মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে দেখি একজোড়া চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! বুকটা ধক করে ওঠে আমার। চোখ দুটোর মালিকের মুখখানা অবিকল হুমায়ূন আহমেদের মতো দেখতে।
বলছিলাম আমার ছোট পুত্র নিনিত হুমায়ূন কথা। তাকে জিজ্ঞেস করলাম- ‘ঘুমাচ্ছ না কেন মা?’
‘কালকে তো আমার স্কুল নাই, সেই জন্য ঘুম আসছে না।’ -সোজা উত্তর তার।
‘আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছো কেন বাবা?’
‘দেখছি তুমি ক্যামনে ঘুমাও। আর তোমার যখন ঘুম ভাঙবে তখন আমরা মুভি দেখবো তাই ওয়েট করছি।’
প্রায় দশ বছর পেছনে চলে গেলাম আমি। বড় পুত্র নিষাদের আগমনের অপেক্ষায় তখন ক্লান্ত আমি। সময়ে অসময়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। কোনও কোনও সন্ধ্যায় ঘুম ভেঙে একইভাবে তাকিয়ে থাকা হুমায়ূনের দু’টো চোখ দেখতাম। মজার ব্যাপার হলো- এভাবে তাকিয়ে থাকা প্রসঙ্গে পিতার কথাগুলোও অবিকল পুত্রের মতোই ছিল!
সন্তান পিতার ছায়া বহন করবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হুমায়ূনের ঘ্যাংগা বাবা নিনিত (এই নামেই হুমায়ূন তাকে ডাকতো) যেন তার বাবার প্রতিচ্ছবি। কী দর্শনে, কী রসিকতায়। প্রাত্যহিক সাধারণ কথায় কী করে যে সামান্য হাস্যরস ঢুকিয়ে দেয়া যায়, তা যেন বাবার কাছ থেকে ঠিক শিখে নিয়েছে সে। অথচ বাবার স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো নিনিত তার বড় ভাই নিষাদের কাছে অবাক হয়ে শোনে বাবার মজার সব গল্প।
তারপর খিলখিল করে হাসতে হাসতে এসে আমাকে বলে- ‘মা জানো? আমি না ছোটবেলায় কোলে ওঠার জন্য বাবার পা ধরে ঝুলতাম। বাবার তো তখন ক্যান্সার ছিল তাই বেশিক্ষণ কোলে নিয়ে রাখতে পারতো না বাবা। আর আমি তো তখন বেবি ছিলাম, কিচ্ছু বুঝতাম না। খালি বাবার কোলে ওঠার জন্য কানতাম। আমি যদি তখন বড় থাকতাম তাহলে আমিই তো বাবাকে কোলে নিতে পারতাম।’
এই কথা শুনে ‘পিতার স্মৃতির একমাত্র ধারক’ বড় পুত্র নিষাদ হুমায়ূন মিটিমিটি হাসে।
আর তখন আমার অনুভূতি যে কেমন হয় ঠিক বুঝতে পারি না। তবে চোখের কোণায় কেমন কেমন যেন করে। মনে বাজে- আমারে তুমি অশেষ করেছ, এমনি লীলা তবু ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ জীবন নব নব...।
লেখক : নির্মাতা-অভিনেত্রী
/এম/