X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার ডাকাতি

ফিলিপাইনের ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ

বিদেশ ডেস্ক
১৩ মার্চ ২০১৬, ১৪:০৭আপডেট : ১৩ মার্চ ২০১৬, ১৪:০৮
image

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচার হওয়া নিয়ে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) প্রেসিডেন্ট ও সিইও’র আইনজীবীদের বিপরীতে ব্যাংকটির জুপিটার ব্রাঞ্চের ম্যানেজারের আইনজীবীদের দেওয়া বক্তব্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়া। আরসিবিসি-র জুপিটার ব্রাঞ্চের কয়েকটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় মুদ্রাপাচারকারী চক্রটি।

আরসিবিসি-র জুপিটার ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস দিগুইতোর আইনজীবীরা ফার্দিনান্দ তোপিসিও ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে আরসিবিসি-র প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তান দায়িত্বে বহাল থাকা অবস্থায় স্বচ্ছ তদন্ত সম্ভব নয়। অপরদিকে, আরসিবিসি প্রেসিডেন্টের আইনজীবী ফ্রান্সিস লিম দাবি করেছেন, ব্যাংক এই বিষয়টি পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালনা করছে। সেই সাথে তিনি দিগুইতোর ‘স্ববিরোধী’ বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন। দিগুইতো প্রথমে বলেছিলেন, ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট তাকে ওই অ্যাকাউন্টগুলো থেকে অর্থ উত্তোলনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে শুক্রবার তিনি তার পূর্ববর্তী বক্তব্য থেকে সরে এসে বলেছেন, ‘আমি তাকে দোষারোপ করছি না। আমি শুধু ধারণা করছি, কারণ অর্থের পরিমাণটা বিশাল। আর এই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়ার পূর্বে ব্যাংকের কোষাগারে জমা করা হয়েছে। আর এ সম্পর্কে তার অবগত না থাকার কথা না।’

আরসিবিসি প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তান

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রসঙ্গে এক প্রেস বিবৃতিতে তোপাসিও বলেন, ‘আরসিবিসি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যাংক যথাযথ তদন্ত করতে পারবে না বলে আমাদের মক্কেল মাইয়া সান্তোস দিগুইতো সন্দেহ পোষণ করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক যদি সত্যটা উন্মোচন করতে তৎপর থাকতো, তাহলে দিগুইতোকে ‘বলির পাঁঠা’ না বানিয়ে প্রথমেই প্রেসিডেন্ট তানকে ব্যাংক থেকে বরখাস্ত করতো এবং তদন্তের দায়িত্ব অন্য কোনও কর্মকর্তার হাতে দেওয়া হতো, যিনি তানের আইনজীবীর সাথে সম্পর্কিত নন।’

শুক্রবার তানের আইনজীবী ফ্রান্সিস লিম জানিয়েছিলেন, তান তদন্তের স্বার্থে অফিস থেকে ছুটিতে যেতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের পরিচালকরা তানের ভদ্র আচরণের প্রশংসা করেন, কিন্তু তার ওপর তাদের আস্থা অটুট রয়েছে।’

বিপরীতে দিগুইতোর আইনজীবীরা তোপিসিও  বলেন, ‘উইলিয়াম গো প্রচারমাধ্যমের সামনে যা বললেন এবং আরসিবিসি ব্যবস্থাপকরা যেভাবে প্রচারমাধ্যমকে দিগুইতোর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ব্যবহার করেছেন, তার ফলে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো যে, তান ব্যাংক প্রেসিডেন্টের পদে থাকলে তিনি পদাধিকারবলে ব্যাংকের যে কোনও দলিল বা ইমেইল পরিবর্তন বা মুছে দিতে পারেন। যেখানে তান নিজেই সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন আর অভ্যন্তরীণ তদন্ত এখনও সম্পন্ন হয়নি, সেখানে তাকে আরসিবিসি-র প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখাটা অবাক করার মতো বিষয়।’

মাইয়া সান্তোস দিগুইতো তোপাসিওর আশঙ্কা, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তের দায়িত্বে থাকা অ্যাটর্নি ম্যাসেল ফার্নান্দেজ যে আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, সিইও তান সেই এসিসিআরএ-কে তার পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন। তবে তানের আইনজীবী লিম এ সব আশঙ্কাকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। তিনি তোপাসিওকে নিজের মক্কেলকে সাহায্য করার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন। দিগুইতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এর আগে ৮১ মিলিয়ন ডলার সাইবার ডাকাতির তদন্তে ৬ সন্দেহভাজনের একজন, ব্যবসায়ী গো তার আইনজীবী র‍্যামন এসগোয়েরার মাধ্যমে জানিয়েছেন, গো কোম্পানির নামে করা অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। দিগুইতো ভুয়া স্বাক্ষর এবং দলিলের মাধ্যমে গো কোম্পানির নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন এবং তাকে ১০ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন বলেও উইলিয়াম গো অভিযোগ করেছিলেন।
সিনেট কমিটির শুনানি সামনে রেখেই দিগুইতো দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিলেন। শুক্রবার বিকেলে সন্দেহভাজন ব্যাংক ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস দিগুইতোকে ম্যানিলার নিনয় আকিনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়। জাপানের নারিতায় যাওয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তিনি। দিগুইতো বলেন, ‘ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আমাকে অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলের একটি চিঠি দেখান। ওই চিঠিতে বলা হয়, অর্থপাচারের সঙ্গে আমার যোগসাজশ রয়েছে। যদিও আমাকে অভিযুক্ত করে কোনো মামলা হয়নি।’
ফিলিপাইনের অভিবাসন ব্যুরোর মুখপাত্র নিকি রেয়েস জানান, বিচার বিভাগের নির্দেশিত তালিকায় দিগুইতোর নাম রয়েছে। এজন্যই তাকে দেশের বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। নিজস্ব সূত্রের বরাতে ইনকোয়ারার জানিয়েছে, সিনেট তদন্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিনেটর সার্জ ওসমেনা, তিনি দিগুইতোকে দেশের বাইরে যেতে না দেওয়ার অনুরোধ জানান বিচার বিভাগের কাছে। আরসিবিসি আইনজীবীরাও ওসমেনাকে একই অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরো সিস্টেম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ৪টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। সূত্র: ইনকোয়ারার।

/এসএ/বিএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ