X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ অর্থনৈতিক নয়, নৈতিক: ন্যানসি

ওয়ালিউল বিশ্বাস
১০ জুন ২০১৮, ২০:১৬আপডেট : ১১ জুন ২০১৮, ১৩:০০

ন্যান্‌সি। ছবি: সাজ্জাদ/বাংলা ট্রিবিউন কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের ফেসবুক লাইভ, এরপর সংগীতশিল্পী শফিক তুহিনের মামলায় তার কারাগারে যাওয়া—পুরো বিষয়টি নিয়ে সংগীতাঙ্গন এখন উত্তাল।
দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিল বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া ৬১৭টি গান নিয়ে। যেটি সবার সামনে সবার আগে প্রথম তুলে আনেন সংগীতশিল্পী প্রীতম আহমেদ। তথ্য মতে, যেগুলো ‘অন বিহাফ’ সিগনেচার করে আসিফ আকবর একাই বিক্রি করেছেন বিভিন্ন মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানে। যে তালিকায় যেমন রয়েছে চলমান মামলার বাদী শফিক তুহিনের গান, তেমনি রয়েছে ন্যানসির গাওয়া ১২টি গানও।
কেন কারাগারে আসিফ—চলমান এমন বিতর্ক নিয়ে এবার বাংলা ট্রিবিউনের কাছে মুখ খুললেন ন্যানসি-
বাংলা ট্রিবিউন: ইদানীং কী সংসারেই বেশি সময় দিচ্ছেন? আগের মতো খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না আপনাকে!
ন্যানসি: না, গানের সঙ্গে তো আছিই। তবে সেভাবে হয়তো দেখা যাচ্ছে না। এটাও ঠিক, পারিবারিকভাবে খুবই ব্যস্ত সময় পার করেছি। এমন কি অন্যদের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগও করা হয় না।
বাংলা ট্রিবিউন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপনার পেজ থেকে আগে লাইভে পাওয়া যেত। এ কারণেই কী এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না!
ন্যানসি: হ্যাঁ, সেভাবে লাইভে যাওয়া হয় না এখন।
বাংলা ট্রিবিউন: ফেসবুকের একটি লাইভ নিয়েই নানা ঘটনা ঘটে গেল সম্প্রতি। কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের সে লাইভটি কি দেখেছিলেন? এর আগে তার সঙ্গে আপনার কিছুটা দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া গিয়েছিল।
ন্যানসি: না, আমি ফেসবুক লাইভটি সরাসরি দেখিনি। পরে একজন শিল্পী আমাকে উনার লাইভে আসার বিষয়টি জানায়। সেখানে শিল্পীদের নিয়ে তিনি (আসিফ) বেশ আপত্তিকর কথা বলেছেন। আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে নিয়েও বলবেন। তবে তিনি তা করেননি। সেটাই অবাক হলাম।
আর আমার সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব তেমন কিছু নয়। একটি অ্যালবামকে ঘিরে সেটার ঘটনা। এটা ছিল ‘ঝগড়ার গান’ অ্যালবাম।
ন্যান্‌সি। ছবি: সাজ্জাদ/বাংলা ট্রিবিউন বাংলা ট্রিবিউন: ২০১৩ সালে সম্ভবত প্রকাশিত হয়েছিল সেটা? আপনাদের ঝামেলা শুরু হয়েছিল কী নিয়ে?
ন্যানসি: এটি একটি দ্বৈত অ্যালবাম। সেখানে আমি ছাড়াও অনেকে কাজ করেছেন। গান লিখেছিলেন কবির বকুল, রাজীব আহমেদ। সুর করেছিলেন মনোয়ার হোসেন টুটুল। এখানে অন্যদের মতো আমিও ২৫ শতাংশ মালিক। সে হিসেবেই কাজটি করা। পরবর্তীতে কোনও টাকা পয়সা আমি পাইনি!
বাংলা ট্রিবিউন: তখন কি এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন!
ন্যানসি: যেহেতু আমি কোনও ইউনিটি নিয়ে চলি না, আমাদের তেমন কোনও বন্ধুবান্ধব নাই। তাই আগ বাড়িয়ে আর বিরোধে যাইনি। প্রথমে তিনি (আসিফ) ২৫ পার্সেন্ট মালিকানার কথা বলেছেন, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তার কথায় থাকেননি। শেষ পর্যন্ত আমি টাকা পয়সার কিছু দেখিনি।
পরবর্তী সময়ে তিনি যখন আবারও অ্যালবামের কথা বলেন, আমি তখন সোজা ‘না’ করে দিই। তখন তিনি আমাকে বললেন, তাহলে পার্সেন্টেজের হিসাব বাদ, এককালীন হলে কত নিবে?
তখনও বললাম যে আমি অ্যালবাম করবো না। কারণ, যে লোকটার প্রথম লেনদেনই ভালো নয়, তার সঙ্গে এককালীনই কী আর ‘দশকালীনই’ কী!
তখন আমার বিরুদ্ধে অনেক কথাই আসিফ ভাই বলেছেন। এরমধ্যে একজন আমাকে বললেন, আসিফ ভাই নাকি আমাকে গুলি করবেন! বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিতে চাইনি। তবে সবার কথায় এটা বুঝেছি, আসিফ ভাই আমার বিষয়ে ক্ষুব্ধ।
১২টা গান দিয়েছিলাম, সেখানে সবই ছিল দ্বৈত। তবে একটি একক গান শ্রোতারা শুনেছেন। কিন্তু সে গানটি যে অ্যালবামে রাখা হবে তা আমার জানা ছিল না। বা আমার অনুমতিও তিনি নেননি। আরও একটি বিষয়, পরবর্তী সময়ে জানতে পারি তিনি (আসিফ) ‘অন বিহাফ’ লিখে গানগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন! ‘অন বিহাফ’ দেওয়া সিগনেচার আর মালিকানা তো এক নয়। আমার পক্ষেও যদি কেউ সিগনেচার করে, তার মানে সে সব টাকা নিয়ে নিতে পারে না। আর এই ‘অন বিহাফের’ বিষয়টিও আমি জানতাম না। আমাকে অগোচরে রেখেই আসিফ ভাই এটা করেছেন। এটা অন্যায়।
ন্যান্‌সি ও তার দুই কন্যা রোদেলা ও নায়লা। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউন: বিষয়টি কি তখন কোনও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন?
ন্যানসি: বিষয়টি নিয়ে কেউ জানতে চায়নি। শুধু একটি পত্রিকা (আমাদের সময়) জানতে চায়, আমি তখন তাদের বিস্তারিত বলি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখেছি, পত্রিকাটি তাদের অনলাইন থেকে নিউজটি নামিয়ে রেখেছে। কেন এটা করল, আমি জানি না।
বাংলা ট্রিবিউন: নিউজটা কখন হয়েছিল?
ন্যানসি: গত মে মাসের ২৫-২৬ তারিখ হবে। এরপর আর কোথাও এটি পাওয়া যায়নি।
বাংলা ট্রিবিউন: এরপরই তো বোধহয় আসিফ আকবর ফেসবুক লাইভ করলেন...
ন্যানসি: ইন্ডাস্ট্রিতে যে এমন কথাকাটাকাটি হয় না, তা তো নয়। অনেকের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আমার অযাচিত তর্ক হয়েছে। কিন্তু এর জের ধরে আমি পাবলিকলি কাউকে গালি দিতে পারি না। ব্যক্তিগত জায়গা ও কাজের জায়গা একেবারেই আলাদা।
কে বড় কে ছোট এটা জনগণ ঠিক করবে। কিন্তু তিনি (আসিফ আকবর) তো কাউকে এভাবে ‘প্রতিহত কর’ বলে নির্দেশ দিতে পারেন না। কার কয়টা মা, বাবা, প্রেমিকা- এগুলো বলে কাউকে ছোট করতে পারেন না। এতে করে শুধু ওই শিল্পীকে নয়, মা-বাবাকেও ছোট করা হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি পুরো ভিডিওটি দেখেছেন!
ন্যানসি: হ্যাঁ। তার আক্রমণগুলো ছিল ব্যক্তিগত। কাজ সম্পর্কিত নয়। আমার আপত্তি এ জায়গাতেই। এখানে কিন্তু তার ভক্তদের মাঝে আসিফ ভাই একটা মেসেজ দিয়েছে, শিল্পীরা এমনই। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড বাজে। এবং তাদের এভাবেই গালিগালাজ করতে হয়। একজন শিল্পী হয়ে আমি কী এটা করতে পারি? শিল্পীর কথা বাদ দিলাম। এখানে ৩/৪ জন সাংবাদিককে যাচ্ছেতাইভাবে অপমান করা হলো। এমনকি সংবাদমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তি সম্পাদককেও বাজেভাবে বলা হলো। আচ্ছা, আমার প্রশ্ন হলো, আপনারা সাংবাদিকরা বা সংবাদপত্র যেখানে প্রতিবাদের প্রতীক, সেখানে নিজ সহকর্মীদের সঙ্গে এমন ব্যবহারেও চুপ থাকলেন! সংবাদপত্রে না হোক, ব্যক্তিগতভাবেও তো প্রতিবাদ করা যেত। কিন্তু তা দেখলাম না কোথাও।  
ন্যানসি। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউন: যদি মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসতে চাই ‘ঝগড়ার গান’ অ্যালবামে, আপনি তাহলে কেন ওই সময়ে মামলা করলেন না? অথবা মুখ খুললেন না সবার সামনে।
ন্যানসি: ওই  যে বললাম, মামলা করার মানসিকতা নেই। ঝামেলায় জড়ানোর ইচ্ছে ছিল না। এখনও মামলা করতে চাই না। এখানে ১২টি গানের জন্য আমাকে আমার প্রাপ্য দেওয়া হয়নি। এমনকি আমার পক্ষে সিগনেচার করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। শিল্পী হিসেবে আমি আসিফ আকবরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু এটা সবসময় বলব, তিনি আমাকে ঠকিয়েছেন। আরও একটা বিষয়, আসিফ ভাই সবসময়ই বলেছেন, অ্যালবামটি থেকে তিনি লাভবান হয়েছেন। এখানে সেল করেছেন, ওখানে সেল করেছেন। এমনও বলেছেন ১২ লাখ টাকা সেল করেছেন। সে সময়ের পত্রিকাগুলোতে তাই বলেছেন, কিন্তু লাভের টাকা আমাকে দেননি। উনার বক্তব্য হলো, শুরুতে উনি ২ লাখ টাকা দিয়েছেন! ব্যস! কিন্তু বুকিং মানি ২ লাখ টাকাই সব! একই সময়ে আমি আসিফ ইকবাল (গানচিল) ভাইয়ের জন্য গান গেয়েছি। উনি প্রতিটি গানের বুকিং মানি ২০ হাজার করে দিতেন। এরপর প্রতিমাসে গান ডাউনলোড থেকে শুরু করে বিক্রির প্রতিটি ভাগ দিতেন। এমনও হতো কোনও মাসে ২ হাজার ৬৩৫ টাকাও জমা হতো। গানচিল থেকে আমাকে ফোন দিয়ে এই অ্যামাউন্ট জানানো হতো। অথচ আসিফ আকবরের ক্ষেত্রে উল্টো! উনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নেই। তিনি যদি বলতেন, ন্যানসি এটা একটা ফ্লপ প্রজেক্ট ছিল, অ্যালবামে লাভ হয়নি। আমি টাকার প্রসঙ্গেও যেতাম না। ছেড়ে দিতাম। কিন্তু তিনি মুখে এক কথা বলতেন, কাজে অন্যটি।
বাংলা ট্রিবিউন: বিষয়টি নিয়ে এখন আপনার অবস্থান কী?
ন্যানসি: বিনা টাকায় অনেক শিল্পীই গান করেন। আমিও করেছি। আজ যে সমস্যা প্রীতম আহমেদ ও শফিক তুহিন ভাই সামনে এনেছেন, এটা যদি আসিফ ভাই সরাসরি তাদের বলতেন, সব সমাধান হতো। তাহলে হয়তো প্রীতম আহমেদ ও শফিক তুহিন মামলা থেকে সরে আসতেন। আমার তো মনে হয় আমাদের শিল্পীদের এই মানসিকতা এখনও আছে। আমি যতটা অর্থনৈতিক কারণে কষ্ট পেয়েছি, তারচেয়ে কষ্ট হয়েছে নৈতিক অস্পষ্টতা নিয়ে। শিল্পী আসিফ আকবরের বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদটি অর্থনৈতিক নয়, নৈতিক! ন্যান্‌সি। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

* গায়ক আসিফ গ্রেফতার

* কারাগারে গায়ক আসিফ

/এম/এমএম/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!