স্টকহোমে লরি হামলার প্রধান সন্দেহভাজন ওই হামলার দায় স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে তার আইনজীবী। তবে সেই আইনজীবীর প্রত্যাহার চেয়েছেন সন্দেহভাজন হামলাকারী। আদালত সেই দাবি মেনে নেয়নি। এতে এক আইনি ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
রাখমান আখিলোভ নামে ওই উজবেক নাগরিকের আইনজীবী জোহান এরিকসন বলেন, কড়া নিরাপত্তার মধ্যে স্টকহোম আদালতে তাকে হাজির করা হয়। তিনি বলেন, ‘রাখমাত তার অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং তিনি আটকই থাকবেন।’ তবে রাষ্ট্রনিয়োজিত এই আইনজীবীকে আর মানতে পারছেন না সন্দেহভাজন হামলাকারী আকিলোভ। তিনি একতজন সুন্নি মুসলিম আইনজীবী চাইলেও আদালত তার দাবি নাকচ করে দিয়েছে।
উজবেক নাগরিক আকিলোভ সবুজ রংয়ের হুডি পড়ে আদালতে আসেন। এরিকসনের বিবৃতির পর বাকি শুনানি রুদ্ধদ্বারে হয় এবং কোনও সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সোমবার আখিলোভ তার আইনজীবী পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি অনুরোধ করেছিলেন কোনও সুন্নি মুসলিম যেন তার মামলা লড়ে। কিন্তু তার অনুরোধ রাখা হয়নি।
শুক্রবারে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে চালানো ওই লরি হামলায় চারজন নাগরিক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে এক ব্রিটিশ ও ১১ বছরের শিশুও ছিল। আখিলোভ পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। হামলার কয়েক ঘণ্টা পর মার্সতা রেলস্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার পুলিশ জানায়, তারা ফেব্রুয়ারি থেকে ‘সন্দেহভাজন’ আকিলোভের সন্ধানে ছিল।
২০১৪ সালে তিনি সুইডেনে বসবাসের অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু গত গ্রীষ্মে তার অনুরোধ নাকচ করা হয়। তাকে দেশত্যাগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও জারি করা হয়। কিন্তু তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ওই ব্যক্তির বর্ণনা দেয়। যে ১০ হাজার নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল তার একজন ছিলেন আকিলোভ।
এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ প্রধান জোনাস হাইসিং জানান, ‘তার আবেদনপত্রটি স্বাভাবিক নিয়মেই দেখা হয়েছে। আমরা যদি তাদের অবস্থান সম্পর্কে না জানি তবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টিফান লোভেন বলেন, আমি খুবই হতাশ। আপনাদের আবেদন গ্রহণ করা না হলে দেশত্যাগ করুন।
রবিবার সকালে স্টকহোমের উত্তরাঞ্চলে সোলেনটুনায়ওে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, সেখানে ৫ শতাধিক মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সন্দেহভাজন ব্যক্তি জঙ্গি সংঠনগুলোর ব্যাপারে সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন। সুইডেন সিকিউরিটি সার্ভিসের ‘সাইপো’র সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ। এছাড়া ইউরোপোল ও ইন্টারপোলও এই তদন্তকাজে সহায়তা করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার দিন শুক্রবার ধারণকৃত ছবিতে দেখা যায়, একটি বড় নীল ট্রাক একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই অবস্থাকে ভয়ংকর উল্লেখ করে বলেন, একটি ট্রাক এলোপাতাড়ি চালাতে শুরু করে এবং সবকিছুর উপর দিয়ে চলতে থাকে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে প্রত্যক্ষদর্শী রিকার্ড গফিন বলেন, মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল। ব্যাপারটা সত্যিই খুব ভয়ংকর।’
হামলার পর সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে লোফভেন বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা চায় আমরা যেন ভয় পাই। আমাদের জীবন থমকে দিতে চায়। কিন্তু আমরা এমন কিছু করবো না। সন্ত্রাসীরা কখনোই সুইডেনকে হারাতে পারবেন। কখনো না।’
/এমএইচ/বিএ/