X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রজনন গবেষণায় শ্বেতাঙ্গ পক্ষপাত, চিকিৎসা সেবায় তীব্র বৈষম্যের আশঙ্কা

বিদেশ ডেস্ক
০৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:১৩আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৫০

প্রজনন শাস্ত্রের গবেষণায় শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় জনগণের প্রতি ব্যাপক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা। এ সংক্রান্ত গবেষণায় নমুনা হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ মানুষের শরীর ব্যবহার করা হয়। তবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, শ্বেতাঙ্গ শরীর ব্যবহার করে সম্পন্ন করা গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হলে তাতে অর্থপূর্ণ ফল নাও আসতে পারে। সামনের দিনগুলোতে প্রজননশাস্ত্রে ক্লিনিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন বিস্তৃত হলে এই সমস্যা আরও তীব্র হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, গবেষণাকর্মের এই সীমাবদ্ধতার কারণে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা চিকিৎসা সুবিধা হারাতে বসেছে। তারা জানিয়েছেন, অ-শ্বেতাঙ্গ আর ইউরোপের বাইরের মানুষদের শরীরকে গবেষণাকর্মের নমুনা হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ে উৎসাহী হয় না বিনিয়োগকারীরা। পরিস্থিতি উত্তোরণে গবেষণাকর্মে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে।

প্রজনন গবেষণায় শ্বেতাঙ্গ পক্ষপাত, চিকিৎসা সেবায় তীব্র বৈষম্যের আশঙ্কা

সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক তালিকা থেকে পলিজেনিক স্কোর সংক্রান্ত তিন হাজারের বেশি গবেষণা পেপার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,  এসব গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনার ৭৮ শতাংশই ইউরোপীয় নৃ-গোষ্ঠীর। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তা ৭৬ শতাংশের বেশি ছিল। পূর্ব-এশীয় নৃ-গোষ্ঠীর নমুনা রয়েছে ৯ শতাংশ। অ-ইউরোপীয় ও অ-এশীয় নৃগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা ৪ শতাংশেরও কম। সাইক্রিয়াট্রিক জেনেটিকস জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণা প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে বিষয়টিতে নজর ফেরানোর চেষ্টা করেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রজনন বিদ্যা বিশেষজ্ঞ ও মনরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডেভিড কার্টিস। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল-এমআরসি ও চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলকাম ট্রাস্ট’কে দেওয়া এক চিঠিতে কার্টিস বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই তীব্র যে, ব্রিটিশ চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্ণবাদী বলে অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

কার্টিসের চিঠির জবাবে একই মাসে  এমআরসি’র প্রধান নির্বাহী জন সাভিল দাবি করেছেন, “ইতোমধ্যে সমন্বয়মূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে আমি মনে করি না, এসব পদক্ষেপ ‘সমতার প্রশ্ন’কে মোকাবেলা করে গবেষণার পক্ষপাত নিয়ে বিদ্যমান উদ্বেগ কমাতে সহায়ক হবে।” সাভিল জানিয়েছেন, প্রজনন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সংখ্যালঘু ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবায় কাজে লাগাতে যে ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের পাশাপাশি অন্যদের শরীরও নমুনা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা দরকার; সে বিষয়ে তার দেশের শীর্ষ বিজ্ঞানীরা একমত। তবে এ ব্যাপারে অর্থদাতাদের ভূমিকা অসন্তোষজনক।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজননবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ও কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওজেনেটিকস সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর এসকে উইলারস্লেভ অভিযোগ করেন, অর্থদাতা সংস্থাগুলো অ-ইউরোপীয় জাতির মানুষের নমুনা যোগাড় করার জন্য বিনিয়োগ করতে অনাগ্রহী। উইলারস্লেভ বলেন, তিনি অনেক ব্যয় করে ইতোমধ্যে যোগাড় করা নমুনা বিশ্লেষণের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে তহবিল যোগানদাতাদের খুব বেশি আগ্রহী মনে হয়নি।’ ডেনমার্কের আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজনন বিষয় রোগ নিয়ে কাজ করা পরিসংখ্যানবিদ ডগ স্পিড বলেন, নিশ্চিতভাবে ইউরোপীয় নমুনার ব্যাপারে একটি পক্ষপাত রয়েছে। ইউরোপীয় জনগণকে সবার আগে সেবার দেওয়ার প্রবণতার কারণেই এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

প্রজনন গবেষণায় হাজার হাজার জিনের অবদান একত্রিত করে কোনও ব্যক্তির একটি রোগ হওয়ার ঝুঁকি হিসাব করা হয়। এই পরীক্ষায় সিজোফ্রেনিয়া অথবা উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার বিষয়ে অনুমান করা যায়। এক্ষেত্রে অনেকগুলো জিন কাজ করে থাকে। সাম্প্রতিক গবেষণায় কার্টিস দেখিয়েছেন যে, সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি অনুমান করার জন্য সাধারণভাবে ব্যবহৃত জেনেটিক পরীক্ষায় যে স্কোর দেওয়া হয় তাতে ইউরোপীয় নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের তুলনায় আফ্রিকান বংশোদ্ভুত মানুষের স্কোর প্রায় ১০ গুণ বেশি থাকে। এর কারণ এই নয় যে, আফ্রিকান মানুষের সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আসল কারণ হলো জেনেটিক মাত্রাগুলো পুরোপুরিভাবে ইউরোপীয় নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের শরীর গবেষণা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। কার্টিস বলেন,  এসব গবেষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে একজন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশের ডায়বেটিস অথবা সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার ঝুঁকি নিরূপনের জন্য পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু ভিন্ন কোনও নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের জন্য পরীক্ষা করে সঠিক ফলাফল দেওয়া সম্ভব নয়।

প্রজনন গবেষণায় শ্বেতাঙ্গ পক্ষপাত, চিকিৎসা সেবায় তীব্র বৈষম্যের আশঙ্কা

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ লাখ ব্যক্তির জিন সংগৃহীত রাখা যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাংকেও নৃ-তাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের অবস্থান প্রতিনিধিত্বমূলক নয়। ২০১১ সালের জনসংখ্যার হিসাবের সঙ্গে তুলনা করলে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর  প্রতিনিধিত্ব এক-তৃতীয়াংশ। ভারতীয় ও চীনা বংশোদ্ভুতদের বেলায়ও প্রাপ্য প্রতিনিধিত্বের এক-তৃতীয়াংশ সেখানে উপস্থিত রয়েছে। এছাড়া জনসংখ্যা অনুপাতে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মানুষের জিনের প্রতিনিধিত্ব যা হওয়ার কথা ছিল তার অর্ধেকেরও কম সেখানে রয়েছে। এই বায়ো ব্যাংকের ৯৪.৬ শতাংশ নমুনাই শেতাঙ্গ ব্রিটিশদের। অথচ সেখানে তাদের জনসংখ্যার হার ৯১.৩ শতাংশ। কার্টিসের দাবির প্রতিক্রিয়ায় সাভিল ব্রিটিশ বায়োব্যাংকের নৃ-তাত্ত্বিক বণ্টনকে ব্রিটিশ জনগণের খুব কাছাকাছি হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, উন্মুক্ত সম্পদ হওয়ার কারণে অর্থদাতাদের পরীক্ষামূলক পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করার কোনও অবস্থান নেই। বিশেষ করে যেখানে সমজাতীয় দলের প্রয়োজন পড়ে।

গবেষণার জন্য নৃ-তাত্ত্বিকভাবে সমজাতীয় দলের মধ্য থেকে একটিকে বেছে নেওয়া বৈজ্ঞানিকভাবে বৈধ হতে পারে। এটা আগ্রহের জিনকে বেছে নেওয়ার জন্য সহজ উপায়। কিন্তু কার্টিসসহ অন্যরা মনে করেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি খুব কম অনুসৃত হয় অথবা সমতার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয় না। কার্টিস বলেন, ‘এটা সামগ্রিকভাবে আমার কাছে অন্যায্য বলে মনে হয়। কারণ নৃ-তাত্ত্বিক সংখ্যালঘুরাও নিজেদের ট্যাক্স দেওয়ার মাধ্যমে এই গবেষণায় অর্থায়ন করছেন। কিন্তু তারা এ থেকে পূর্ণ সুবিধা পাচ্ছেন না।’

ওয়েলকাম ট্রাস্টের বিজ্ঞান পরিচালক জিম স্মিথ বলেন, ‘আমরা ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যরা প্রফেসর কার্টিসের উত্থাপিত ইস্যুটির ব্যাপারে খুবই সচেতন আর আমরা একমত যে এটা গুরুত্বপূর্ণ।’ স্মিথ বলেন, ওয়েলকাম এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে ইস্ট লন্ডন জিনস অ্যান্ড হেলথ ও বর্ন ইন ব্র্যাডফোর্ড কর্মসূচি এবং হিউম্যান হেরেডিটি অ্যান্ড হেলথ ইন আফ্রিকা ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, কিছু কিছু সম্প্রদায়ের জেনেটিক ডাটার বেজলাইনের অভাবে এটা স্বাস্থ্য বৈষ্যমের দিকে যেতে পারে।

/আরএ/বিএ/
সম্পর্কিত
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!