X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দুই শিবিরেই সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবি

বিদেশ ডেস্ক
২১ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:০৯আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:৫৭
image

অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দুই শিবিরের পক্ষ থেকে ২২ জন সিনেটর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব-সম্বলিত চিঠি পাঠান। হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা প্রশ্নে স্বীকারোক্তির পর রিয়াদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সেই দাবি জোরালো করেছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরবরাহকৃত সৌদি ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন তারা। এমন বাস্তবতায় সুষ্ঠু তদন্ত আর দোষীদের বিচার নিশ্চিতে মার্কিন চাপ জোরালো করার দাবি উঠেছে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দুই শিবিরেই।
ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দুই শিবিরেই সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবি

খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর তার হত্যাকাণ্ড প্রশ্নে সৌদি পাবলিক প্রসিকিউটর শনিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা খাশোগিকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে আনার জন্য সাধারণ নির্দেশনা জারি ছিল। যখন খবর আসে বিয়ের জন্য কিছু নথিপত্র নিতে ২ অক্টোবর খাশোগি ইস্তানবুল কনস্যুলেটে যাবেন তখন জেনারেল আসিরি ১৫ সদস্যের একটি দল পাঠান এ ব্যাপারে তার সঙ্গে আলোচনা করতে। সৌদি কনস্যুলেটে দেখা করতে যাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে খাশোগির লড়াই হয়। আর তাতেই খাশোগির মৃত্যু হয়। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের এই দাবি মানছেন না মার্কিন আইন প্রণেতারা।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতম কৌশলগত মিত্র সৌদি আরব। ইসরায়েলের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির পক্ষেই জোরালো অবস্থান তাদের। সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ১১০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে সেই সম্পর্ক আরও জোরালো করে ট্রাম্প প্রশাসন। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার নামে ট্রাম্প প্রশাসন ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’র মোড়কে যে ফিলিস্তিনবিরোধী পদক্ষেপ নিতে চাইছেন, তা নিয়েও সৌদি দূতিয়ালির ধারাবাহিক খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। খাশোগি নিখোঁজের পর থেকেই তাই ট্রাম্পের সৌদি সখ্যের প্রশ্ন বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশয় দেখা দিয়েছে, এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে কিনা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি আরবের সরবরাহকৃত ব্যাখ্যাকে ‘গ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে সেই সংশয় আরও বাড়িয়ে তোলেন ট্রাম্প। কেবল বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবিরে নয়, খোদ ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক শীর্ষ নেতা এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

১১ জন রিপাবলিকান ও ১১ জন ডেমোক্র্যাট সিনেটরের একটি দল চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে খাশোগি নিখোঁজের ঘটনার দায়ে ঊর্ধ্বতন সৌদি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে একটি চিঠি পাঠান। সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির একজন সদস্য বাদে বাকিরা সবাই ১০ অক্টোবর পাঠানো ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। চিঠিতে ম্যাগনটস্কি আইন অনুযায়ী খাশোগি হত্যাকাণ্ড তদন্ত ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।  ২০১৬ সালে মানবাধিকার হরণ প্রশ্নে প্রণীত এই আইন অনুযায়ী বিশ্বের যেকোন প্রান্তের দোষী সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আইন অনুযায়ী চিঠি পাঠানোর ওই দিন (১০ অক্টোবর) পরবর্তী ১২০ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে।

সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও নিউ জার্সির  ডেমোক্র্যাট সিনেটর রবার্ট মেনেনদেজ সৌদি বিবৃতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা সত্য থেকে অনেক দূরে। আমাদের আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা দরকার।’ তিনি বলেন, বৈশ্বিক ম্যাগনিটস্কি আইন অনুযায়ী চিঠি পাঠিয়ে প্রেসিডেন্টকে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথ করে দিয়েছে কংগ্রেস। এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবশ্যই এই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সিনেটের বৈদেশিক কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সিনেটর বব কর্কারও চান যুক্তরাষ্ট্র খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বৈশ্বিক ম্যাগনিটস্কি আইন প্রয়োগ করে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, তারা তাদের তদন্ত চালিয়ে যেতে পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের নিজস্ব স্বাধীন, বিশ্বাস তদন্ত অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। বৈশ্বিক ম্যাগনিটস্কি আইনের প্রয়োজন অনুযায়ী খাশোগির হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে এই তদন্ত প্রয়োজন।

কেন্টাকির রিপাবলিকান সিনেটর র‍্যান্ড পল বলেছেন, খাশোগির মৃত্যু নিয়ে সৌদি আরববে কঠিন মূল্য দিতে হবে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, আমাদের সামরিক বিক্রি, সহায়তা এবং সাহায্য এখনই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। সৌদি আরবের এই কাজের জন্য কঠিন মূল্য দেওয়া উচিত।

কলোরাডোর রিপাবলিকান সিনেটর মাইক কফম্যান প্রশাসনকে খাশোগির মৃত্যু নিয়ে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। টুইটারে দেওয়া বিবৃতিতে কংগ্রেসের অস্ত্র সেবা কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের দেশকে অবশ্যই আমাদের মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। মিত্রদের কাছে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর দাবি করতে হবে।

ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর গ্যারি কনোল্লি বলেন, শুরু থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে  এই ঘটনা মোকাবিলা করছেন তা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। তিনি বলেন, এটা খুব ভালো হবে না যে আমাদের প্রেসিডেন্ট সত্যিকার অর্থে খুনিদের পক্ষ নিচ্ছে।

কংগ্রেসের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির শীর্ষস্থানীয় সদস্য ও ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর এলিয়ট এল অ্যাঞ্জেল ‘একটি স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত’ চালানোর জন্য আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। 

খাশোগির মৃত্যু নিয়ে সৌদি দাবিকে ‘উদ্ভট’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ফ্লোরিডা সিনেটর মার্কো রুবিও। রিয়াদ কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতার ঘাটতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, খাশোগি হত্যায় সৌদি আরবের গল্প বদলানো পুরনো হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শীষ রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি রুবিও  বলেন তিনিও মার্কিন গোয়েন্দাদের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চান। এছাড়া ম্যাগনিটস্কি আইনের অধীনে দায়ীদের অবরোধের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান। 

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
রাফাহতে হামলার আশঙ্কা, ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান স্থগিত যুক্তরাষ্ট্রের
হামাসের সংশোধিত প্রস্তাব গাজায় যুদ্ধবিরতি অচলাবস্থা ভাঙতে পারে: যুক্তরাষ্ট্র
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
সর্বশেষ খবর
এএফসি নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভারত আছে, নেই বাংলাদেশ
এএফসি নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভারত আছে, নেই বাংলাদেশ
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা