দ্রুতগতিতে আকাশ ছুঁয়ে যাওয়া চকচকে একটি অত্যাধুনিক সামরিক বিমান। এর সামনের সারিতেই বসেছিলেন সিএনএন-এর সাংবাদিক থম প্যাটারসন। ব্রাজিলিয়ান এয়ারক্রাফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমব্রায়ের-এর এ বিমান নিয়ে রীতিমতো মুগ্ধ প্যাটারসন। প্যারিস এয়ার শো-তে নিজেদের নতুন জেট পাওয়ার্ড কেসি-৩৯০ মিলিটারি কার্গো হলার উপস্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিমান প্রস্ততকারক সংস্থা লকহিড মার্টিন-এর সি-১৩০ হারকিউলিসকে পেছনে ফেললো এমব্রায়ের। এ খাতে নিজেদের সক্ষমতার জানান দেওয়া এবং এ ব্যবসায়ে নিজেদের অবস্থানকে আরও সংহত করাই ছিল এর লক্ষ্য।
সামরিক বিমান সেক্টরে দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছে লকহিড মার্টিন-এর সি-১৩০ হারকিউলিস। মার্কিন সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে এটি ব্যবহার করেছে। এ বিমানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অপ্রস্তুত রানওয়ের ওপর ল্যান্ড করতে আবার উড়তে পারে। এক ডজনেরও বেশি দেশে এটি সরবরাহ করেছে লকহিড মার্টিন। বর্তমানে দুনিয়াজুড়ে নিয়মিতভাবে এক হাজার ১০০টিরও বেশি সামরিক ও বেসামরিক সি১৩০ উড্ডয়ন করে। দৃশ্যত এটি এখন প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আর এই প্রতিস্থাপনের বাজারটাই দখলে নিতে চায় ব্রাজিলিয়ান এয়ারক্রাফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমব্রায়ের।
এমব্রায়ের-এর এই উচ্চাভিলাষ নিয়ে সিএনএন-এর সঙ্গে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী পাউলো সেজার ডে সৌজা ই সিলভা। তিনি বলেন, এখন নতুন কিছু করার সময় এসেছে। এজন্য আমরা প্রস্তুত। তবে লকহিড মার্টিন (এলএমটি)-এর প্রতিযোগিতাকে আমরা সম্মান করি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ শিল্পের বড় খেলোয়াড় হওয়ার ব্রাজিলের যে উচ্চাকাঙ্খা তার বাস্তবায়নের একটা অংশীদার হতে পারে এই কেসি-৩৯০ মিলিটারি কার্গো হলার।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেয়ারফ্যাক্সভিত্তিক খ্যাতনামা অ্যারোস্পেস কনসালটেন্সি ফার্ম টিল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রিচার্ড আবৌলাফিয়া। তার মতে, এমব্রায়ের-এর এই জেট বিশ্বশক্তি হিসেবে ব্রাজিলের উত্থানকেই প্রতিনিধিত্ব করছে।
এমব্রায়ের-এর তৈরি কেসি-৩৯০ মিলিটারি কার্গো হলারটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬১ ফুট। এটি সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং সাঁজোয়া যানের যে কোনও সামগ্রী বহনে সক্ষম। মানবিক ত্রাণ সরবরাহের কাজে এটি ব্যবহার করা যাবে। এমনকি জ্বালানি সরবরাহের কাজেও ব্যবহার করা যাবে এই কার্গো বিমান।
প্রথমবারের মতো ফ্রান্স থেকে একটি ফ্লাইটে সাংবাদিকদের নিয়ে উড্ডয়ন করে অত্যাধুনিক এই কার্গো বিমান। নিজেদের বিমানে তাদের ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উড্ডয়নের অভিজ্ঞতার সুযোগ দেয় এমব্রায়ের।
বছরের পর বছর ধরে নিজেদের সক্ষমতার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। আর তাদের জন্য বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা লকহিড মার্টিনই যেন এখন ব্রাজিলিয়ান এক বিমান সংস্থার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। মার্কিন বিমান বাহিনী বর্তমানে সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস ব্যবহার করছে। এতে নতুন ইঞ্জিন এবং এভিয়েশন সরঞ্জাম রয়েছে।
টিল গ্রপের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড আবৌলাফিয়া মনে করেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিসও নিশ্চিতভাবেই তার আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখবে।
ব্রাজিলের কেসি-৩৯০ মিলিটারি কার্গো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস; উভয় বিমানই অপেক্ষাকৃত ছোট এবং ধূলাবালিতে ভরা রানওয়েতে অবতরণে সক্ষম। এই দুই বিমানের ইঞ্জিন শিলা এবং ধূলিকণার ধকল সহ্য করতে সক্ষম।
বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র দুটি কেসি-৩৯০ মিলিটারি কার্গো বিমান উড্ডয়ন করছে। এখনও পর্যন্ত নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ফলে সামরিক বিমান খাতে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিতে হয়তো আরও কিছুটা সময় লাগবে ব্রাজিলিয়ান এই বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের। সূত্র: সিএনএন।
/এমপি/