X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেবল থেরেসার প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, ব্রেক্সিটের ভাগ্যও নির্ধারিত হবে আস্থা ভোটে

বিদেশ ডেস্ক
১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:২৭আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:০২
image

নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুথে থাকা থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকছেন কিনা, বুধবার যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা থেকে সে ব্যাপারে রায় দিতে শুরু করবে কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতারা। তবে এই আস্থা ভোটে কেবল প্রধানমন্ত্রীর নয়, ভাগ্য নির্ধারিত হবে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ারও। মে হেরে গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের আলাদা হওয়ার (ব্রেক্সিট) প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২৯ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করা থাকলেও নতুন নেতা নির্বাচন ও তার কাছে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হস্তান্তর করতে গিয়ে পিছিয়ে যেতে পারে ব্রেক্সিট। মে নিজেও এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

থেরেসা মে
ইইউ-এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে আগে থেকেই বিরোধিতার মুখে ছিলেন থেরেসা মে। পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে ১০ ডিসেম্বর এ নিয়ে ভোটাভুটির কথা ছিল। পরাজয়ের আশঙ্কায় চূড়ান্ত মুহূর্তে তা স্থগিত করেন মে। ক্রমশঃ অনাস্থা জোরালো হতে থাকে তার বিরুদ্ধে। দলীয় কমিটিতে জমা হতে থাকে একের পর এক চিঠি। তার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে ‘১৯২২ কমিটি’তে অন্তত ৪৮টি চিঠি জমা হওয়ায় আস্থা ভোটের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি।   

যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় রাতেই (বাংলাদেশ সময় ১৩ ডিসেম্বর, রাত ১২টা) দলীয় নেতৃত্ব প্রশ্নে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। মে-এর পক্ষে যদি ভোটের সংখ্যা বেশি থাকে তবে অন্তত আরও এক বছরের জন্য তার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।  হেরে গেলে থেরেসা মে-কে দলীয় প্রধান হিসেবে পদত্যাগ করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বও বাতিল হয়ে যাবে তার। নেতৃত্ব নির্ধারণের নতুন লড়াইয়েও অংশ নিতে পারবেন না তিনি। তবে নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার আগের ছয় সপ্তাহ তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে দায়িত্ব পেতে নতুন নেতৃত্বে আরও অন্তত ৪২ দিন অপেক্ষা করতে হবে। সেই বিবেচনায় থেরেসা মে সতর্ক করেছেন, আস্থা ভোটের মধ্য দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির দলীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন আসলে যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়তে পারে।

বুধবার এক বিবৃতিতে থেরেসা মে বলেন, ‘২১ জানুয়ারির নির্ধারিত আইনি সময়সীমার মধ্যে নতুন একজন নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করা যাবে না। সেকারণে নেতৃত্ব নির্ধারণ প্রশ্নে নির্বাচন আয়োজনের কারণে ব্রেক্সিট আলোচনার নিয়ন্ত্রণ পার্লামেন্টে বিরোধী এমপিদের কাছে হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন নেতা ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে পুনঃআলোচনা করার সময় পাবে না এবং ২৯ মার্চ নাগাদ আইন পাস করাতে পারবেন না। সুতরাং সবার আগে তার কাজ হবে আর্টিকেল ফিফটি বাতিল করা কিংবা এর সময়সীমা বাড়ানো, ব্রেক্সিট বিলম্বিত করা কিংবা ব্রেক্সিট একেবারে থামিয়ে দেওয়া; অথচ আমাদের জনগণ চায় আমরা ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের কাজ চালিয়ে যাই।’

কনজারভেটিভ পার্টির নেতা জেমস ডুডরিজ ঘোষণা করেছেন, দলীয় সম্মেলনের সময় তিনি তার চিঠিটি জমা দিয়েছেন। আরেক এমপি সিমন ক্লার্ক বলেছেন, গ্রীষ্মকাল শেষ হওয়ার আগেই তিনি তার চিঠিটি প্রত্যাহার করেছিলেন, পরে তা আবারও জমা দিয়েছেন। এছাড়া থেরেসার বিরুদ্ধে আস্থা ভোট চেয়ে চিঠি দেওয়া অন্য এমপিরা হলেন-ইআরজি’র উপ প্রধান মার্ক ফ্রানকোইস, ব্যাকবেঞ্চার এমপি হেনরি স্মিথ, আন্দ্রিয়া জেনকিনস, ফিলিপ ডেভিস, শেরিল মুরে, অ্যানি ম্যারি মরিস এবং সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী জন হুইটিংডেল।

বুধবারের অনাস্থা ভোটের মধ্য দিয়ে থেরেসা মে-কে যদি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাতে হয়, তবে আর্টিকেল ফিফটি’র বাস্তবায়ন বিলম্বিত হবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ আইনমন্ত্রী ডেভিড গাউকে। তার আশঙ্কা, অন্তত ছয় মাসের জন্য পিছিয়ে যাবে ব্রেক্সিট। এ আর্টিকেল ফিফটিতেই মূলত ব্রেক্সিটের সময়সীমা উল্লেখ করা আছে। ডেভিড গাউকে বলেন, ‘যদি আজ রাতে তিনি হেরে যান, তবে যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন, আর্টিকেল ফিফটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হবে। আমি মনে করি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার পক্ষে আমার যে সহকর্মীরা আছেন, তাদের আজ ভোট দেওয়ার সময় এ কথাটা মাথায় রাখা উচিত।’

থেরেসা মে ২
২০১৯ সালের ২৯ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা যুক্তরাজ্যের। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ও কনজারভেটিভ প্রধানহিসেবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিল। ভোট গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ সংখ্যা দুইয়ে নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে ছিলেন থেরেসা মে ও জুনিয়র মন্ত্রী আন্দ্রিয়া লিডসম। তবে লিডসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান এবং মে বিনা বিরোধিতায় নির্বাচিত হন।

কনজারভেটিভ পার্টির নিয়ম অনুযায়ী, দলীয় নেতার বিরুদ্ধে আস্থা ভোট ডাকতে হলে দলটির ১৫ শতাংশ পার্লামেন্ট সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাডি জানিয়েছেন, থেরেসা মে’র বিরুদ্ধে আস্থা ভোট ডাকার জন্য ১৫ শতাংশ এমপির অনুরোধের বাধ্যবাধকতা পূরণ হয়েছে। আস্থা ভোটে জয় পেতে হলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে অন্তত ১৫৮ টোরি এমপি’র সমর্থন পেতে হবে। এরইমধ্যে ২০ জনেরও বেশি ব্যাকবেঞ্চার (যারা সরকার ও বিরোধী দলের কোনও পদে নেই) টোরি এমপি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনার জন্য তার পদত্যাগ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন তারা।

থেরেসা মে’র বিরুদ্ধে অনাস্থা চেয়ে ঠিক কতগুলো চিঠি জমা পড়েছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির ‘কমিটি ১৯২২’ এর সভাপতি গ্রাহাম ব্র্যাডি। বিবিসি রেডিও ফোর-এর টুডে অনুষ্ঠানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিঠি জমা হয়ে গেছে। ব্র্যাডি জানান, মঙ্গলবার রাতে তিনি থেরেসা মে’র সঙ্গে কথা বলেছেন। আস্থা ভোটের ব্যাপারে থেরেসার মনোভাব ‘পেশাদারিত্বপূর্ণ’।

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
সর্বশেষ খবর
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ