প্রেসিডেন্ট আবদেলআজিজ বুতেফ্লিকার পদত্যাগের দাবিতে আলজেরিয়ার রাজপথে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ কর্মসূচি পালন করে আসছে আন্দোলনকারীরা। তবে শুক্রবার ষষ্ঠ সপ্তাহের মতো রাজধানী আলজিয়ার্সে আয়োজিত কর্মসূচি বড় ধরনের বিক্ষোভে পরিণত হয়। এতে যোগ দেন লাখ মানুষ। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া উত্তেজিত জনতা এক পর্যায়ে পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে। জবাবে পুলিশও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
রাজধানী আলজিয়ার্স ছাড়াও শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা। বিরোধীদের দাবি, এদিন সারা দেশে ১০ লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।
বুতেফ্লিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৩ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কার্যত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলেও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চান তিনি।
২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ৮২ বছরের বুতেফ্লিকার বিরুদ্ধে শাসনকাল দীর্ঘায়িত করতে নির্বাচন পেছানোর চক্রান্তের অভিযোগ করছেন বিক্ষোভকারীরা। ২০১৩ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর খুব কমই প্রকাশ্যে এসেছেন প্রেসিডেন্ট বুতেফ্লিকা। গত মাসে পঞ্চম বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের মুখে এরইমধ্যে নির্বাচনে না লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনি প্রক্রিয়া শুরুতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরি হওয়ায় বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বুতেফ্লিকার শাসন দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র হিসেবেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্ব করা হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, দেশটিতে রাজনৈতিক পালাবদল, নতুন খসড়া সংবিধান এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এর মধ্যে বুতেফ্লিকা নির্বাচনে না লড়ার ঘোষণা দিলেও বিক্ষোভকারীরা দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিক্ষোভের মধ্যে গত মঙ্গলবার টেলিভিশনে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্টের অনুগত হিসেবে পরিচিত উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধান গায়েদ সালাহ। ওই ভাষণে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সশস্ত্রবাহিনীর সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতের জন্য সেনাবাহিনী ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ লক্ষ্য রয়েছে। সেনাপ্রধান বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার একমাত্র নিশ্চয়তা সংবিধান। আর এজন্য তিনি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ ব্যবহারের আহ্বান জানান। দেশটির বর্তমান সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট দেশ পরিচালনায় অক্ষম হলে সাংবিধানিক পরিষদ প্রেসিডেন্টের পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে। সেনাপ্রধান বলেন, এই সমাধান সকলের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে আর অবশ্যই সবাই এটি গ্রহণ করবে।
সেনাপ্রধঘানের সমাধান মেনে নেওয়া হলে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দেশটির সিনেটের প্রধান আবদেলকাদের বানসাল্লাহ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পাবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তিনি।
১৯৯০ এর দশকে আলজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের পর সেনাবাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট আবদেলআজিজ বুতেফ্লিকা। দেশটির বহুধা বিভক্ত রাজনৈতিক ধারাকে তিনি একত্রিত করতে সক্ষম হন। ২০১১ সালে আরব বসন্তে ওই অঞ্চলের বহু নেতার পতন হলেও টিকে যান আবদেলআজিজ বুতেফ্লিকা।