মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরশায়িত হলেন সংগীতশিল্পী-মুক্তিযোদ্ধা লাকী আখন্দ। বেলা সোয়া তিনটার দিকে তৃতীয় জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে সকাল ১০টায় লাকী আখন্দের জন্মস্থান পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় প্রথম জানাজা শেষে বেলা ১১টার দিকে মরদেহ আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।
লাকী আখন্দের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোমবার (২৪ এপ্রিল) বাদ জোহর আরমানিটোলার বাসায় মরহুমের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার, ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টার দিকে এই কিংবদন্তি না ফেরার দেশে চলে যান।
প্রসঙ্গত, গুণী এই সংগীতজ্ঞ অনেক দিন ধরেই মরণব্যাধী ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ দেশে ফেরেন তিনি। সেখানে কেমোথেরাপি নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছিল তার। একই বছরের জুনে আবারও থেরাপির জন্য ব্যাংকক যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পরে আর তার সেখানে যাওয়া হয়ে উঠেনি।
অসুস্থতার প্রথম থেকেই লাকী আখন্দ ও তার পরিবার কোনও রকম আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণের বিষয়ে বেশ কঠোর ছিলেন। দেশের শীর্ষ শিল্পীদের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে চাইলেও বিনয়ের সঙ্গে লাকী আখন্দ সেটি গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। অভিমানী এই মানুষটি অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় নিজের চিকিৎসা চালাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তবে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এই সংগীতকারের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় ভালোবাসা হিসেবে সেটি তিনি গ্রহণ করেছেন স্বাচ্ছন্দে।
লাকী আখন্দের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে— ‘এই নীল মনিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘মামনিয়া, ‘বিতৃঞ্চা জীবনে আমার’, ‘কি করে বললে তুমি’ ‘লিখতে পারি না কোনও গান, ‘ভালোবেসে চলে যেও না’ প্রভৃতি।
লাকী আখন্দ, আধুনিক বাংলা সংগীতের খ্যাতিমান শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। তাঁর জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন। ৫ বছর বয়সেই তিনি তার বাবার কাছ থেকে সংগীত বিষয়ে হাতেখড়ি নেন। শৈশব কেটেছে ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে এইচএমভি পাকিস্তানে সুরকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। সুরকার হিসেবে আরো কাজ করেছেন এইচএমভি ভারত এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও।
স্বাধীনতার পর পর নতুন উদ্যমে বাংলা গান নিয়ে কাজ শুরু করেন। তার নিজের সুর করা গানের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। শিল্পীর সহোদর ক্ষণজন্মা হ্যাপী আখন্দের সাথে ছিলো তার আত্মার সম্পর্ক। ভাইয়ের মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। দুজনের যৌথ প্রয়াসে সূচিত হয়েছিলো বাংলা গানের এক নতুন ধারা।
ছবি: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ছবিগুলো তুলেছেন সাজ্জাদ হোসেন
/এমএম/
* সংগীত ব্যক্তিত্ব লাকী আখন্দ আর নেই
* যাই যাই বলে চাচা আজ সত্যি সত্যি নাই!
* রাতে বারডেম হিমঘরে, প্রথম জানাজা সকাল ১০টায়
* শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন
* বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাকী আখন্দকে শেষ শ্রদ্ধা