X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুমারিতে অনুপস্থিত দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের না ফেরানোর কৌশল মিয়ানমারের

বিদেশ ডেস্ক
১৬ মার্চ ২০১৭, ১৮:২৩আপডেট : ১৬ মার্চ ২০১৭, ২১:৪০

শুমারিতে অনুপস্থিত দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের না ফেরানোর কৌশল মিয়ানমারের মিয়ানমারে দীর্ঘদিন থেকেই সরকারের জাতিগত নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমরা। ২০১৬ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়েন লাখো মানুষ। নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন অন্তত ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা। এই রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশই দেশে ফিরতে ইচ্ছুক। কিন্তু তাদের আশঙ্কা মিয়ানমার সরকার তাদের আর দেশে ফেরার সুযোগ দেবে না। অর্থাৎ, চিরদিনের জন্যই হয়তো পিতৃপুরুষের হাজার বছরের ভূখণ্ডের মায়া ত্যাগ করতে হবে তাদের।

বছরে অন্তত একবার মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে শুমারি চালায় দেশটির কর্তৃপক্ষ। ঘরে ঘরে গিয়ে এ শুমারি চালানো হয়। রোহিঙ্গাদের অফিসিয়াল তালিকা ধরে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের লাইনে দাঁড় করানো হয়। ওই শুমারিতে যাদের অনুপস্থিত পাওয়া যায় লাল কলমে তালিকা থেকে তাদের নাম কেটে দেওয়া হয়।

মিয়ানমারের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বলছে, দেশের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানো থেকে নিবৃত্ত রাখা তাদের এ শুমারির লক্ষ্য নয়। তারা শুধু বিদ্যমান তালিকা হালনাগাদ করছেন। তবে দেশটির কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে স্বীকার করেছেন যে, একবার যারা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে; ভবিষ্যতে দেশে ফেরার চেষ্টা করলে অভিবাসন আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৩০ বছরের একজন রোহিঙ্গা মুহাম্মাদ ইসমাঈল। মিয়ানমারের সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন তিনি। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে এখানেই বসবাস করছেন তিনি। তার বাবা ফোনে তাকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা জানুয়ারিতে দার গি জারিন গ্রামে অবস্থিত তাদের বাড়িতে গিয়েছেন। তারা এটা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, গ্রামে এখনও পর্যন্ত কারা বসবাস করছেন?

মুহাম্মাদ ইসমাঈল রয়টার্স’কে বলেন, আমার আশঙ্কা দেশে ফিরলে আমাকে কারাগারে পাঠানো হবে। সেখানে এটাই আইন।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে যে কথিত শুমারি চালানো হয়; এটা মিয়ানমারের সামগ্রিক চিত্র নয়। বেছে বেছে শুধু রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতেই এটা পরিচালনা করা হয়। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ১১ লাখ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে সরকারের জাতিবিদ্বেষমূলক সিরিজ পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই এ শুমারি পরিচালনা করা হচ্ছে।

স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবিতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের দুটি গ্রামে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর তাণ্ডবের আগের ও পরের চিত্র। ছবি: এইচআরডব্লিউ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের একজন নেতা জানান, পরিবারের গ্রুপ ছবি নিয়ে বলেছি; আমরা একই পরিবারের সদস্য। উত্তরে তারা বলেছে, ছবিতে থাকা সবাই পরিবারের সদস্য হয়ে থাকলে কেউ কেউ নিখোঁজ রয়েছেন। শুমারিতে মুসলিম গ্রামগুলোতে গুঁড়িয়ে দেওয়া ভবনগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এসব ভবন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ছিল না। নতুন করে ইস্যু করা সাময়িক পরিচয়পত্র গ্রহণ না করলে রোহিঙ্গাদের চলাফেরাতেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের কথিত গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি। তার দাবি, সংখ্যালঘু ‘রাষ্ট্রহীন’ রোহিঙ্গাদের অধিক সুযোগ-সুবিধা করে দিতেই এ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা বলছেন, এই সাময়িক আইডি কার্ড আদতে তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকারের একটা অপকৌশল মাত্র।

এদিকে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায় পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা তরুণদের একটি ক্ষুদ্র অংশ সম্প্রতি দেশে ফিরে যাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে একবারে ফিরছেন না তারা। রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা বলছেন, মিয়ানমারে থাকা স্বজনদের বাংলাদেশে নিয়ে আসতেই তারা কিছু সময়ের জন্য দেশে ফিরে যাচ্ছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

২০১৬ সালের অক্টোবরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানে নামে দেশটির সরকারি বাহিনী। মারা যান বহু রোহিঙ্গা। ঢল নামে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গাদের একজন দুদু মিয়া। টেকনাফে একটি শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের নেতা তিনি। দুদু মিয়া বার্তা সংস্থা এএফপি-কে জানান, সরকারি বাহিনীর দমনপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় অনেকে পরিবাবের সদস্য; বিশেষ করে বয়ষ্কদের ফেলে এসেছিলেন। এখন তারা ফেলে আসা স্বজনদের বাংলাদেশে নিয়ে আসতে কিছু সময়ের জন্য মিয়ানমারে গেছেন।

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে দেশে আনুমানিক চার লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। এদের মধ্যে ৭০ হাজার সম্প্রতি এদেশে এসেছেন। দুদু মিয়া জানান, এরমধ্যে হাজারখানেক রোহিঙ্গা সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের আরেক নেতা জানান, অনেকে আতঙ্কে পালিয়ে এসেছিল। তারা ঘরবাড়ি ফেলে এসে এখানে ভিক্ষুকের মতো থাকতে চায় না।

কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে একটি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা আবু সিদ্দিক। বিবিসি’কে তিনি জানান, ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে এই ক্যাম্পটিতে এখন পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।

তিনি বলেন, ‘মূলত যেসব পুরুষেরা পরিবারের অন্য সদস্যদের মিয়ানমারে রেখে পালিয়ে এসেছিলেন তারাই ফিরে যাচ্ছেন। এদের একটা ধারণা হয়েছে, সেখানে পরিস্থিতি এখন শান্ত হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে রয়ে গেছে এবং তাদের সহায় সম্পত্তি আছে, সেগুলোর খোঁজ খবর করতেই তারা যাচ্ছেন।’

/এমপি/

সম্পর্কিত
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
সর্বশেষ খবর
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী