আগেই জানা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ও শেখ হাসিনার চলমান মেয়াদেই ওই চুক্তি স্বাক্ষরের কথা বলেছেন। আর এর পরপরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তিস্তাকে এড়িয়ে তোর্সা, সঙ্কোশ ও রাইদাক এই তিনটি নদীর পানি-বন্টনের বিষয়ে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের দ্বারকা স্যুইটে উপস্থিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর জন্য তিনি সঙ্গে নিয়ে যান বাঁকুড়ার ঐতিহ্যবাহী বালুচরি শাড়ি ও ‘বিশ্ববাংলা’ বিপণি থেকে বিভিন্ন উপহার।
রাতে দুই নেতার একান্ত বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মমতা বলেন, ‘তিস্তার জল দেওয়াটা সত্যিই সমস্যার, সে কথা আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেছি। শুকনো মৌসুমে তিস্তায় জল কোথায়? তখন বাংলাদেশকে জল দিয়ে দিলে রাজ্যে চাষের জলের অভাব হবে। পানীয় জলও মিলবে না। তার চেয়ে অন্য কথা ভাবুন।’
বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে মমতা আরও বলেন, ‘আমি বলেছি, আপনাদের তো জল পাওয়া নিয়ে কথা। বাংলাদেশকে জল দিতে আমার কোনও আপত্তি নেই। তোর্সা রয়েছে। রয়েছে আরও নদী। সেগুলির জলের ভাগ নিয়ে সমীক্ষা হোক। সেই জল দিতে রাজ্যের বাধা নেই। বাংলাদেশ জল পাক সেটা আমিও চাই।’’
তিস্তার পানির বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, ১০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। বিদ্যুৎ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রস্তাব শুনে সন্তোষ প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘সরকারিভাবে এই প্রস্তাব দিন, আমি দেখছি কী করা যায়।’
শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বিবৃতিতে বলেন, “দুই’দেশের মধ্যে বেশ কিছু নদী রয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে তিস্তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। তিস্তা ভারত, বাংলাদেশ এবং দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আমার এবং আপনার সরকারই তিস্তা সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারে।’
দুপুরে হায়দ্রাবাদ হাউসে পুর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থেকে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে রেল ও বাস চলাচলের উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আলাপ আলোচনাও করেছেন মমতা। সুষমার জন্যও বালুচরি শাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন মমতা।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার পত্রিকা।
/এসএ/এফএস/
আরও পড়ুন-