X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘বহিরাগত’ থেকে ‘মূলধারা’র মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্প!

বিদেশ ডেস্ক
১৪ এপ্রিল ২০১৭, ১২:২৩আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০১৭, ১২:২৬

ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারণার শুরু থেকে শপথ গ্রহণ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামো ও রাজনীতিকদের বিরোধিতা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছেন। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তার পররাষ্ট্রনীতি হবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের তুলনায় ভিন্ন। পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট ন্যাটোকে বলেছিলেন অচল, আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং ক্ষমতা গ্রহণের পরও দাবি করেছিলেন, সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার নয়। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে ট্রাম্পের এসব দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। তিনিও চিরাচরিত মার্কিন রাজনীতিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের দিন অভিষেক ভাষণে ওয়াশিংটনের রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেছিলেন, তারা নিজেদের পকেট ভারী করেছেন, কিন্তু দেশের নাগরিকদের রক্ষা করেননি। সারা দেশের অভাবগ্রস্ত পরিবারের জন্য কোনও বিজয় তারা আনতে পারেননি। ট্রাম্প ঘোষণা করেন, নির্বাচনে তার বিজয়ের মধ্য দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাত থেকে ওয়াশিংটন মার্কিন জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হলো। তিনি আশ্বাস দেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও মহান হবে। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র আর হারবে না, সে একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে আনবে।

ট্রাম্পের ভাষণের অন্য বৈশিষ্ট্য ছিল আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধিতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রে ছিল বিশ্বশক্তি হিসেবে তার প্রবল উপস্থিতি। কিন্তু ট্রাম্প এক ভিন্ন, অন্তর্মুখী যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেছিলেন, যার একমাত্র লক্ষ্য হবে অভ্যন্তরীণ, বৈদেশিক নীতিসহ সব প্রশ্নে জাতীয় স্বার্থকে তুলে ধরা। ট্রাম্পের উচ্চারণ করা স্লোগানের মধ্যে ছিল, ‘আমাদের থাকবে দুটি সাধারণ নীতি, আমেরিকায় তৈরি জিনিস ক্রয় কর, আমেরিকানদের চাকরি দাও।’ এ সময় তিনি একাধিকবার ‘আমেরিকা ফার্স্ট, আমেরিকা ফার্স্ট’ উচ্চারণ করেন।

অথচ ক্ষমতাগ্রহণের তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে নিজের অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই পাল্টে ফেলেছেন ট্রাম্প। বিশেষ করে ন্যাটো, চীন, রাশিয়া এবং সিরিয়া নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।  একসময় ট্রাম্প ন্যাটোকে অচল হিসেবে দাবি করেছিলেন। এখন তিনিই দাবি করছেন, এ জোট আর অচল নয়! যে চীনের মুদ্রা অবমূল্যায়ন এবং বাণিজ্য নিয়ে সমালোচনা করা ট্রাম্প এখন চীনের প্রতিই উষ্ণ মনোভাব পোষণ করেন। আর রাশিয়ার সঙ্গে বরাবরই উষ্ণ সম্পর্ক গড়ার কথা বললেও এখন সেই রাশিয়ার প্রতিই ট্রাম্প বিরূপ মনোভাব।

সম্প্রতি হোয়াইট হাউজের এক সংবাদ সম্মেলনে এবং পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে বৈদেশিক নীতি বিষয়ক একাধিক ইস্যুতে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হচ্ছে। আর চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ভেঙে পড়া দেশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি ট্রাম্প প্রশাসন মেনে নিয়েছিল বলে মনে করা হলেও এখন ইউটার্ন নিয়েছেন ট্রাম্প। বিশেষ করে ইদলিবের খান শেইখৌন শহরে রাসায়নিক গ্যাস হামলার পর আসাদকে ‘কসাই’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। সিরীয় বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানোর পর ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান শিবিরে ট্রাম্পের বিরোধীরাও তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। আর তার একনিষ্ঠ সমর্থকরা এ হামলার বিরোধিতা করেছেন।

আসাদের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের কঠোর মনোভাবে স্বাভাবিকভাবেই রুষ্ট সিরিয়া-মিত্র রাশিয়া। রাশিয়া সিরিয়াকে অনবরত সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি প্রচারভিযানের সময় ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন নিয়ে অনেক আশার কথা শোনালেও সম্প্রতি হোয়াইট হাউজের সংবাদ সম্মেলনে তিনি একেবারেই ভিন্ন সুরে বলেছেন, এ মুহূর্তে আমরা আর রাশিয়ার সঙ্গে যাচ্ছি না। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের দিক দিয়ে আমরা এখন সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছি।

চীন নিয়ে আরেক বৈপরিত্যের সুরে ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশংসা করেছেন। গত সপ্তাহে ফ্লোরিডায় জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করার পর ট্রাম্প বলেছেন, পারমাণবিক হুমকি উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ দূর করার ব্যাপারে চীন আন্তরিক।

ন্যাটো প্রসঙ্গেও এমনই প্রশংসার বাণী শুনিয়েছেন ট্রাম্প। বলেছেন, নেটো বিশ্বের নতুন নতুন হুমকিগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে পারছে। বুধবার হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, আমি বলেছিলাম ন্যাটো অচল। কিন্তু এটি আর অচল নয়।

ট্রাম্পের অভিষেক ভাষণটি লিখতে সাহায্য করেছিলেন তার প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী হিসেবে পরিচিত ব্যানন বিভাজনের রাজনীতির জন্য পরিচিত। অথচ চলতি এপ্রিলেই ট্রাম্প শিবিরের স্টিভ ব্যানন’কে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ- এনএসসি’র ‘প্রিন্সিপালস কমিটি’ থেকে নিজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ব্যানন’কে সরিয়ে দেন ট্রাম্প। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এনএসসি’র উপদেষ্টার পদ ছাড়তে বাধ্য হন মাইকেল ফ্লিন।

পুরো নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্প নিজেকে মার্কিন রাজনীতিতে বহিরাগত হিসেবে দাবি করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, মূলধারার রাজনীতিকদের মতো তিনি হবেন না। তবে শেষ পর্যন্ত সেই পথে হাঁটছেন ট্রাম্প। যদিও বিতর্কিত আরও বেশ কয়েকটি অবস্থান যেমন সীমান্ত ব্যবস্থাপনা দ্বিগুণ করা ও অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নের বিষয়ে এখনও অবস্থান বদলানোর কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এবং এটাও সত্য যে, একদিনের রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনে ট্রাম্পের রাজনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে ধরে নেওয়া ভুল। তবু  ন্যাটো, রাশিয়া, চীন ও সিরিয়ার প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টি ভঙ্গি তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ট্রাম্পের অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব শেন স্পাইসার বলেন, ‘পরিস্থিতি বদলে গেছে।’ ট্রাম্পের আকস্মিক ডিগবাজী তার বৈদেশিক নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে অনেক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টও প্রচারণার সময় বিভিন্ন কথা বললেও দায়িত্ব নেওয়ার পর ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ট্রাম্পও চিরাচরিত পথে হাঁটা শুরু করেছেন। সূত্র: সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, রয়টার্স।

/এএ/

 

সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করলো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বশেষ খবর
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে: জাতিসংঘ
গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে: জাতিসংঘ
তীব্র তাপে গলছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের কার্পেটিং
তীব্র তাপে গলছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের কার্পেটিং
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী