গার দো কান নামের রেলস্টেশনে নেমে বাইরে বেরিয়ে সোজা হেঁটে গেলে কান উৎসবের মূলকেন্দ্র পালে দো ফেস্টিভাল। সিনেমার এই বৈশ্বিক আসরের সমাপনী হয়ে গেছে ২৮ মে, সুতরাং তাড়া নেই। তাই সোমবার (২৯ মে) সেন্ট রাফায়েল থেকে ট্রেনে চড়ে এসে সোজা না হেঁটে বাঁকা পথে গেলাম! মানে হাতের ডান দিকে। সেদিকে মিনিট তিনেক হাঁটলে ওঠা যায় মূল সড়কে। এখানে এসেছি হলিউডের কিংবদন্তি নন্দিনী মেরিলিন মনরোকে দেখবো বলে! তার সম্মোহনী চাহনি যে এড়ানো দায়!
কান রিভিয়েরা হোটেলের দেয়ালজুড়ে প্রয়াত মার্কিন অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর বিশাল ছবিটা সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে পথচারীদের। দক্ষিণ ফরাসি উপকূলের শহর কানে ১৫ দিন ধরে এমন অনেক তারকার বড় আকারের ছবি দেখেছি এখানে-সেখানে। সবই কান উৎসবের লালগালিচায় তোলা পোট্রেট, নয়তো বিশেষ কোনও মুহূর্তে ক্যামেরাবন্দি করা।
দক্ষিণ ফরাসি উপকূলের শহরটির গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে এখনও শোভা পাচ্ছে কান উৎসবের ৭০তম আসরের পোস্টার। বিভিন্ন সড়কের ল্যাম্পপোস্টেও দেখছি ইতালিয়ান অভিনেত্রী ক্লডিয়া কার্ডিনালের প্রাণোচ্ছল মুখ! তিনিই স্থান পেয়েছেন এবারের আয়োজনের অফিসিয়াল পোস্টারে।
রেলস্টেশন ঘেঁষেই কানের অন্যতম বড় বাস টার্মিনাল। এখানেও যাত্রী ছাউনিতে আছে ইতিপূর্বে উৎসবে আসা তারকাদের বড়সড় ছবি। এগুলো কতো সালে তোলা উল্লেখ আছে সেটাও।
সাগরপাড়ের শহরটির বাসিন্দা ও পর্যটকদের যাতায়াতের অন্যতম পরিবহন হলো বাস। বেড়ানোর জন্য রয়েছে ট্রামের মতো ট্যুরিস্ট বাসও। সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণের জন্য আছে ছাদখোলা পামবাস। চলচ্চিত্রের এই তীর্থস্থানে এসে ফাঁকতালে ভ্রমণও করেন অনেকে।
শুধু সাগরই না, কানের এদিক-সেদিক আছে দর্শনীয় আরও অনেক কিছু। এর মধ্যে লর্ড ব্রুগহাম স্কয়ার অন্যতম। ১৮৬৮ সালের মে মাসে কানে মৃত্যুবরণ করেন গ্রেট ব্রিটেনের এই লর্ড চ্যান্সেলর। তার সম্মানে তৈরি করা হয়েছে একটি ভাস্কর্য, এর সামনে ছোট জলবাগান। অন্য পাশে একটি পানির ফোয়ারা।
এ দুটি স্থাপনার মতো কান শহরজুড়ে অসংখ্য কবুতরও উড়ে এসে হাজির হয় চোখের সামনে। লালগালিচায়ও দেখেছি একটি কবুতর। কান উৎসবের মূলকেন্দ্র পালে দো ফেস্টিভাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের সামনে অবশ্য এখন আর রেড কার্পেট নেই। যার ওপর দিয়েই ১৭ মে থেকে তারকারা হেঁটেছেন। লালগালিচা সরিয়ে ফেলা হয়েছে পাশের সাল দুবুসি প্রেক্ষাগৃহে ঢোকার স্থান থেকেও। আশপাশে হাতেগোনা কয়েকজন পথচারীকে চোখে পড়লো।
অথচ এখানটাতে গত একডজন দিন উৎসবকে ঘিরে মাতামাতি ছিল তুঙ্গে। রোদের তীব্রতার মধ্যেও হৈচৈ, কোলাহল আর উন্মাদনার বাতাস বয়ে গেছে প্রতিদিন। গত ১৭ মে থেকে উৎসবটিকে ঘিরে এই অঞ্চলটি ছিল জনারণ্য। ২৮ মে চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো মহাযজ্ঞটির পর্দা নামার পরদিনই জায়গাটির পরিবেশ হয়ে পড়েছে নিষ্প্রাণ।
নীরব ভিলেজ ইন্টারন্যাশনাল অংশও। এই পাশটাই ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা মানে ফরাসি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। কান উৎসবকে ঘিরে এখানে নোঙর ফেলেছে বিখ্যাত টিভি ও চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিবেশনা প্রতিষ্ঠানের প্রমোদতরীগুলো। সোমবারও দেখলাম। এসব ইয়ট দেখতে দেখতে গেলাম সাগরপাড়ে। এখানে অভ্যর্থনা জানালো দমকা হাওয়া! জায়গাটা বেশ নয়নাভিরাম, চোখ মেলে তাকালে মন জুড়িয়ে যায়।
সাগরপাড় দিয়ে হেঁটে মার্শে দ্যু ফিল্ম ভবন ও বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়নের অংশে এসে দেখি সব শুন্য! বলা যায় কাকপক্ষীও নেই! তবে সৈকতে সূর্যস্নান করে সাগরের জলে গা ভাসাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। তাদের মধ্যে তরুণীরাই বেশি। কিন্তু কারও চলাফেরায় যেন প্রাণ নেই! কান উৎসবই যে এখানকার মূল প্রাণ! তাই ভূমধ্যসাগরের ঘন নীল উপকূলে আঁছড়ে পড়া ঢেউয়ের গর্জন ছাড়া এখন চারপাশের সবকিছুই যেন নিস্তেজ।
চলবে...
ছবি: আহামেদ ফরিদ
/জেএইচ/এমএম/