‘আসুন আমাদের স্বপ্নকে ধরে রাখি। কারণ আমরা একসঙ্গে মিলে পৃথিবী বদলে দিতে পারি। যারা সাহসী, কর্মঠ এবং কখনো হাল ছেড়ে না দেয় না, তাদের পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব’– একদশক আগে কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি প্রাইজ জিতে বলেছিলেন কানাডিয়ান পরিচালক-অভিনেতা হাভিয়ার দোলান। এবার উৎসবটির ৭৭তম আসরে আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগের প্রধান বিচারক থাকবেন তিনি। কানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এমনটাই জানানো হয়েছে।
আঁ সাঁর্তে রিগা কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনের একটি বিভাগ। ২০২১ সালে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ও আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এতে নির্বাচিত হয়। কানের অফিসিয়াল সিলেকশনের ইতিহাসে জায়গা পাওয়া বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র এটাই।
আঁ সাঁর্তে রিগা ফরাসি তিনটি শব্দ। এর বাংলা অর্থ অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে। এতে সাধারণত এমন কিছু চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়, যেগুলো একটু ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে তৈরি করা এবং সুনির্দিষ্ট বার্তা রয়েছে।
আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগের প্রধান বিচারক হওয়ার অনুভূতি জানিয়ে এক বিবৃতিতে ৩৪ বছর বয়সী হাভিয়ার দোলান বলেন, ‘আঁ সাঁর্তে রিগার জুরি প্রেসিডেন্ট হিসেবে কানে ফেরার জন্য উৎসব কর্তৃপক্ষের দেওয়া সম্মান পেয়ে আমি অভিভূত। চলচ্চিত্র নির্মাণের চেয়ে অন্য নির্মাতাদের মেধা ও কর্মদক্ষতা খুঁজে দেখা আমার ব্যক্তিগত ও পেশাদার পথচলায় বরাবরই অপরিহার্য মনে করেছি। আঁ সাঁর্তে রিগার জুরি সদস্যদের সঙ্গে শৈল্পিক সিনেমার প্রতি নিজেকে নিবেদিত করার সুযোগ হবে।’
নিজের লেখা ছোটগল্প অবলম্বনে হাভিয়ার দোলান ১৯ বছর বয়সে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আই কিল্ড মাই মাদার’-এর কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন এবং পরিচালনা, প্রযোজনা ও অভিনয় করেছেন। অভিষেকেই মাস্টারস্ট্রোক দেখিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের সমান্তরাল শাখা ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে তিনটি পুরস্কার জেতে এই ছবি। ৮২তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে (অস্কার) কানাডা থেকে মনোনীত হয় এটি।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে হাভিয়ার দোলানের সম্পর্কটা বেশ নিবিড়। ২০১০ সালে তার দ্বিতীয় ছবি ‘হার্টবিটস’ আঁ সাঁর্তে রিগায় নির্বাচিত হয়। এর মাধ্যমে মাত্র ২১ বছর বয়সে পরিচালনা, শৈল্পিক নির্দেশনা, পোশাক ও সম্পাদনাসহ সবদিকে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। ২০১২ সালে তার তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘লরেন্স অ্যানিওয়েজ’ আঁ সাঁর্তে রিগায় নির্বাচিত হয়। এতে অনবদ্য নৈপুণ্যের সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হন কানাডিয়ান তারকা সুজান ক্লেমোঁ।
হাভিয়ার দোলানের চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘টম অন দ্য ফার্ম’ ২০১৩ সালে ৭০তম ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মূল প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয় এবং ফিপরেসি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। একই বছর টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয় এটি।
২০১৪ সালে ‘মমি’র মাধ্যমে প্রথমবার কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নেন হাভিয়ার দোলান। এতে তুলে ধরা হয় ছেলেকে লালন-পালন করতে গিয়ে একজন একা মায়ের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। প্রয়াত ফরাসি-সুইস কিংবদন্তি জ্যঁ-লুক গদারের ‘গুডবাই টু ল্যাঙ্গুয়েজ’ সিনেমার সঙ্গে যৌথভাবে জুরি প্রাইজ জেতে ‘মমি’। তখন গদারের বয়স ৮৪ বছর আর দোলানের বয়স ২৫ বছর।
৬৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে বিচারকের আসনে ছিলেন হাভিয়ার দোলান। সেই আসরে কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়ের (জোয়েল ও এথান) নেতৃত্বে কাজ করেন তিনি।
২০১৬ সালে হাভিয়ার দোলান পরিচালিত “ইট’স অনলি দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড” কান চলচ্চিত্র উৎসবে গ্রাঁ প্রিঁ এবং সমালোচকদের বিচারে ইকুমেনিক্যাল জুরি প্রাইজ জিতেছে। কানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রাঁ প্রিঁ জয়ী দ্বিতীয় কানাডিয়ান পরিচালক তিনি। ফরাসি নাট্যকার-অভিনেতা জ্যঁ-লুক লাগার্সের নাটক অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ছবিটি।
২০১৮ সালে টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে হাভিয়ার দোলান পরিচালিত ‘দ্য ডেথ অ্যান্ড লাইফ অব জন এফ. ডোনাভ্যান’ সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। এটি ইংরেজি ভাষায় তার প্রথম কাজ। ২০১৯ সালে ৭২তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় স্থান পায় হাভিয়ার দোলানের ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার সিনেমা ‘ম্যাথায়াস অ্যান্ড ম্যাক্সিম’। এতে ছয় বছর পর ফের নিজের পরিচালনায় অভিনয় করেন তিনি।
২০২২ সালে ছোট পর্দার জন্য হাভিয়ার দোলান পরিচালনা করেছেন ‘দ্য নাইট লগ্যান ওয়োক আপ’। কানাডায় ভিডিওট্রন এবং ফ্রান্সে ক্যানাল প্লাসে এটি দেখানো হয়।
৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা শাখায় প্রধান বিচারক থাকবেন বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো ‘বার্বি’ ছবির পরিচালক গ্রেটা গারউইগ। এবারের অফিসিয়াল সিলেকশন ঘোষণা করা হবে আগামী ১১ এপ্রিল। চিরাচরিতভাবে মে মাসেই হবে উৎসবটি। আগামী ১৪ মে এই আয়োজনের পর্দা উঠবে। দক্ষিণ ফ্রান্সে ভূমধ্যসাগরের তীরে ১১ দিনের মহাযজ্ঞ চলবে ২৫ মে পর্যন্ত।