শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করা হয়েছে। ২১ এপ্রিল রবিবার রাতে দেশটির বিমানবাহিনীর সদস্যরা এটি উদ্ধার করেন। আট দফা বোমা হামলায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে বিমানবন্দর এলাকায় এ ঘটনা ঘটলো। বিমানবাহিনীর মুখপাত্র জিহান সেনেভিরাত্ন বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এটি ছিল মূলত একটি হাতে তৈরি পাইপ বোমা। লঙ্কান বিমানবাহিনীর একটি টিম প্রথমে বিস্ফোরকভর্তি ছয় ফুট লম্বা পিভিসি পাইপটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। খবর পেয়ে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে এটিকে নিষ্ক্রিয় করে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রবিবার রাতে বিমানবন্দরের প্রধান টার্মিনালে যাওয়ার পথে পাইপ বোমাটি ফেলে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, এটি ছিল একটি হাতে তৈরি বোমা যেখানে একটি পাইপের ভেতর বিস্ফোরক ঢোকানো হয়েছিল।
বিমানবাহিনীর মুখপাত্র জিহান সেনেভিরাত্ন বলেন, সম্ভবত এটি স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছিল।
এদিকে ভয়াবহ এ সিরিজ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৪৫০ জন। নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯০ জনে দাঁড়িয়েছে; রবিবার সরকারের এমন ঘোষণার কয়েক মিনিটের মাথায় ২০৭ জন নিহতের খবর দেয় পুলিশ। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধন জানিয়েছেন, অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তদন্তকারীরা। ইতোমধ্যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি জানান, হামলায় নিহতদের মধ্যে ৩০ জন বিদেশিও রয়েছেন। দেশ এবং দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করছে বলেও জানান রুয়ান বিজয়বর্ধন। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস দুর্ভাগ্যজনক এই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সব অপরাধীকে যত দ্রুত সম্ভব হেফাজতে নেওয়া হবে। তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা এবং তিনটি হোটেলে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
কলম্বোর কোচিচিকাদের সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় হামলাটি ঘটে কুতুয়াপিটায়ের সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চে। আর তৃতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে নেগোম্বো শহরের বাত্তিকালোয়া চার্চে। এছাড়া কলম্বোর তিনটি পাঁচতারকা হোটেলেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে ইস্টার সানডে’র অনুষ্ঠান চলার মধ্যে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ঠিক কী কারণে কারা এ হামলা চালিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুধু নেগোম্বোতে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বাত্তিকালোয়া চার্চে নিহতের সংখ্যা ২৭ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবনের কাছে অবস্থিত সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের এক কর্মচারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, হোটেলের এক রেস্তরাঁয় বিস্ফোরণ ঘটানো হলে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বিস্ফোরণের বিষয়ে তথ্য খতিয়ে দেখছেন।
কলম্বোর সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে রাজধানী কলম্বোর উত্তরে নেগোম্বো শহরের আরেকটি চার্চে। নিজেদের ফেসবুক পাতায় সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছে ওই চার্চ কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে কুতুয়াপিটায়ের সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চের অভ্যন্তরে ছিন্নভিন্ন ছাদের ছবি দেখা গেছে। মেঝেতে রক্ত পড়ে থাকার ছবিও দেখা গেছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ শ্রীলঙ্কার মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। দেশটির দুই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী তামিল ও সিংহলিজ উভয়ের মধ্যেই এই ধর্মাবলম্বীদের দেখতে পাওয়া যায়। এক দশক আগে গৃহযুদ্ধ অবসানের পর দেশটিতে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের মার্চে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলি সম্প্রদায়ের সদস্যরা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মসজিদ ও সম্পত্তিতে হামলা শুরু করলে দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। সূত্র: এনডিটিভি, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স।