X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের ভূমিকার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন আসমা

বাধন অধিকারী
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:৫৪আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২০:১৬

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে সংঘটিত গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন দেশটির মানবাধিকারের পক্ষের উজ্জ্বল নক্ষত্র আসমা জাহাঙ্গীর। তিনি সবসময় চাইতেন, পাকিস্তান তার ঘৃণ্য ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইবে। তিনি আরও বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর কারণেই পাকিস্তান এখনও বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে পারেনি। নিজ দেশের সরকারকে প্রশ্ন করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধকালিন গণহত্যার স্বাধীন তদন্তে কেন এত ভয় পাকিস্তানের? মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন মৃত্যুর ২ বছর আগেও। তার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখে পেয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি।

ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বাবার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা নেন আসমা জাহাঙ্গীর

নারী-শিশু-সংখ্যালঘুসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষে সোচ্চার ছিলেন আসমা জাহাঙ্গীর। ছিলেন ব্লাসফেমিরও কড়া সমালোচক। ছিলেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। দক্ষিণ এশিয়ায় মানবাধিকার ফোরামে পালন করেছেন সহ-সভাপতির দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশনেও একই দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

২০১৩ সালে বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন আসমা জাহাঙ্গীর। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল। আসমা জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এ ব্যাপারে। তিনি তখন মন্তব্য করেছিলেন, সেনাবাহিনীর কারণেই পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে পারেনি। বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিকে জিম্মি করে রেখেছে সেনাবাহিনী। আমার ধারণা, সরকার সেনাবাহিনীকে ভয় পায়।’ তিনি বলেছিলেন, ’আমি চাই সেই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’

২০১৫ সালে আসমা ডাক পেয়েছিলেন জাতিসংঘ থেকে। একাত্তরের পাকিস্তানি গণহত্যা তদন্তে এক স্বাধীন তদন্ত কমিশনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি। সে সময় ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন থেকে আসমা জাহাঙ্গীরের কাছে এই গণহত্যার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের ওই গণহত্যার কথা অস্বীকার করার প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন: ‘কেন এই অস্বীকার? জাতিসংঘ স্বাধীন কমিশন দিয়ে তদন্ত করালে সমস্যাটা কোথায়? সত্য উদঘাটনে এটা জরুরি ও সম্ভবত এটাই গণহত্যার অভিযোগ নিষ্পত্তির উপায়’।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় ‘উদ্বেগ ও বেদনা’ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল,  “সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করলাম।” মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে এ নিয়ে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার’ কথাও বলা হয়েছিল ওই বিবৃতিতে।

পাকিস্তান সরকারের এই ভূমিকাকে ‘উতলা’ আচরণ ও ‘দ্বৈতনীতি’ আখ্যা দিয়েছিলেন আসমা। তাকে উদ্ধৃত করে ডন ওই সময় লিখেছিল, “সরকার এই আচরণের মাধ্যমে শুধু এটাই প্রমাণ করলো যে, বাংলাদেশে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তারা আসলে ছিল রাজনৈতিক চর, পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষায় তারা কাজ করছিল।”  সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, ইসলামাবাদের আচরণে এমন ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে, নিজেদের নাগরিকের চেয়ে বাংলাদেশের বিরোধী দলের সদস্যদের জন্য তাদের ‘ভালোবাসা অনেক বেশি’।  

আসমা  জাহাঙ্গীরের বাবা মালিক গোলাম জিলানিও ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি একাত্তরের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবিতে জেনারেল ইয়াহিয়াকে খোলা চিঠি লিখেছিলেন। এজন্য তাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল।

নিজেদের জীবনকে  হুমকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে নির্যাতিত বাঙালির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে মৈত্রী সম্মাননা দেওয়া হয়।  ওই বছর ২৪ মার্চ ঢাকা এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বাবার পক্ষে সম্মাননা নেন আসমা জাহাঙ্গীর।

 

 

/এএ/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা