X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হামাস নির্মূলে কতটা সফল হচ্ছে ইসরায়েল?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ নভেম্বর ২০২৩, ২০:২৫আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ২১:০৬

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফা দখল করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এই স্থল অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনীর কৌশলের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে হাসপাতালটি। অভিযানটির মূল লক্ষ্য হলো হামাসকে নির্মূল এবং ৭ অক্টোবরের হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে বন্দি ২৪০ জিম্মিকে উদ্ধার করা।

গত তিন সপ্তাহে ইসরায়েলের এই কৌশল উন্মোচিত হয়েছে। ৪০ হাজার ইসরায়েলি সেনা গাজা সিটি ঘিরে রেখেছে। ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, হামাস কমান্ডাররা গাজা সিটিতেই অবস্থান করছে। দখলদার সেনারা হামাস যোদ্ধাদের ওপর ও বাঙ্কারে হামলা চালিয়েছে, বিশাল ও জটিল ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে আক্রমণ করেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দাবি, এসব সুড়ঙ্গে লুকিয়ে থাকে হামাস যোদ্ধারা এবং এগুলো থেকে অভিযান পরিচালনা করে। তাদের আরও দাবি, গাজা সিটি ভয়াবহ হামলা চালানো অব্যাহত রাখলে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের ওপর চাপ বাড়বে। এতে জিম্মি মুক্তির বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সহজ হবে।

দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল অভিযোগ করে আসছে, ঘনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকায় বেসামরিক মানুষদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে হামাস। তাদের আরও অভিযোগ, বাড়ি, স্কুল, মসজিদ ও হাসপাতালের কাছে ভূগর্ভে সামরিক অবকাঠামো গড়ে তুলেছে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি। আল-শিফা হাসপাতাল এমন দাবির একটি নমুনা হিসেবে হাজির হয়েছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে আসছিল, হাসপাতালটির নিচে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে এটিকে একটি ঘাঁটি হিসেবে কাজে লাগাচ্ছিল হামাস যোদ্ধারা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয় ইসরায়েলি কৌশল কাজে আসছে কিনা।

মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাদের জানিয়েছেন আগামী দিনগুলোতে গাজার উত্তরে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার পর দক্ষিণাঞ্চলেও পৃথক আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এতে সংঘাতের আরও বিস্তৃতি ঘটবে।

শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলসহ যেখানে যেখানে হামাসের অস্তিত্ব থাকবে সেখানে অভিযান চালাবে সেনারা। যদিও সোমবার এক ভিডিও বার্তা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, সুড়ঙ্গে কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে এবং হামাস উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এবং যোদ্ধারা দক্ষিণে পালাচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্যালান্টের মন্তব্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

প্রশ্নগুলোর মধ্যে রয়েছে, হামাস যোদ্ধারা বেসামরিকের ছদ্মবেশে দক্ষিণে চলে গেলে কীভাবে তাদের নির্মূল করা হবে? গাজায় বেসামরিকের মৃত্যু বাড়তে থাকায় কত দিন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির পক্ষে আন্তর্জাতিক চাপ এড়িয়ে যেতে পারবে? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আল-শিফা হাসপাতাল কি সামরিক অভিযান পরিচালনার মতো উপযুক্ত ছিল?

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে যোদ্ধা ও বেসামরিক রয়েছেন। ইসরায়েল এই বেসামরিক হতাহতের জন্য হামাসকেই দায়ী করছে। তাদের দাবি, হামাস আল-শিফার মতো হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনের পাশে সামরিক সুরক্ষা ও কমান্ড সেন্টার গড়ে তুলেছে।

কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে বেসামরিকদের হতাহত কমানোর জন্য পরিকল্পনার সময় পাননি সেনা কর্মকর্তারা। এর ফলে বেসামরিকদের উচ্চ সংখ্যায় মৃত্যু অবধারিত ছিল।

নির্দিষ্টভাবে আল-শিফা হাসপাতাল গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগের কেন্দ্র দখল করেছে। হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক ও কমান্ড সেন্টারের দাবির পক্ষে কোনও অকাট্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি ইসরায়েল। এটি যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছিল, সেই প্রমাণ হাজির করতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল গিওরা এইলান্ড বলেন, কোনও কৌশলের অংশ হিসেবে আল-শিফাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা। যার মাধ্যমে হামাস সম্পর্কিত আখ্যান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক প্রধান এই কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধের শুরুতে আল-শিফার নিচে হয়তো অবস্থান করছিল হামাস কমান্ডাররা। এখন সম্ভবত তারা দক্ষিণে চলে গেছে। এর ফলে ইসরায়েলকে বেসামরিকদের সরিয়ে নিতে হবে এবং আগামী মাস ও সপ্তাহগুলোতে হামাস ব্রিগেডকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে হবে। ইসরায়েলকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ধৈর্যচ্যুতির কারণে এটি জটিলতায় পড়তে পারে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ভবন। ছবি: এপি

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়াগিল লেভি বলেছেন, একটি স্পষ্ট কৌশলের অংশ হওয়ার বদলে আল-শিফায় আক্রমণ ছিল শক্তি ও সক্ষমতার প্রদর্শন। এটি করতে গিয়ে ইসরায়েল হয়তো জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে।

লেভি বলেন, আল-শিফায় অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে জিম্মিদের ভবিষ্যৎ বা নিরাপত্তার বিষয় আমলে নেয়নি সেনাবাহিনী। হাসপাতালে দুটি মরদেহ উদ্ধার এর পক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ। ফিলিস্তিনি কয়েদিদের বিনিময় বিলম্বিত করে জিম্মিদের হারাচ্ছি আমরা।

মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডারের সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) কেনেথ এফ. মেকেঞ্জি জুনিয়র বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হয়তো তাদের লক্ষ্যের কিছুটা অর্জন করেছে। যেমন-হামাস ইসরায়েলে আগের মতো রকেট হামলা চালাতে পারবে না এবং নিজেদের সেনাদের হতাহতের সংখ্যা কম রাখা। ৫৫ জনের মতো ইসরায়েলি সেনা গাজায় নিহত হয়েছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে সতর্কভাবে এগোচ্ছে তারা।

মেকেঞ্জি আরও বলেছেন, কিন্তু এটি এখনও অস্পষ্ট কতজন হামাস নেতাকে হত্যা করতে পেরেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার একাংশকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে এবং সহস্রাধিক হামাস যোদ্ধাকে হত্যার পরও ২৪০ জন জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।

গাজায় যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে সেটির প্রভাব ইসরায়েলের অর্থনীতি পড়বে বেশি করে। ৩ লাখ ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে সক্রিয় করা হয়েছে। তাদের নিয়মিত বেসামরিক কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

জেনারেল মেকেঞ্জি বলেন, আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়াভাবে সময় ইসরায়েলের পক্ষে নয়।

কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে যত দ্রুত সম্ভব হামাসের সবচেয়ে বেশির ক্ষতি নিশ্চিত করতে ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়ছে।

জ্যানেস নামের লন্ডনভিত্তিক প্রতিরক্ষা এবং ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স প্রতিষ্ঠানের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ জেরেমি বিনি বলেন, এর হয়তো কোনও শেষ নেই। কারণ, এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। প্রাপ্ত সময়ের মধ্যেই সবচেয়ে ভালো সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে তারা হাজির করবে।

 

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
ইইউ দেশগুলোর সম্পর্ক জোরদারে মে মাসে জার্মানি সফরে যাচ্ছেন ম্যাক্রোঁ
কম্বোডিয়ায় অস্ত্রাগার বিস্ফোরণে নিহত ২০
সর্বশেষ খবর
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু