রক কিংবদন্তি টম পেটি আর নেই। হুট করে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন শান্ত ও সাদাসিধে একজন গুণী শিল্পী। গত ২ অক্টোবর রাতে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল) ‘দ্য হার্টব্রেকারস’ ব্যান্ডের এই গায়ক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
পেটির ম্যানেজার টনি ডিমিট্রায়াডস জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মালিবুতে নিজের বাড়িতে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তড়িঘড়ি ইউসিএলএ সান্টা মনিকা হাসপাতালে নিয়ে কৃত্রিম শ্বাস (লাইফ সাপোর্ট) দিয়ে রাখা হয় তাকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
টম পেটির মৃত্যুর খবরে হলিউড ও বিশ্বসংগীতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নোবেলজয়ী কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী বব ডিলান। তারা একসময় ট্রাভেলিং উইলবুরিস ব্যান্ডে গান-বাজনা করেছেন। রোলিং স্টোন ওয়েবসাইটকে ডিলান বলেছেন, ‘এটা বেদনাদায়ক, ভেঙে পড়ার মতো খবর। টমের আপন ভুবনের কথা ভাবছি। আমার চোখে তিনি ছিলেন দারুণ পারফর্মার, পরিপূর্ণ আলো, একজন বন্ধু। তাকে কখনও ভুলবো না।’
শোক জানিয়েছেন ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংগীতশিল্পী স্যার পল ম্যাককার্টনি, রিঙ্গো স্টার, কিড রক, জন মেয়ার, কোল্ডপ্লে ব্যান্ড, ব্রায়ান উইলসন, গায়িকা ক্যারোল কিং, সিন্ডি লাউপার, সাহিত্যিক স্টিফেন কিং, অভিনেতা-গায়ক কিফার সাদারল্যান্ড, উপস্থাপক সেথ মেয়ারস।
এ প্রজন্মের সংগীতশিল্পীদের অনেকে টম পেটির গানের অনুপ্রাণিত। এ তালিকায় আছেন নোরা জোন্স, ব্রায়ান অ্যাডামস, রায়ান অ্যাডামস, গ্র্যামিজয়ী স্যাম স্মিথ, মার্ক রনসন, ফু ফাইটারস ব্যান্ড, কিংস অব লিওন ব্যান্ড, দ্য স্ট্রোকস ব্যান্ড, লেডি অ্যান্টিবেলাম ব্যান্ড, রেড হট চিলি পেপারস ব্যান্ড, কিংস অব কনভেনিয়েন্স ব্যান্ড, স্পাইনাল ট্যাপ ব্যান্ড।
গত ২২ সেপ্টেম্বর হলিউড বৌলে গানের দলটির প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পূর্তির সংগীত সফর শেষ হয়। নভেম্বরে নিউ ইয়র্কে দুই দিন সংগীত পরিবেশনের কথা ছিল তাদের। চার দশক ধরে সমর্থনের জন্য ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোরে টুইট করেন টম পেটি। তিনি লিখেছিলেন, ‘৪০ বছর ধরে আমাদের প্রতি সমর্থন ধরে রাখার জন্য প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের ছাড়া আমরা কেউই কিছু হতাম না!’
যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লোরিডার গেইন্সভিলেতে ১৯৫০ সালের ২০ অক্টোবর জন্মেছিলেন টম পেটি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, দারিদ্রের বেড়াজালে কেটেছে তার শৈশব। মদ্যপ বাবার দুর্ব্যবহার ছিল নিত্যসঙ্গী। তবে ১৯৬০ সালে চাচার (আলোকচিত্রী) মাধ্যমে এলভিস প্রিসলির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও হাত মেলানোর পর তার জীবন বদলে যায়। ওইদিনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, গানেই তার ভবিষ্যৎ! ১৯৬২ সালে তার হাতে প্রথম আসে গিটার। তার অনুপ্রেরণা ছিল বিটলস।
স্কুলে দ্য সানডাউনার্স ও দ্য এপিকস ব্যান্ডে গান-বাজনা করতেন। ১৭ বছর বয়সে গঠন করেন মাডক্রাচ নামের একটি ব্যান্ড। এটি ভেঙে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে কয়েকজন মিলে গড়ে তোলেন ‘টম পেটি অ্যান্ড দ্য হার্টব্রেকারস’ ব্যান্ড। ১৯৭৬ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের পরপরই খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
১৯৮৮ সালে একসময়ের বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলসের শিল্পী জর্জ হ্যারিসন, জেফ লিন ও রয় অর্বিসনের সঙ্গে মিলে বব ডিলান ও টম পেটি গড়েছিলেন সুপারগ্রুপ ট্রাভেলিং উইলবুরিস। ওই বছরেই তারা বের করেন ‘ট্রাভেলিং উইলবুরিস ভলিউম ওয়ান’। ১৯৮৮ সালেই অর্বিসনের মৃত্যুর পর বের হয় তাদের আরেকটি অ্যালবাম। ‘ট্রাভেলিং উইলবুরিস ভলিউম থ্রি’ বাজারে আসে ১৯৯০ সালে। তাদের বিখ্যাত গানের তালিকায় আছে ‘এন্ড অব দ্য লাইন’ ও “শি’জ মাই বেবি”।
একক ক্যারিয়ারেও সফল হয়েছিলেন টম পেটি। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় তার অ্যালবাম ‘ফুল মুন ফিভার’। ‘ফ্রি ফলিন’ এই অ্যালবামেরই গান। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত টম পেটির ‘ইন্টু দ্য গ্রেট ওয়াইড ওপেন’ অ্যালবামের টাইটেল গানের মিউজিক ভিডিওতে মডেল হন হলিউড তারকা জনি ডেপ, অভিনেত্রী ফেই ডুনাওয়ে।
টম পেটির জনপ্রিয় গানের তালিকায় আরও উল্লেখযোগ্য— ‘লার্নিং টু ফ্লাই’, ‘ডোন্ট কাম অ্যারাউন্ড হিয়ার নো মোর’ (১৯৮৫), ‘আমেরিকান গার্ল’ (১৯৭৬), ‘রিফিউজি’ (১৯৭৯), ‘আই ওন্ট ব্যাক ডাউন’ (১৯৮৯), ‘ডোন্ট ডু মি লাইক দ্যাট’ প্রভৃতি। ২০০২ সালে রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমে যুক্ত করা হয় তার নাম।
২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় টমের আত্মজীবনী ‘পেটি: দ্য বায়োগ্রাফি’। নব্বইয়ের দশকে তিনি যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন তা ফাঁস করেন এই বইয়ে। এর লেখক ওয়ারেন জানেস। বিয়েবিচ্ছেদের পর হতাশায়ও ভুগেছেন তিনি। এ পরিস্থিতি থেকে উতরে উঠতে ছয় বছর থেরাপি নিতে হয়েছে তাকে। ২০০২ সালে ডানা ইয়র্ককে বিয়ে করেন পেটি।