X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রুশ অস্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:৩৬আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫১

বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী রাশিয়ার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম সরবরাহে রাশিয়ার সামর্থ্যে ভাটা পড়ার পর এমন পথে হাঁটছে দেশটি। তবে মস্কোর চীন ঘনিষ্ঠ হওয়া ঠেকাতে নয়াদিল্লি সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে। একাধিক ভারতীয় সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ এখন ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকছে। চিরাচরিতভাবে রাশিয়ার প্রতি নির্ভরশীলতা কমিয়ে চীনকে মোকাবিলা করতে চাইছে দক্ষিণ এশীয় দেশটি।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, গত দুই দশকে ভারতের ক্রয়কৃত অস্ত্রের ৬৫ শতাংশ সরবরাহ করেছে রাশিয়া। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার।

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার অস্ত্রবৈচিত্র্য কমে এসেছে।

নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ নন্দন উন্নিকৃষ্ণান বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারত শিগগিরই কোনও বড় সামরিক চুক্তি করছে না। ওয়াশিংটনের জন্য এটি হবে একটি রেড লাইন।

ভারতীয় সরকারের চারটি সূত্র জানিয়েছে, মস্কোর একাধিক প্রস্তাবের পরও এমন অবস্থান নিচ্ছে দিল্লি। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক কামভ হেলিকপ্টার, সুখোই ও মিগ যুদ্ধবিমান এবং যৌথভাবে ভারতে উৎপাদন।

এসব সূত্রের মধ্যে একজন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা রয়েছেন, যিনি সম্প্রতি অবসরে গেছেন। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে চারটি সূত্র নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। 

রাশিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকাশ্যে রাশিয়া ভারতকে আহ্বান জানিয়েছে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমা প্রযুক্তিতে দেশে উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছেন। মোদির ‘ভারতে তৈরি’ প্রকল্পের জন্য এমন উদ্যোগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। মে মাসে নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার পথে হাঁটছেন তিনি।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আগামী দশকে প্রতিরক্ষা খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে দিল্লির।

গত বছর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় জেনারেল ইলেক্ট্রিক ভারতীয় যুদ্ধবিমানের জন্য ভারতে ইঞ্জিন তৈরি করবে। কোনও মিত্র দেশের বাইরে এটি যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রথম চুক্তি। আরও বেশ কিছু খাতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও যৌথ উৎপাদন আলোচনায় রয়েছে।

চীনের সঙ্গে বিরোধও ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকতে ভূমিকা রাখছে। ২০২০ সাল থেকে হিমালয়ের সীমান্ত অঞ্চলে দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আছে। পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটি ১৯৬২ সালে একটি যুদ্ধে জড়িয়েছিল। দুই দেশের ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এখনও অমীমাংসিত।

বেইজিং ঘনিষ্ঠতা

বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা এবং ২০২২ সাল থেকে বৃহত্তম তেলের ক্রেতা ভারতকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খুব সূক্ষ্ম কৌশলে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, এমন বাণিজ্য থমকে গেছে, যাতে মস্কো বেইজিং ঘনিষ্ঠ হতে পারে। ভারতের পর চীনের সঙ্গেই রাশিয়ার বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্র ক্রয়ে প্রভাব তৈরি হয়। এগুলো বন্ধ হওয়ার অর্থ হলো তাদের চীনের দিকে ঠেলে দেওয়া।

বিশ্লেষক উন্নিকৃষ্ণান বলেন, জ্বালানি ও অন্যান্য খাতে বাণিজ্য মস্কো থেকে বেইজিং যতটা সম্ভব দূরে রাখবে।

ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অস্ত্র রফতানি মোটা দাগে স্থিতিশীল রয়েছে। ভারতের অভিযানিক প্রস্তুতির জন্য এটি ছিল উদ্বেগের। কিন্তু এই আশঙ্কা একেবারে বিলীন হয়নি।

রাষ্ট্র পরিচালিত মনোহর পারিকার ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস-এর ইউরেশিয়া বিশেষজ্ঞ স্বস্তি রাও বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে প্রশ্ন উঠছে রাশিয়া পর্যাপ্ত যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে পারবে কিনা। এটি অস্ত্র ক্রয়ে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করছে।

সূত্রগুলো বলেছে, ভারত নিজের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বহরের জন্য ফরাসি যুদ্ধবিমানে নজর দিচ্ছে। একই সঙ্গে ফরাসি, জার্মানি বা স্পেনের প্রযুক্তিতে সাবমেরিন এবং মার্কিন ও ফরাসি ইঞ্জিন দিয়ে যুদ্ধবিমান তৈরি করতে চাইছে।

স্বস্তি রাও বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে ভারতের একাধিক পক্ষের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এসব সম্পর্ক সমভাবে বণ্টন হবে না।

রাশিয়ার চাপ

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ২৭ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে আরও প্রতিরক্ষা চুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। ওই সময় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর মস্কো সফরে ছিলেন।

ল্যাভরভ বলেছিলেন, যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদনসহ সামরিক ও কারিগরি সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ভারতের দেশীয় অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রাশিয়া।

জয়শঙ্কর বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ়। দ্বিমুখী বাণিজ্যে রেকর্ড হয়েছে। জ্বালানি, সার ও কয়লার সংশ্লিষ্ট চুক্তির কারণে এমনটি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রতিরক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকেন।

২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির কোনও অগ্রগতি হয়নি। ওই চুক্তির আওতায় দুই দেশ ভারতে যৌথভাবে কামভ কেএ-২২৬টি হেলিকপ্টার উৎপাদনে সম্মত হয়েছিল। উৎপাদিত হেলিকপ্টারের ২০০টি পাওয়ার কথা ছিল ভারতের। যৌথ উৎপাদনে না গিয়ে ভারত রাষ্ট্রীয় পরিচালিত হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেডে লড়াইয়ের হেলিকপ্টার উৎপাদন শুরু করে।

ভারতের ট্যাংক, যুদ্ধবিমানের বহর, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাসহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক সরঞ্জামের ৬০ শতাংশ সোভিয়েত বা রাশিয়া নির্মিত। দুই দেশ যৌথভাবে ব্রাহ্মস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করেছে এবং ভারতে একে-২০৩ রাইফেল তৈরির পরিকল্পনা করছে। কিন্তু গত বছর ভারতীয় বিমানবাহিনী রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার অভিযোগ তুলেছে। 

কর্মকর্তারা বলছেন, আরও প্রায় দুই দশক পর্যন্ত নিজেদের অস্ত্র মেরামতের জন্য রাশিয়ার অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হবে দিল্লির।

দুই ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ২০১৮ সালে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে ক্রয়কৃত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করতে রাশিয়া এক বছরের বেশি বিলম্ব করেছিল।  

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
ভারতের মসলা নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
হেলিকপ্টারের সিটে বসতে গিয়ে পড়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সর্বশেষ খবর
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু