পুলিশ ফাঁড়িতে আরাকান আর্মির হামলাকে কারণ দেখিয়ে রাখাইন রাজ্যে বাড়ানো হচ্ছে মোতায়েনকৃত সেনাসদস্যের সংখ্যা। ওই বিদ্রোহী সংগঠনের একজন কমান্ডারকে উদ্ধৃত করে মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর ১০ জানুয়ারি তারিখের এক প্রতিবেদনে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের খবর দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে এশিয়া টাইমস জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে রাখাইনের বিদ্রোহীদের নিশ্চিহ্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে মিয়ানমারের বর্ডার পুলিশের ফাঁড়িতে হামলা চালায় আরাকান আর্মির সদস্যরা। হামলায় ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত ও অপর ৯ জন আহত হয়। এই হামলার আগে থেকেই রাখাইনে বিদ্রোহী সংগঠনটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছিল।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী আরকান আর্মির এক কমান্ডারকে উদ্ধৃত করে জানায়, সরকারি সেনারা আকাশ ও সড়ক পথে রাখাইনে আসছে। ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের ওপর সেনাবাহিনীর হামলায় পুলিশ সহযোগিতা করার কারণে আরাকান আর্মি পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র বুথিয়াডাউংয়ের সে তাউং গ্রামে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি দলের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে জানান, উত্তর রাখাইনে সেনারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহারে গ্রেফতার করছে এবং গ্রামগুলোতে মর্টার ছুড়ছে। একই সঙ্গে সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে গ্রামবাসীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
আরাকান আর্মি জানায়, বিদ্রোহীদের ওপর হামলায় মিয়ানমার সেনারা হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী 'ফোর কাটস' নীতি অবলম্বন করছে বলেও অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির মুখপাত্র।
রাজধানী নেপিদোতে মিয়ানমারের সামরিক প্রধান ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি বিদ্রোহীদের নিশ্চিহ্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। হামলা পরবর্তী নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা জানিয়ে এরই মধ্যে রাজ্যের গ্রামগুলোতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ত্রাণ ও এনজিও’র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সরকারের মুখপাত্র জাউ হতায় আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেছেন। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে আরাকান আর্মি।
রাখাইনে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে হামলার এলাকায় মোতায়েনকৃত সেনাদের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রয়োজনে সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে। সেনাবাহিনী এসব নির্দেশ পালন করছে এবং আরাকান আর্মির বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।
আরসা রাখাইনের মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন। আর আরাকান আর্মির সদস্যরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। উভয় সংগঠনই রাখাইনের বদলে রাজ্যটির পুরনো নাম আরাকান ব্যবহার করছে। ২০০৯ সালে ২৬ জন আরাকানি একত্রিত হয়ে আরাকান আর্মি গড়ে তুলেন। এখন সংগঠনটিতে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কয়েক হাজার যোদ্ধা রয়েছে।