নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির লেখা সর্বশেষ কলামটি প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। নিখোঁজ হওয়ার আগে লেখা ওই কলামে আরব বিশ্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে সোচ্চার হতে দেখা গেছে তাকে। বুধবার (১৭ অক্টোবর) কলামটি প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি গত ২ অক্টোবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে তুরস্কের ইস্তানবুল শহরের সৌদি কন্স্যুলেটে প্রবেশের পর আর বের হননি। সৌদি আরব অবশ্য বলছে, খাশোগি কন্স্যুলেট ভবন থেকে বের হয়ে গেছেন। তবে তুরস্কের পক্ষ থেকে এর প্রমাণ চাওয়া হলে তা সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে রিয়াদ। তুরস্কের দাবি, তাদের তদন্তকারীদের হাতে নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে কন্স্যুলেট ভবনের ভেতরে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। গত সপ্তাহে তুরস্কে আসা ১৫ সদস্যের একটি সৌদি দল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ আঙ্কারার।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জামাল খাশোগি সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার পরিকল্পনার বিরোধী তিনি। একসময় সংবাদপত্র আল ওয়াতানের সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন খাশোগি। কাজ করেছেন একটি সৌদি টেলিভিশন চ্যানেলেও। খাশোগি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করতেন। নিখোঁজ হওয়ার আগে তার লেখা সর্বশেষ কলামটি বুধবার প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, খাশোগি আর নিরাপদে ফিরে আসছেন না, সে কথাটি মেনে নিয়ে কলামটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
সংবাদমাধ্যমটির মতামত প্রতিবেদন বিষয়ক সম্পাদক কারেন আতিয়াহ বলেন, কলামটিতে ‘আরব বিশ্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য খাশোগির আকাঙ্ক্ষা নিখুঁতভাবে প্রকাশ পেয়েছে।’ কারেন মনে করেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তাকে (খাশোগিকে) জীবন দিতে হয়েছে।
আতিয়াহ জানান, খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার পরদিন তার কাছে কলামটি জমা দেওয়া হয়। তিনি এটি প্রকাশে কিছু দিন সময় নিয়েছিলেন। কারণ, তার আশা ছিল খাশোগি ফিরে আসবেন এবং দুইজন একসঙ্গে বসে কলামটি সম্পাদনা করতে পারবেন। তবে সে আশা ভেঙে যাওয়ায় কলামটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সর্বশেষ কলামে খাশোগি আরব বিশ্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। তার দাবি, এর মাধ্যমে জনগণকে তথ্য দেওয়া হয় না অথবা ভুল তথ্য দেওয়া হয়। তিনি লিখেছেন, ‘আরব বিশ্বের জন্য পুরনো বহুজাতিক সংবাদমাধ্যমের একটি আধুনিক সংস্করণ প্রয়োজন, এতে জনগণ বৈশ্বিক ঘটনাবলি সম্পর্কে জানতে পারবেন। আরও জরুরি বিষয় হলো, আরব কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করার জন্য আমাদের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে।’
ওই কলামে নিজের সহকর্মী ও সৌদি লেখক সালেহ আল শেহির প্রসঙ্গ টেনে আনেন খাশোগি। তিনি জানান, সৌদি এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে যায় এমন একটি মন্তব্য করার অভিযোগ এনে সালেহকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খাশোগির অভিযোগ, মিডিয়াকে নীরব করিয়ে অবাধে এসব ধরনের কর্মকাণ্ড চাপা দিতে পারে সরকার।