নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার মতে, ইসলামি ব্যাংকিং পরিচালনায় বর্তমান থাকা নীতিমালা মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০০৭-২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পরবর্তী সময়ে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে যেসব সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রচলিত বিধানের। রবিবার বাহরাইনভিত্তিক আর্থিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘জেনারেল কাউন্সিল ফর ইসলামিক ব্যাংকস অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস’ (সিআইবিএএফআই) আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের জন্য নির্ধারিত বাসেল থ্রি স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের তাগাদা দিয়েছে ইসলামি ব্যাংক ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মূলত ভূ-সম্পত্তি কেন্দ্রিক আর্থিক কর্মকাণ্ডে তারল্য সংক্রান্ত ঝুঁকি ও একক ঋণগ্রহীতাকে দেয় ঋণের সর্বোচ্চ সীমা সংক্রান্ত বিষয়ে সিআইবিএএফআইয়ের বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়েছে।
ইসলামি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক কর্মকাণ্ডে ভূসম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় এখনও পুরাতন বাসেল টু স্ট্যান্ডার্ড বা বাসেল থ্রি স্ট্যান্ডার্ডের প্রথম দিককার সংস্করণ মেনে চলা হচ্ছে। অথচ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাসেল থ্রি স্ট্যান্ডার্ডের নতুন সংস্করণ চূড়ান্ত করে হয়েছে। নতুন ওই সংস্করণে একক ঋণগ্রহীতাকে দেয় ঋণের সর্বোচ্চ সীমা এবং সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য নির্ধারণে স্বাধীন নিরীক্ষার বিধান রাখা হয়েছে।
সিআইবিএএফআই জানিয়েছে, ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেরই বিনিয়োগ ও অন্যান্য আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ভূ-সম্পত্তি ব্যাপক মাত্রায় জড়িয়ে রয়েছে। ‘সহজে বিক্রি করে অর্থ পাওয়া যায় না’ অর্থে ‘ইললিকুইড’ হওয়া এবং হাত বদল হতে থাকার বৈশিষ্ট্য থাকায় রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত আর্থিক কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাসেল থ্রি স্ট্যান্ডার্ডের সর্বশেষ নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি। তাদের ভাষ্য, ‘যদি এই সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে বিশ্বের ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেকোনও আর্থিক বিপর্যয়ের সময়ে অনেক বড় ধাক্কা খাবে।’
ইসলামি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব জুড়ে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের ভূ-সম্পত্তি রয়েছে। সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে ইসলামি ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। বৃহৎ ইসলামি ব্যাংকগুলোর প্রায় অর্ধেক এবং ছোট ইসলামি ব্যাংকগুলোর প্রায় দুই তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রে ভূ-সম্পত্তি কেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের ঝুঁকির মাত্রা ‘খুব বেশি থেকে অত্যন্ত বেশি।’ ‘জেনারেল কাউন্সিল ফর ইসলামিক ব্যাংকস অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের’ প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, বাহরাইন, জর্ডান ও কুয়েতের ইসলামি ব্যাংকগুলোর আর্থিক কর্মকাণ্ডের ২৫ শতাংশই ভূ-সম্পত্তি কেন্দ্রিক।
সংস্থাটি আরও বলেছে, জাতীয় আর্থিক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও বাসেল থ্রি স্ট্যান্ডার্ড দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। তাছাড়া মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ইসলামি ফাইনানশিয়াল সার্ভিস বোর্ডেরও’ উচিত হবে নূন্যতম তারল্য সংক্রান্ত বিধানের সংস্কার করা। মালয়েশিয়ার ইসলামি ব্যাংকিংয়ের আইএফএসবি-১৫ নামে পরিচিত নীতিমালা সংস্কার করে ভূ-সম্পত্তি সংক্রান্ত আর্থিক কর্মকাণ্ডে ঋণ গ্রহীতাকে দেয় ঋণের সীমা পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।