সৌদি কিশোর মুর্তজা কুরেইরিসের মৃত্যুদণ্ডকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ১০ বছর বয়সে মানবাধিকারের দাবিতে সাইকেল নিয়ে মিছিল করার দায়ে তাকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিয়াদ। সৌদি রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের মিত্র শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলও টুইটার ব্যবহারকারীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও বুদ্ধিজীবীসহ বহু মানুষ এই প্রচেষ্টার সমালোচনা করেছেন। মুর্তজার মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত ইসলামি বিধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
আরবের দুর্নীতিপ্রবণ ও জনবিরোধী শাসকদের বিরুদ্ধে যখন বসন্তের ঢেউ খেলে গিয়েছিল, সে সময় সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল শিশু মুর্তজা কুরেইরিস। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় সাইকেল নিয়ে অহিংস প্রতিবাদে নেমেছিল সে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সম্প্রতি তাদের এক বিশেষ অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানতে সক্ষম হয়, সুদীর্ঘ নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তার মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। সবশেষে শান্তিপূর্ণ সরকার বিরোধিতার শাস্তি হিসেবে ওই শিশুর মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সিএনএন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সত্যতা যাচাই করেছে। লেখক-সাংবাদিক ইয়ান ফ্রেজার এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সৌদি তরুণ এমন ১০ বছর বয়সে গণতন্ত্রের দাবিতে প্রতিবাদে নামার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড পেতে যাচ্ছে, এরপর তার মরদেহ সম্ভবত জনসম্মুখ ঝুলিয়ে রাখা হবে’।
This is an absolute outrage. Saudi teenager #MurtajaQureiris faces execution possibly by crucifixion for participating in pro-democracy protests when he was 10 years old https://t.co/pMHxTUgfiG
— Ian Fraser (@Ian_Fraser) June 9, 2019
সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এ প্রচারিত সামাজিক মাধ্যমের এক ভিডিওতে দেখা যায়, সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলের এক ধুলোমলিন রাস্তায় বাইসাইকেলে জড়ো হয়েছে একদল বালক। সাইকেলের পেডেলে পা রেখে প্রায় ৩০ বালকের ওই দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল ১০ বছর বয়সী মুর্তজা কুরেইরিস। মনে হচ্ছিল কোনও প্রতিযোগিতা করার জন্য জড়ো হয়েছে বালকের দল। সৌদি আরবের দাবি, তারা সে সময় সরকারবিরোধী শ্লোগান দিচ্ছিলো। ঘটনার দায়ে মুর্তজাকে আটককেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। অধিকারভিত্তিক ওয়েবসাইট অপ্রেশন ডট ওআরজি সাইকেল আন্দোলনের সেই ভিডিও টুইট করে লিখেছে, মানবাধিকার ও বিশুদ্ধ পানির দাবিতে সাইকেল নিয়ে আন্দোলনের অপরাধে ১০ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে তার মরদেহ জনসম্মুখে ঝুলিয়ে রাখতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি মিত্র সৌদি আরব এবং কুশনারের বন্ধু মোহাম্মদ বিন সালমান।
US and Israeli ally #SaudiArabia and Kushner's bedfellow #MbS ready to execute and crucify this 10 year old boy for leading a bike protest seeking basic human rights such as clean water #MurtajaQureiris @fbhutto pic.twitter.com/6jHOOPspG6
— Oppression.org (@OppressionOrg) June 7, 2019
উল্লেখ্য, ৯/১১এর হামলার ঘটনায় সৌদি আরব আর যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে খানিকটা সংকট সৃষ্টি হলেও বরাবারই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে এসে সেই সম্পর্ক নাটকীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দুই দেশের অভিন্ন শত্রু ইরানকে মোকাবিলায়ই এর একমাত্র কারণ নয়। বরং ট্রাম্পের ইসরায়েল-বান্ধব জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের সম্পর্কও বেশ গভীর। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার কর্মী ফ্রান্সিস মিলেট এক টুইটে বলেন, ট্রাম্পের ‘বন্ধু’ সৌদি এখন মুর্তজা কুরেইরিসকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে কারণ সে সংখ্যালঘু শিয়াদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বন্ধুদের নিয়ে এক সাইকেল মিছিলে আওয়াজ তুলেছিলো। আর এই কথিত অপরাধ সংঘটিতের সময় তার বয়স ছিলো ১০ বছর।
#Trump’s “friends" the Saudis are going to execute #MurtajaQureiris for the "crime" of leading some of his friends on a bike ride for #HumanRights for #SaudiArabia’s #Shia minority. He was 10 years old when he committed this capital offense. #Khashoggi https://t.co/pnsXHUATQw
— FDMillet (@FrancisDMillet) June 7, 2019
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মৃত্যুদণ্ড আদতে সরকারের শিয়াবিরোধী দমন অভিযানের অংশ। ২০১৫ সালে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান এই শিয়াবিরোধী অভিযান জোরালো করেন, চলতে থাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উৎখাত। জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা জানায়, সৌদি সরকার সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে রাজনৈতিক আন্দোলন দাবিয়ে রাখতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অথর্নীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মী সার নোমিকস এক টুইট বার্তায় বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর সৌদি নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় ১৩ বছর বয়সেই তাকে আটক করা হয়। এখন তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চায় সৌদি আরব। কেউ কি এই নির্মমতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে?
He was arrested at 13 for speaking up against Saudi oppression of minorities. Now Saudi Arabia wants to execute him. Will anyone speak up against this brutally? #StopTheExecutionOfMurtaja #MurtajaQureiris @amnesty https://t.co/AGTyqwWBxi
— Sara nomics (@saranmics) June 8, 2019
২০১১ সালে মুর্তজা যখন সাইকেল নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিল, তখন তার বয়স ছিল ১০ বছর। ৩ বছর পরে ২০১৪ সালে তাকে যখন আটক করা হয়, তখন তার বয়স ১৩। পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ও আলোকচিত্রি ইকরার আলি আমির এক টুইটে বলেন, মুর্তাজা কুরেইরিস এর ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন? বাদশার বিরুদ্ধে সে যখন কথিত অপরাধ করে তখন তার বয়স ছিলো ১০ বছর। যখন গ্রেফতার করা হয় তখন বয়স ছিলো ১৩ বছর। তাকে কীভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, রিয়াসাত-এ-মদিনা কি এর সমর্থন করে? আমার মনে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
What do you think about #MurtajaQureiris ? He was 10 years old boy when he committed alleged crime against the king. and he was arrested when he was 13 years old boy. How he can be executed. Does Ryasat e Madina support it? I have such a big question? #freemurtaja #CriminalMinds pic.twitter.com/IwWMibfYtJ
— Iqrar Ali Ameer (@IqrarAmeer315) June 10, 2019
লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্টিপল টাইমসের প্রধান সম্পাদক ম্যাথিউ স্টিপলস এক টুইটে বলেন, এটা খুবই উদ্বেগজনক। এটা অবশ্যই থামাতে হবে।
Absolutely shocking. This must be stopped. https://t.co/imd6Bgd98H #MurtajaQureiris #SaveMurtajaQureiris
— Matthew Steeples (@M_Steeples) June 10, 2019
সৌদি আরবে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র অধিকার আন্দোলনের বৈশ্বিক প্রচারণা প্ল্যাটফর্ম স্টপ আল-সাউদ এক টুইটে বলেন, সৌদি আরব এক কিশোরকে মৃত্যুদণ্ড দিতে চায় যাকে ১৩ বছর বয়সে আটক করা হয়েছিলো। এখন ১৮ বছর বয়সী মুর্তজাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
#SaudiArabia Seeks to execute teenager who was detained aged 13#MurtajaQureiris , 18, is facing the death penalty – possibly by crucifixion – over charges including anti-government protests, joining a “terrorist organisation”, firing at security forces and so on. pic.twitter.com/TDaH8cx8R9
— STOP Al-SAUD (@Stop_Alsaud) June 10, 2019