X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আল জাজিরার বিশ্লেষণ

ট্রাম্পের ঘোষণায় জোরালো হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবি

বিদেশ ডেস্ক
১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:০৩আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৪৪
image

জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনি জনতার মনে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়েছেন। পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা আর পূর্ব জেরুজালেমে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে শত শত মানুষ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই ঘোষণা আরব বিশ্বের নিস্ক্রিয় ভূমিকাকে সামনে আনার পাশাপাশি বিশ্বের সামনে ফিলিস্তিন প্রশ্নটিকে নতুনভাবে হাজির করেছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিনি জনতার প্রতি আশীর্বাদ হিসেবে দেখা হয়েছে ওই বিশ্লেষণে। বিশ্লেষকরা আশা প্রকাশ করেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ক্ষোভের যে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা ফিলিস্তিনিদের নিরন্তর স্বাধীনতার লড়াইকে আরও উজ্বীবিত করবে বলে মনে করছেন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার আন্দোলন

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংকটের সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় হলো জেরুজালেম। ১৯৮০ সালে জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর সমর্থন দেয়নি। আর ফিলিস্তিনিরা চায় দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম যেন তাদের রাজধানী হয়। এ কারণে সেখানে কোনও দেশ দূতাবাস স্থাপন করেনি। সবগুলো দূতাবাসই তেল আবিবে অবস্থিত। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির বাইরে গিয়ে গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। আর ফিলিস্তিনে শুরু হয়েছে তীব্র বিক্ষোভ। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর। এরপরও প্রতিদিনই তীব্রতর হচ্ছে বিক্ষোভ। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিরা ইন্তিফাদার অন্যতম হাতিয়ার পাথর আর গুলতি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। তারা ইসারায়েলি বাহিনীর উপর পাথর ছুড়ে মারছে। আবার একই সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতিও নিচ্ছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে এ আন্দোলন শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১৭৯৫ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছে মোট ছয় ‍জন।

কুয়েত থেকে অভিবাসী ফিলিস্তিনিদের পপুলার কনফারেন্সের চেয়ারম্যান সালমান আবু সিত্তা আল জাজিরাকে বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আরব জনগণের হৃদয় আর আন্তর্জাতিক আইনের মেরুদণ্ডকে আঘাত করেছে। ফিলিস্তিন প্রশ্নে জনতার অনুভূতির প্রতীক জেরুজালেম। প্রদত্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই অনুভূতিতে আগুন জ্বালিয়েছেন ট্রাম্প। যারা একে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন, তাদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের মুখোশও উন্মোচন হয়েছে এই ঘটনায়।

৬ ডিসেম্বর বুধবারের ওই ঘোষণার পর শনিবার এ নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকে আরব লিগ। কায়রোয় অনুষ্ঠিত বৈঠকে জেবরান বাসিল বলেন, ‘ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে...কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা শুরু করতে হবে, এরপর রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তারপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে জোটের মহাসচিব একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে আবুল ঘেইত বলেন, ‘ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী এবং এটি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’ তার মতে, মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের কারণে ‘ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর আরব বিশ্বের আস্থা ক্ষুণ্ন হতে পারে’। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে বৈধতা দেওয়ার শামিল বলেও উল্লেখ করেন আরব লিগ মহাসচিব। তবে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন এখন পর্যন্ত কোনও আরব দেশই শক্ত সাড়া দেয়নি বা সাহসী পদক্ষেপ নেয়নি। তার পক্ষ থেকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মালিকী মঙ্গলবার এক বক্তব্যে বলেন, ‘কোনও (মার্কিন) দূতাবাস বন্ধ হয়নি, রাষ্ট্রদূত বহিষ্কৃত হয়নি, সম্পর্ক ছিন্ন করা এমনকি স্থগিতও করা হয়নি। সে সময় তিনি বলেন, শুধু ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করাই যথেষ্ট নয়।   

অনেকেই বিশ্বাস করছে আরব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য বেশিই ছাড় দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, ‘আরব দেশগুলো শুধুমাত্র বিবৃতি ও ঘোষণাই দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তারা এতই দুর্বল বা বিভক্ত যে কোন কিছুই করতে পারছে না।’ তবে অনেকেই মনে করছেন, সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে আরব কূটনৈতিকদের উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরব ও ইসলামিক শিক্ষা ইন্সটিটিউটের গবেষক ঘাদা কারমি বলেন, ‘মার্কিন পদক্ষেপ সাধারণ আরব ও মুসলিমদের একত্রিত করে সরকারকে ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করতে ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে থাকতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চাপ দিচ্ছে।’

কারমি বলেন, ‘এই ঘোষণা আরব নেতাদের বাস্তব প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে যে, তারা এখন কীভাবে কাজ করতে চায়? এনিয়ে তারা আবার ভাবতে শুরু করেছে।’

স্বাধীনতার দাবিতে ফিলিস্তিনে বিক্ষোভ

এদিকে এতদিন ধরে কূটনীতিকরা দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য যে চেষ্টা করে আসছে ট্রাম্পের ঘোষণায় তা কার্যত শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেকে। এ বিষয়ে আবু সিত্তা বলেন, ‘এই ঘোষণা তথাকথিত শান্তি প্রক্রিয়ার নামে প্রতারণার বিষয়টি বিশ্বের সামনে উন্মোচন করেছে। পুরো জেহরুজালেমকে ইসরায়েলের বলে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ছিল দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কফিনে শেষ পেরেক।’

এদিকে মঙ্গলবারও পশ্চিম তীর, গাজা ও জেরুজালেমে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে ফিলিস্তিনিরা। এদিনও বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের শিকার হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর  গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে তারা। এতে নতুন করে আরও ৪৫ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার পশ্চিম তীরে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের আঘাতে ৩৬ জন বিক্ষোভকারী আহত হন। আর গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে আরও ৯ জন আহত হয়। তুলকারম, আল খাদের এবং জেরুজালেমেও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। ওল্ড সিটির সালাহউদ্দিন স্ট্রিটে ফিলিস্তিনিদের ধাওয়া করা এবং আটকের চেষ্টা করে ইসরায়েলি সেনারা। আর পশ্চিম তীরের সালফিত শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে এক ফিলিস্তিনি শিশু আহত হয়।

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও কলামিস্ট দাউদ কুত্তাব আল জাজিরাকে বলেন, গত কয়েক বছর ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি বিষয়ে কূটনীতি নীরব থাকলেও ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত জেরুজালেমের জনগণের জন্য ‘আশির্বাদ’ হিসেবে এসেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেম ও ফিলিস্তিনের বাসিন্দাদের বড়দিনের উপহার দিয়েছেন। এতদিন রাজনৈতিকভাবে এতিম হয়ে থাকা জেরুজালেমের তিন লাখ ফিলিস্তিনি চিন্তার চেয়ে বেশি মনোযোগ ধরতে পারছে।’

ঘাদা কারমি লন্ডন থেকে আল জাজিরাকে বলেন, এই পদক্ষেপ ইসরায়েলকে পুরো জেরুজালেম দখলের ফ্রি লাইসেন্স দিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবিকে আবারও সবার সামনে নিয়ে এসেছে। এটি একটি নিরন্তর লড়াই।  এই লড়াই ফিলিস্তিনি ও জেরুজালেম সংকটকে বিশ্বের সামনে হাজির করেছে।’

 

 

/আরএ/বিএ/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
সর্বশেষ খবর
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ