নিজেই তৈরি করেছি এবং সফল হয়েছি। প্রতিদিন তিন হাজার কাপ বিক্রি হয়। তবে চা তৈরিতে এখন অনেক খরচ পড়ে। ১৫ টাকা কাপ বিক্রি করি। একটা লেবুর দাম চার-ছয় টাকা। সঙ্গে মশলা। লাভ তেমন একটা হয় না। তবু বিক্রি বেশি হওয়ায় কিছুটা লাভ হয়। সবমিলিয়ে পরিশ্রম করে ভালোভাবে জীবনযাপনের চেষ্টা করছি।’

/এএম/ 
সম্পর্কিত
সুঁই-সুতোয় ‘স্বপ্ন বুনছেন’ ভোলার আমেনা খানম
জিপি এক্সিলারেটর বুটক্যাম্প শুরু
রিসার্চে ‘ইয়াবা সিনড্রোম’ আর অনলাইন-নীলক্ষেতের প্রভাব
সর্বশেষ খবর
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়