X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘তার এই নিঃসঙ্গ মৃত্যু আমাকে ভাবায়’

বিনোদন রিপোর্ট
১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:১৭আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৫৪

শুক্রবার শহীদ মিনারে... বাংলা ব্যান্ডের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৯ অক্টোবর সকালে হাজারো মানুষ এসেছিলেন শহীদ মিনারে। ফুলেল বিদায় জানানোর পাশাপাশি বিষণ্ণ মনে ইতিউতি ঘুরে বেড়িয়েছেন তার ভক্তরা। তবে সেখানকার কারও কারও কাছে আইয়ুব বাচ্চু শুধু কিংবদন্তি নন- স্বজন, বন্ধু কিংবা শিক্ষকও।
বরেণ্য এ মানুষটির শেষ বিদায়ের ক্ষণে জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন এমনই কয়েকজন শিল্পী। তাদের সে শ্রদ্ধা নিবেদন থাকল নিচে-
রফিকুল আলম, কণ্ঠশিল্পী
হয়তো বক্তৃতা দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। বাংলা গানে তার যে অবদান, এটা ভোলা যাবে না।
কিছুদিন আগের একটা ঘটনা বলি। আমাদের ইমার্জেন্সি নম্বর ‘৯৯৯’-এর যখন কাজ উদ্বোধন হলো, তার আগে বাংলাদেশ পুলিশ একটা সভা আয়োজন করেছিল। সেখানে আইয়ুব বাচ্চুও ছিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে অসুস্থ। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আমি বললাম, তুই এত বড় বড় শ্বাস নিচ্ছিস কেন? সে মজা করে বলল, ‘বড় ভাই আপনাকে দেখে নার্ভাস লাগছে!’ এভাবেই তাকে শেষ হাসি হাসতে দেখেছিলাম। গান ছাড়াও তার কথার মধ্যে একটা উষ্ণতা ছিল।
সে পৃথিবীর প্রথম সারির গিটারিস্টদের মধ্যে একজন। তবে তার এই নিঃসঙ্গ মৃত্যু আমাকে ভাবায়। এত বড় শিল্পী অথচ বাসায় একা থাকা অবস্থায় মৃত্যু হলো। ভাবা যায় না।
ফোয়াদ নাসের বাবু, মিউজিশিয়ান
আমাদের পথচলা ৪০ বছরের। অনেক সময়, অনেক পথ।
বাচ্চুর মধ্যে প্যাশনটা ছিল, ডেডিকেশন ছিল। এই দুটো জিনিস আমার খুব ভালো লাগত। অসম্ভব প্যাশনেট সে।
সে যে পরিমাণ মানুষকে, সংগীতকে ভালোবেসেছে তা আজ তার ভক্তরা তাকে ফিরিয়ে দিতে এসেছেন। শহীদ মিনার থেকে জনস্রোত চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এটা তার ভালোবাসার প্রাপ্তি!
ইমদাদুল হক মিলন, সাহিত্যিক
আমি আসলে বাচ্চুকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট হবে সে। এভাবে সে চলে যাবে তা কল্পনাও করিনি। কালকে যখন তার মৃত্যু সংবাদ শুনলাম, কী যে ধাক্কা লাগল।
আমি আসলে প্রিয় মানুষের মৃত মুখটা দেখতে পারি না। তাই আজ তার মুখ দেখিনি। শুধু শ্রদ্ধা জানিয়েছি। যতদিন বেঁচে থাকব, বাচ্চুর জীবন্ত মুখ আমার মনে থাকুক, স্মৃতিতে থাকুক- এটাই চাই। সংগীতপ্রেমী বাঙালি সংস্কৃতপ্রেমী বাঙালি বাচ্চুকে সারাজীবন বুকের ভেতরে রাখবেন।
ফকির আলমগীর ফকির আলমগীর, সংগীতশিল্পী
দেশপ্রেমের অগ্নিগর্ভ থেকেই আইয়ুব বাচ্চুদের জন্ম। তিনি তো একদিনে এই অবস্থানে আসেননি। স্পাইডার, ফিলিংস, সোলস সর্বশেষ এলআরবি ব্যান্ড। এর মাধ্যমে তিনি নিবেদিত ছিলেন, নিমগ্ন ছিলেন সংগীতে। এটি বলা যায় ধ্যানমগ্ন।

প্রিন্স মাহমুদ, গীতিকবি ও সুরকার

বাচ্চু ভাইকে নিয়ে আসলে নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি আমাদের কাছে ছিলেন বহুল পঠিত খোলা বইয়ের মতো। আর যেটুকু বলার আছে, সেটুকু ভেতরেই জমা থাক না। সব বলতে নেই। স্বার্থপরের মতো কিছু কথা না হয় নিজের মধ্যেই রেখে দিলাম। আমার একটা গান ছিল বাচ্চু ভাইয়ের গাওয়া- হারায়ে বুঝেছি তুমি কী ছিলে আমার, কী ছিলে আমার তুমি বোঝানো না যায়...।
কথাগুলো সারাক্ষণ বুকের ভেতর ঘণ্টা বাজাচ্ছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।
জুয়েল, কণ্ঠশিল্পী
এ পর্যন্ত আমি খুব বেশি গান গাইনি। তবে যে কটি গান গেয়েছি তার বেশিরভাগই বাচ্চু ভাইয়ের করা। ফলে, অনেকেই এখনও ধারণা করছেন, আমি বাচ্চু ভাইর আপন ছোট ভাই। বাস্তবে আসলে তেমন কিছুই না। অথচ উনি আমার কাছে আপন ভাইয়ের চেয়েও বেশি কিছু ছিলেন, আছেন। তা না হলে তো তার গান গেয়ে এতটা পথ এগুতে পারতাম না।
উনি বলতেন, তুই আমার ভাই না, সন্তান। তো আইয়ুব বাচ্চু চলে যাওয়া মানে আমার বাবা চলে যাওয়ার মতোই। তবে যে কোনও মৃত্যুকেই আমি স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখি। কারণ, মৃত্যু হলো আমাদের জন্য অনিবার্য সত্য। ফলে একজন মানুষ কেন মারা গেলেন, কীভাবে গেলেন, না গেলে হতো না- ইত্যকার প্রশ্ন আমার মধ্যে জাগে না। আমি ধরেই নিয়েছি- মানুষকে একদিন যেতেই হবে। আজ এটুকুই আফসোস, আমার জন্য উনি আর গান করবেন না। পুরনো গানগুলো গেয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে আমাকে।

হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল শফিক তুহিন, সংগীতশিল্পী
তিনি আমাকে কবি বলে ডাকতেন। আপন ভাইয়ের মতো বুকে টেনে নিয়েছিলেন। ২০০১ সালে যখন নতুনদের নিয়ে একটি অ্যালবাম করার পরিকল্পনা করলেন তখন আমাকে গীতিকার হিসেবে বেছে নিলেন। ‌‌‌

‘মন জ্বলে’ নামে সেটাই আমার প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম। তারপর থেকে ঘনিষ্ঠতা, অনেক কথা, অনেক স্মৃতি আর অনেক গান।
এই অ্যালবামটি না হলে হয়তো আজ আমাকে এই অধ্যায়ে এভাবে খুঁজেও পাওয়া যেতো না। হারিয়ে যেতাম অন্য কোথাও।
তিনি আমার কাছে সত্যিকারের ‘বস’ ছিলেন। আমরা তাকে ‘বস’ বলেই সম্বোধন করতাম। ‘বস’ হয়েই থাকবেন সারাজীবন।
তানযীর তুহীন, কণ্ঠশিল্পী
বাচ্চু ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে সারাজীবনই। শুধু গানের মানুষ বলেই নয়, তার গান যারা শুনেছেন তারাও এমনভাবে তাকে ধারণ করেন।
বাচ্চু ভাই ওয়ার্ল্ডক্লাস গিটারিস্ট! উনাকে দেখে নতুন প্রজন্ম গিটার শিখবে, ঝংকার তুলবে এবং এভাবেই উনাকে বাঁচিয়ে রাখবে।
উনাকে দেখেছি, উনি সবসময়ই মনের দিক থেকে তরুণ ছিলেন। তরুণদের আনন্দ-দুঃখটা তিনি বুঝতেন। সে তরুণদের এগিয়ে নেওয়ার সাহস তিনি তার গিটার দিয়ে দেখিয়েছেন। আমরা যারা তার অনুজ ছিলাম, তাদের জন্য এটা বিরাট প্রাপ্তি!
শুভ, সংগীতশিল্পী
দেশের সংগীতে অনেক ‘প্রথমের’ সঙ্গে বাচ্চু ভাইয়ের নাম যুক্ত। বাংলাদেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম, প্রথম আনপ্লাগ অ্যালবাম, প্রথম রক কম্পিটিশন উনার করা। মিউজিশিয়ান হিসেবে তার প্রসঙ্গে কথা বলার মতো যোগ্যতা আমার নাই। আমাদের সৌভাগ্য আমরা কাছ থেকে তাকে দেখেছি। শুভ

/এম/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো