X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিম-মুন বৈঠক: বিশ্বের নজর সীমান্তবর্তী অঞ্চল পানমুনজামে

ফাহমিদা উর্ণি
২৬ এপ্রিল ২০১৮, ২০:০৩আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০১৮, ০৮:২৭
image

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন এর মধ্যকার বিরল বৈঠকটি সাম্প্রতিক সময়ের প্রধানতম আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। কোরীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে তাই দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল পানমুনজামের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব। এর আগে গত ৬৫ বছরে দুই কোরিয়ার নেতারা দুইবার আলোচনায় বসেছিলেন ঠিকই; কিন্তু দুইবারই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল পিয়ংইয়ং এ। কোরীয় যুদ্ধ অবসানের ৬৫ বছর পর এবারই প্রথম কোনও উত্তর কোরীয় রাষ্ট্রনায়ক আলোচনার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় যাচ্ছেন। ব্যতিক্রমী এ বৈঠকের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে তাই কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কিম ও মুনের মধ্যে আলোচনায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কিংবা পুনরেকত্রীকরণ প্রশ্নে বড় ধরনের কোনও সাফল্য আসবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনের মধ্যকার সম্ভাব্য বৈঠককে সামনে রেখে কিম-মুন সম্মেলনের দিকে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্রও। মুন প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, কিমের সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই মুনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। 
কিম-মুন বৈঠক: বিশ্বের নজর সীমান্তবর্তী অঞ্চল পানমুনজামে

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন হলেন দেশটির প্রতিষ্ঠাতার দৌহিত্র। আর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন উত্তর কোরীয় শরণার্থীর সন্তান। উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় শরণার্থী হয়ে এসেছিলেন তার বাবা। শুক্রবার এ দুই ব্যক্তি (মুন ও কিম) পরস্পরের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসছেন। কেবল তাই নয়, ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধে বিরতির পর এটি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। কিমের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দলে থাকবেন আরও ৯ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে রয়েছেন: কিমের বোন কিম ইয়ো-জং, দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলাকারী সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কিম ইয়ং চোল এবং জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা শীর্ষ কর্মকর্তা চোয়ে হোয়ি। এদের তিনজনই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে যোগ দিতে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়েছিলেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার ডি ফ্যাক্টো সীমান্তরেখা পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রাখবেন কিম। ১৯৫০-১৯৫৩ সাল পর্যন্ত চলা কোরীয় যুদ্ধের অবসানে পানমুনজামে যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করেছিল দুই পক্ষ। একে তাই নিরপেক্ষ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৫৩ এর যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পর থেকে আন্তঃকোরীয় আলোচনার জন্য এ স্থানটিকে বেছে নেওয়া হয়ে থাকে। উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতাদের বৈঠককে সামনে রেখে নানা শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ দেখা গেছে। ডিমিলিটারাইজড জোনে লাউডস্পিকারে প্রপাগান্ডা ছড়ানো বন্ধ রাখা হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক মহড়া আনুপাতিক হারে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ট্রাম্প গত বছর  কিমকে ‘ছোটখাটো রকেট মানব’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন; সে তিনিই সম্প্রতি কিমকে ‘খুব খোলামেলা ও সম্মানিত ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে কিম কোনও প্রশংসার বাণী না ছুড়লেও হোয়াইট হাউসকে উত্যক্ত করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।

উত্তর কোরিয়া থেকে আসা ইতিবাচক সংকেতগুলোর বেশিরভাগই কিম সরকারের কাছ থেকে সরাসরি আসেনি, বরং এগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। বৈঠককে সামনে রেখে বুধবার (২৫ এপ্রিল) উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া এ দুই দেশের নেতারাই রুদ্ধ-দ্বার কক্ষের ভেতরে দুই ঘণ্টা ধরে অনুশীলন করেছেন।

কিম ও মুন
শুক্রবার পানমুনজামের ডিমিলিটারাইজড জোনের প্রাণকেন্দ্রে পিস হাউসে মিলিত হবেন কিম ও মুন। কিন্তু পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের মতো জটিল ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য হাতে গোনা কয়েক ঘণ্টা সময় পাবেন তারা। দিনের আলোচনাকে একটি আনুষ্ঠানিক যৌথ ঘোষণায় পরিণত করাটা ‘কঠিন’ হবে বলে মনে করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রধান সচিব ইম জং সিওক। কিম ও মুনের মধ্যে আলোচনায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কিংবা পুনরেকত্রীকরণ প্রশ্নে বড় ধরনের কোনও সাফল্য আসবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরাও। 

মার্কিন সাময়িকী টাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোরিয়ান পেনিনসুলা ফিউচার ফোরামের জ্যেষ্ঠ গবেষক দুয়েওন কিম বলেন, ‘মুনের চ্যালেঞ্জ হবে একটি যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে সম্মত হওয়া যা ভালো বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতার অনুভূতিকে ছাপিয়ে আরও কিছু মনে হবে।’ ইয়োনসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জন ডেলুরি টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণকে আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য দেওয়া হলেও এ বৈঠক একটি ‘কার্যনির্বাহী সম্মেলন’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এখানে উত্তেজনা কমাতে সম্ভাব্য পদক্ষেপ কী হতে পারে এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ শেষ করা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ডেলুরি মনে করেন, এ বৈঠকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আরও কিছু পরিবারের মধ্যে পুনর্মিলন, পর্যটন খাত এবং সাংস্কৃতিক পর্যায়ে আদান-প্রদান নিয়ে আলোচনা হতে পারে।    

মুন নিজেও এ বৈঠকে শান্তি ঘোষণার সম্ভাবনার ওপর তেমন একটা জোর দিচ্ছেন না। সম্প্রতি তিনি স্বীকার করেছেন আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তি চুক্তি করতে হলে কোরীয় যুদ্ধে অংশ নেওয়া অন্য পক্ষগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অনুমোদন লাগবে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যুদ্ধ শেষ করতে’ মুন ও কিম অপেক্ষাকৃত কম উচ্চাভিলাষী একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেন। এটি চুক্তিতে পৌঁছানোর খুব কাছাকাছি একটি পদক্ষেপ। ২০০০ ও ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী আন্তঃকোরীয় সম্মেলনে একই রকমের পদক্ষেপ দেখা গিয়েছিল। কোরিয়ান পেনিনসুলা ফিউচার ফোরামের জ্যেষ্ঠ গবেষক দুয়েওন কিম মনে করেন ‘পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রশ্নে মূল খেলাটা হবে ট্রাম্প ও কিমের বৈঠকে।’ আর ইয়োনসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জন ডেলুরি বলেন, ‘মার্কিনিরা এ বৈঠক থেকে কোনও দৈববাণী আশা করছে না, কিন্তু কিম যে আলোচনাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন তার নমুনা দেখতে চাইছেন তারা।’

/বিএ/
সম্পর্কিত
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বশেষ খবর
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত