হিজাব না পরলেই ‘মোরালিটি’ পুলিশের হাতে শাস্তি। সেই শাস্তি এড়াতে তাই চুল কেটে পুরুষের সাজ নিয়ে পথে নামছেন ইরানের নারীরা। কেবল শাস্তি এড়ানোই নয়। চুল কেটে তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বাস্তবতাকে প্রতিরোধও করতে চাইছেন। এই লক্ষ্যে ইন্সটাগ্রাম ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ছোট চুল ও হিজাববিহীন ছবি পোস্ট করছেন তারা।
হিজাবের বিষয়ে অত্যধিক কড়াকড়ি নিয়ে অনেকদিন ধরেই সোচ্চার হয়েছেন ইরানি নারীরা। এ ছাড়াও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন নিয়েও সরব হয়েছেন তারা।
সম্প্রতি ইরানের এক নারী রাজনীতিবিদকে হিজাববিহীন ছবি পোস্ট করার ‘অপরাধে’ সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়, যদিও তিনি দাবি করেন, ওই ছবিগুলো ছিল বানোয়াট, ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ছাড়াও এ সপ্তাহে মাথায় কাপড় না দিয়ে ছবি তোলা ও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার জন্য আট মডেলকে আটক করা হয়। এ ধরনের নিপীড়ন এড়াতে অনেক নারীই নিজেদের প্রোফাইল প্রাইভেট করে দিচ্ছেন।
নারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও দেখা যাচ্ছে। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ইরানের পুরুষরাও। সম্প্রতি ইরানের ক্রীড়া সাংবাদিক পেজমান রাহবার ইরানের একটি মেয়ের ছবি শেয়ার করেন। মেয়েটি একটি ফুটবল ম্যাচে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে চুল কেটে ফেলে ছেলেদের মত পোশাক পরে। ছবিতে তার সঙ্গে ছিলেন ইরানের প্রত্যন্ত অঞ্চল খুজেস্তানের ফুটবল দলের কোচ যিনি তার দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সাংবাদিক রাহবার তার পোস্টে লেখেন, ‘ছবিটি দেখে আমি খুশির কান্না ধরে রাখতে পারিনি। এই প্রশিক্ষক ও তার পাশে দৃঢ়প্রত্যয়ী মেয়েটি দুজনেই আসলে চ্যম্পিয়ন। তারা নিজেদের মত করে উদযাপন করছেন বিজয়।’
আরও পড়ুন: মোল্লা মনসুর নিহতের খবর নিশ্চিত করল তালেবান
এ ছাড়াও দুই বছর আগে শুরু হওয়া ফেসবুক প্রচারণা ‘মাই স্টেলথি ফ্রিডম’ বা ‘আমার নিঃশব্দ স্বাধীনতা’ পেইজের বিভিন্ন ছবিও শেয়ার করেন ইরানের পুরুষ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা। ওই পেজটিতে হিজাববিহীন ছবি তুলে পোস্ট দেন নারীরা। এই পেইজের হাজার হাজার ফলোয়ারও রয়েছে। পেইজটি চালান ইরানের সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী মাসিহ আলিনেজাদ। তিনি বলেন, ‘ইরানের অনেক মেয়েই এখন চুল ছোট করে কেটে ছেলে সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে বোঝা যায় সরকার যতই নিপীড়নমূলক আইন আরোপ করুক, পুলিশ যতই নজরদারি করুক, মেয়েরা মোটেই ভয় পায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের নারীরা নিজেরাই পথ করে নিচ্ছেন এই বৈষম্যমূলক নিয়মনীতির বিরুদ্ধে। চুল একজন নারীর আত্মপরিচয়ের অংশ। তারা যখন পুলিশ এড়াতে চুল কেটে ফেলেন তা আসলে কষ্টকর। কিন্তু এক অর্থে এতে নারীর সাহসিকতাও প্রকাশ পায়।’
প্রসঙ্গত, ইরানের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সাত বছর বয়স থেকেই মেয়েদের মাথায় কাপড় দিয়ে বাইরে বের হতে হয়। সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
/ইউআর/বিএ/