দক্ষিণ সুদানের একটি সামরিক আদালত বৃহস্পতিবার ১০ সেনা সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। ২০১৬ সালে একটি হোটেলে হামলা চালিয়ে সেখানে অবস্থানরত বিদেশি ত্রাণকর্মীদের হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে এই সাজা দেওয়া হয়। সামরিক আদালত ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারীদের চার হাজার ডলার করে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়েছে দেশটির সরকারের প্রতি। লুটপাটের শিকার হওয়ায় হোটেল মালিককেও ক্ষতিপূরণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। হামলায় একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছিলেন। আদালত তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫১টি গৃহপালিত পশু দেওয়ার আদেশ দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ধর্ষণের শিকার নারীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ চার হাজার ডলার করে দেওয়ার আদেশকে ‘একটি অপমান’ আখ্যা দিয়েছেন ভুক্তভোগীদের মুখপাত্র। ধর্ষণের শিকার ওই নারীদের মধ্যে আমেরিকা, ইতালি ও নেদারল্যান্ডের নাগরিক রয়েছেন। হামলায় একজন আমেরিকান নাগরিক পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
২০১৬ সালের ১১ জুলাই যুবাতে অবস্থিত টেরেইন হোটেলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা হামলা চালিয়েছিল। সেখানে তারা হত্যা ধর্ষণের পাশাপাশি বিদেশি ত্রাণ কর্মীদের ধর্ষণও করে। প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচারের বাহিনীর মধ্যে তিন দিন ব্যাপী ব্যাপী সংগঠিত যুদ্ধে জয়লাভ করে কিরের অনুগত বাহিনী। ওই যুদ্ধ জয়ের পরই তারা হামলা চালায় হোটেলে। এসময় হোটেলে অবস্থানরত ব্যক্তিরা মাইলখানেক দূরে মোতায়েন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর কাছে সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করে। কিন্তু জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে দক্ষিণ সুদানে মোতায়েন করা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রধান কেনিয়ার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জনসন মোগোয়া কিমানি ওনদেকিকে বরখাস্ত করে হয়েছে।
যুবাতে অবস্থিত টেরেইন হোটেলের ব্যবস্থাপক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, ‘১১ জুলাই বিকালে ৫০ থেকে ১০০ জন সেনা সদস্য হামলা চালিয়েছিল। হোটেলে ঢুকে তারা প্রায় ঘন্টাখানেক লুটপাট চালায়। তারা হোটেলে অবস্থানকারী ত্রাণ সংস্থায় কর্মরত পাঁচ জন নারীকে ধর্ষণ করে। সোয়া ছয়টার দিকে সাংবাদিক জন গাটলুয়াককে তারা গুলি করে হত্যা করে। একজন আমেরিকান নাগরিককেও পায়ে গুলি করা হয়।’
বৃহস্পতিবার ঘোষিত রায়ে হামলায় জড়িত সেনা সদস্যদের সাত বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের একজন বেকসুর খালাস পেয়েছেন। রয়টার্স লিখেছে, এই বিচারের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। এই বিচার প্রক্রিয়াকে সেনাবাহিনীতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের আন্তরিকতার পরীক্ষা হিসেবে দেখছিলেন পর্যবেক্ষকরা। ভুক্তভোগীরা এই সাজাকে যথেষ্ট মনে করেন না। ধর্ষণের শিকার নারীদের মুখপাত্র ইসা মুজামিল বলেছেন, ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রত্যেককে যে চার হাজার করে ডলার দিতে বলা হয়েছে তা ‘অপমানজনক।’ তবে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, রায়ের মধ্যে দিয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অন্তত প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে।
স্বাধীন হওয়ার মাত্র দুই বছরের মাথায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় দক্ষিণ সুদানে। ২০১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া ওই গৃহযুদ্ধ শুরু করেছিল প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের অনুগত বাহিনী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচারের অনুগত বাহিনী। এরপর বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেক উপদল তৈরি হয়েছে। গৃহযুদ্ধে হাজারে হাজারে মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, দেশটিতে চলছে তীব্র খাদ্য সঙ্কট। সেখানে এখন শতাধিক ত্রাণ সংস্থা কাজ করছে।