X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ বছরের ব্যবধানে একই রক্তাক্ত পতাকা হাতে ফিলিস্তিনি হত্যার প্রতিবাদ

বিদেশ ডেস্ক
১৯ মে ২০১৮, ২২:২৫আপডেট : ২০ মে ২০১৮, ০১:০৩

গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে। ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞকে বরাবর সমর্থন দিয়ে আসা মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধেও স্বর তুলেছেন সেখানে সমবেতরা। নিউ ইয়র্ক ফর প্যালেস্টাইন কোয়ালিশন নামে একটি গ্রুপের শুক্রবারের ওই আয়োজনে আট শতাধিক মানুষ সমবেত হয়ে দাবি তুলেছেন ইসরায়েলি নৃশংসতার স্বাধীন তদন্তের। এদের মধ্যে ছিলেন সত্তোরোর্ধ সত্তোরোর্ধ মার্কিন নাগরিক আইরিস টাটিয়ান। জেনিন শরণার্থী শিবিরের হামলার পর যেমন করে ইসরায়েল-আমেরিকার রক্তাক্ত পতাকা হাতে প্রতিবাদে নেমেছিলেন, ১৫ বছরের ব্যবধানে একই পতাকা হাতে তিনি টাইম স্কয়ারের প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই প্রতিবাদের খবর জানিয়েছে। টাইমস স্কয়ারে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনিদের সদ্য সমাপ্ত ভূমি দিবসের ৬ সপ্তাহের গ্রেট রিটার্ন মার্চ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে শতাধিক ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। শুধু সোমবারের (১৪ মে) বিক্ষোভেই ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত ও দুই হাজারেরও বেশি আহত হন। এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয়েছিলেন সত্তোরোর্ধ মার্কিন নাগরিক আইরিস টাটিয়ান। ওই বিক্ষেভে দাঁড়িয়ে তিনি স্মৃতি থেকে ভাসিয়ে তোলেন প্রথম প্রতিবাদের দৃশ্যমালা। ২০০২ সালে জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বন্দুকধারীদের হামলার পর তখনকার ষাটোর্ধ এই নারী পতাকায় রং ছিটিয়েছিলেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন আমেরিকার ছোট আকারের একটি পতাকার সঙ্গে ইসরায়েলি পতাকা সেলাই করে লাল রং ছিটিয়েছিলাম। যাতে করে দুটি পতাকাকেই রক্তে প্লাবিত মনে হয়।
১৫ বছরের ব্যবধানে একই রক্তাক্ত পতাকা হাতে ফিলিস্তিনি হত্যার প্রতিবাদ

জেনিন বলেন, ইসরায়েলি নৃশংসতা ও তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা দেখাতেই এমনটি করেছিলেন তিনি। এত বছর পরে এসেও ফিলিস্তিনিদের জন্য তাকে এটি আবার করতে হবে তা আশা করেননি তিনি।

আইরিস টাটিয়ান বলেন, এটা ছিল ১৬ বছর আগের ঘটনা, আর কিছুই বদলায়নি। আমি এখনও বিক্ষোভের জন্য একই  পতাকা বয়ে চলেছি। তিনি বলেন, আর হ্যাঁ আমি এই পতাকা বহন করতে গিয়ে ক্লান্ত, তবে ফিলিস্তিনিদের কথা ভাবুন। তাদের জন্য এটা ৭০ বছর। কল্পনা করুন তাদের কি রকম লাগে।

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে প্লাকার্ড হাতে রাজপথে মার্কিন নাগরিক

সোমবার ইসরায়েলের চালানো এই হত্যাকাণ্ডকে বর্ননা করতে গিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধার জেইদ রা’দ আল হুসেন ‘‌সর্বাত্মক অনুপাতহীনতা’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি এই ঘটনার স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছেন।

নিউ ইয়র্ক ফর প্যালেস্টাইন কোয়ালিশনের এক মুখপাত্র নৌরা ফারুক আল জাজিরাকে বলেছেন, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপকভাবে তাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে দেওয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে তারা এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছেন। গত ১৪ মে যখন গাজা সীমান্তে বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গুলি ছুঁড়ছিল তার অদূরেই জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধন করছিলে ট্রাম্প প্রশাসনের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নৌরা ফারুক বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের প্রতিক্রিয়া জানানোও এই বিক্ষোভের লক্ষ্য।

বড় আকারে ফিলিস্তিনি পতাকা, প্লাকার্ড নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস স্কয়ারের ঝলসানো আলোর নিচেটা বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে উচ্চারিত স্লোগানে মুখর করে তোলে। ওই বিক্ষোভে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পুঁজিবাদ, বর্ণবাদ, বৈষম্য আর অন্যায্যতার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় কমিউনিটি নেতা, শিক্ষাবিদ ও একটিভিস্টরা। শিক্ষক ও শিল্পী সেলিনে রর্দিগেজ আল জাজিরাকে বলেন, তিনি এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন যাতে করে ফিলিস্তিন ইস্যুকে অদৃশ্য করে ফেলা না যায়।

তিনি বলেন ২০১৮ সালেও উপনিবেশবাদের অস্তিত্ব থাকাটা ভয়ানক। ফিলিস্তিনিদের স্বীকৃতি পাওয়াটা দীর্ঘবিলম্বিত আর তাদের সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া। ৬৭ বছর বয়সী  মার্কিন নাগরিক মার্শাল ডগলাস বলেন, একটি নিপীড়ক দেশ হিসেবে ইসরায়েলের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। এই সপ্তাহের শুরুতে যা ঘটেছে তাতে দেখা গেছে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের মত প্রকাশের যে কোনও উপায় বন্ধ করতে চায়। এটা সম্পূর্ণ অন্যায্য। এর শাস্তি হওয়া উচিত।

শুক্রবার টাইমস স্কয়ারের এই বিক্ষোভ ছাড়াও গাজার সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে নিউ ইয়র্কে একটিভিস্টরা বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ আয়োজন করেছেন। ‘ইফ নট নাউ’ নামে একটি আন্দোলন থেকে মার্কিন ইহুদিরা ফিলিস্তিনি ভূমি দখদারিত্বে ইসরায়েলকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। শুক্রবার রাতেও তারা এই দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। মার্কিন ইহুদিদের এই গ্রুপটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনি হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশ করেত তারা জড়ো হয়েছেন। এছাড়া এটাও তারা পরিস্কার করতে চান যে ভবিষ্যত ইহুদি প্রজন্ম ইসরায়েলি নৃশংসতা, প্রাণঘাতি হত্যাকাণ্ড ও আরও দখলদারিত্বকে প্রত্যাখান করবে।

ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে মার্কিন ইহুদিদের একটি গ্রুপ

 

ইসরায়েলের সমর্থনে ছোট মিছিল

আট শতাধিক মানুষ যখন ব্রডওয়ের রাজপথে ইসরায়েল বিরোধি বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল তখন ২০ জন মানুষের একটি মিছিল ইসরায়েলের সমর্থনে দাঁড়িয়েছিল। কেউ কেউ ফিলিস্তিনি সমর্থকদের ‘হামাস সহানুভূতিশীল’, ‘ইহুদিবিদ্বেষি’, বলে অভিহিত করেন। কেউ কেউ ‘জেরুজালেম ইহুদিদের’ বলেও স্লোগান দেয়।

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করলো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বশেষ খবর
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী