যুক্তরাষ্ট্রের শার্লটসভিল শহরের সহিংসতা নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই এবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটারে দেওয়া পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের ‘সুন্দর’ ভাস্কর্যগুলো ধ্বংসের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, এটা দুঃখজনক যে সুন্দর ভাস্কর্য ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে এই মহান দেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। আপনি ইতিহাসকে বদলে দিতে পারেন না। তবে এ থেকে আপনি শিক্ষা নিতে পারেন।
আরেক টুইটে তিনি লিখেছেন, আমাদের শহর ও পার্কগুলো থেকে সৌন্দর্যকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। মানুষ এসব চরমভাবে মিস করবে এবং সেভাবে কখনও এগুলো প্রতিস্থাপিত করা সম্ভব হবে না!
সমালোচকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের এসব ভাস্কর্য ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো উগ্র জাতীয়তাবাদের বার্তা দেয়। এটা মানুষকে সংঘাতের দিকে প্ররোচিত করে। তবে ট্রাম্প সমর্থকরা বলছেন, ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদে এসব প্রতীক সংরক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ভার্জিনিয়ায় শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের সমাবেশকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় দৃশ্যত উগ্রপন্থীদের পক্ষ নিয়েছেন ট্রাম্প। এ ঘটনায় মঙ্গলবার প্রথমে ডান ও বাম চরমপন্থিদের দায়ী করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অথচ এর একদিন আগেই হোয়াইটস হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলের ওই হামলার জন্য শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের দায়ী করেছিলেন তিনি।
সমালোচকরা বলছেন, চাপে পড়েই নব্য নাৎসিবাদী এবং বর্ণবাদী গ্রুপ কু ক্লুক্স ক্লান-এর নিন্দা করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই নতুন সুর আদতে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বর্ণবাদকে উৎসাহিত করবে। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচনে জিতছেন না। এমনকি তিনি কংগ্রেসেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হবেন।
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলের ওই ঘটনায় সবাই নব্য নাৎসিবাদী ছিল না। বিশ্বাস করুন সেখানে সবাই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ছিলেন না। অপরপক্ষে থাকা বামপন্থীরাও সহিংস আচরণ করেছিল। তারা অন্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সেদিন এমনটাই ঘটেছিল।
প্রেসিডেন্টের এই বার্তায় চরম ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের স্পষ্ট করে অভিযুক্ত করা হয়নি বলে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান নেতা। রিপাবলিকান সিনেটর কোরি গার্ডনার এক টুইটে প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, অশুভকে তাদের নাম ধরেই ডাকা উচিত।
শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের 'ঘরের সন্ত্রাসী' বলে দাবি করেন সিনেটর কোরি গার্ডনার। তার বক্তব্যকে মার্কো রুবিও এবং টেড ক্রুজের মতো অনেক সিনিয়র রাজনীতিবিদরাও সমর্থন করেছেন। এমনকি ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী এবং নব্য নাৎসীবাদীদের বর্ণবাদ ছড়ানোর জন্য দায়ী করেন।
ট্রাম্পের অবস্থান বদল নিয়ে সমালোচনার জবাবে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট খুব দৃঢ়তার সঙ্গেই সব ধরনের সহিংসতার বিপক্ষে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। অবশ্যই এর মধ্যে শ্বেতাঙ্গ চরম ডানপন্থী, কেকেকে বা নব্য নাৎসীবাদের মত সব চরমপন্থীরাও রয়েছে।
শনিবার উগ্রপন্থী শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের ডাকা 'ইউনিয়ন দ্য রাইট' নামের সমাবেশকে ঘিরে ওই সহিংসতায় ৩২ বছরের এক নারী নিহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন। ওই সহিংসতার জন্য শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের দায়ী করেন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ রাজনীতিক। সূত্র: সিএনএন, বিবিসি।
/এমপি/