X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘অচল সরকার’ নিয়ে দ্বিতীয় বছর শুরু ট্রাম্পের

বাধন অধিকারী
২১ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:০০আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৫১

বাজেট সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে এক অচলাবস্থার সরকারকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শাসনামলের দ্বিতীয় বছরে পা রাখলেন। সঙ্গে নিয়ে এলেন তার নেতৃত্বের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠের অনাস্থা আর ইতিহাসের আধুনিক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে কম জনপ্রিয়তা। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রতিও অনাস্থা বাড়িয়েছেন তিনি। মুসলিম বিদ্বেষী অভিবাসী আইন, মেক্সিকোর প্রতি বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, রাশিয়ার সঙ্গে সখ্য, নারীর প্রতি সহিংসতা, তেহরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা ভেঙে দেওয়া, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি, ফিলিস্তিনবিরোধী মধ্যপ্রাচ্য নীতি এবং মিডিয়ার প্রতি বৈরিতা নিয়ে তিনি বিশ্ব মিডিয়ায় থেকেছেন বছরজুড়ে। সাংবাদিক সুরক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) তাকে ‘বৈশ্বিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারী’দের তালিকায় শীর্ষে রেখেছে।
‘অচল সরকার’ নিয়ে দ্বিতীয় বছর শুরু ট্রাম্পের

২০১৬ সালের নভেম্বরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বারাক ওবামার স্থলাভিষিক্ত হন ট্রাম্প। পশ্চিমের কথিত বিশ্বায়নের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করান তিনি। নব্য উদারবাদী অর্থব্যবস্থা মানুষকে যেখানে বিপন্ন করেছিল, ট্রাম্পের হাত ধরে নগ্ন বাজার আর পুরনো সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ সেখানে নিজের উত্থান ঘোষণা করে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট সূত্রে তিনি বিভক্ত করেন মার্কিনসহ বিশ্বজনতাকে। ‘আমরা’  আর ‘ওরা’ বিভাজনের মধ্য দিয়ে ঘৃণার বেসাতি ছড়াতে থাকেন কৃষ্ণাঙ্গ-মেক্সিকান-মুসলমানদের বিরুদ্ধে। প্রথমেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার পরিকল্পনা। এরপর সবার জন্য জরুরি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসেন তিনি। ইউনেসকো থেকেও সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। ৬টি মুসলিম দেশসহ ৮টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব করেও ব্যাপক সমালোচিত হন ট্রাম্প। নিয়েছেন একের পর এক অভিবাসী প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ। সর্বশেষ মধ্যপ্রাচ্যে পড়েছে তার নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী থাবা। জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানী ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত উসকে দিয়েছেন।

‘আমেরিকা ফার্স্ট' নীতিতে অবিচল ট্রাম্প ৭ লাখ ড্রিমার অধিবাসীকে তাড়িয়ে দিতে চান। ডেমোক্র্যাটরা এতে রাজি হয়নি। তাই সমঝোতা ভেস্তে গেছে।

ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা জরিপ

আধুনিক যুগের অন্য সব মার্কিন প্রেসিডেন্টের তুলনায় ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তলানিতে। তার যুগে মার্কিন নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বের আস্থা কমেছে। হ্রাস পেয়েছে সব ধর্মের সম্মিলনের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা। তিনি যত বেশি কথা বলেছেন কাজ করেছেন ততটাই কম। কর সংস্কার বিল ছাড়া কংগ্রেসে তার প্রশাসনের কোনও বিলই পাস হয়নি। থার্টিফাইভ-এইটের গত সপ্তাহের জরিপ বলছে, তিনি আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। তার পক্ষে আছে মাত্র ৪০ শতাংশ মার্কিনি। দেশটির ৬১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ট্রাম্পের সময়ে আমেরিকা আগের চেয়েও অধিক বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

গত এক বছরে ট্রাম্প ৫৮টি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা ৪১ এবং জর্জ ডাব্লিউ বুশ একই সময়ে ৫৬টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। ট্রাম্পের কিছু নির্বাহী আদেশ আদালতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে বছরের শুরুতেই মুসলিম অভিবাসীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তিনি বারবার ধাক্কা খেয়েছেন। যদিও শেষ সময়ে এসে নিষেধাজ্ঞার সাময়িক অনুমোদন দেয় সুপ্রিমকোর্ট। ট্রাম্প ওবামা কেয়ার বাতিল করে নতুন স্বাস্থ্য বিল পাস, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণসহ নানা ইস্যুতে অঙ্গীকার করলেও কোনও সফলতা পাননি। তবে ওবামা কেয়ারে সব মার্কিন নাগরিকের স্বাস্থ্য বিমার অধীনে থাকার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা বাতিল করতে সমর্থ হয়েছেন তিনি।
সিনেটে সমঝোতা প্রচেষ্টা

তার প্রশাসন থেকে বিদায় নিয়েছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। আর উত্তর কোরিয়া ইস্যু, রুশ সংযোগের তদন্তের মতো আগের বছরের কিছু বিষয়ও তার পিছু ছাড়েনি। সব মিলিয়ে ২০১৮ সাল ট্রাম্পের জন্য মোটেই সৌভাগ্য বয়ে আনেনি। তার দ্বিতীয় বছর শুরু হয়েছে ‘অচল সরকার’কে নিয়ে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, সরকারে সচলতা আনতে চুক্তিতে আসার আগে কোনও সমঝোতায় রাজি নন তিনি। হোয়াইট হাউসের সর্বশেষ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অচলাবস্থা নিরসনের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার আগে অভিবাসী ইস্যুতে সমঝোতা করতে নারাজ ট্রাম্প।’ নিজের টুইটার পোস্টেও 'আমেরিকা ফার্স্ট’ লিখে অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোরতার আভাস দিয়েছেন তিনি। আরেক টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘ডেমোক্র্যাটদের অভিবাসী প্রীতি’র কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জিম্মি হয়ে আছে।’

সূত্র: এএফপি, গার্ডিয়ান, সিএনএন ও এনবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!