পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের একাংশ জামাতুল আজহার। একটি পার্কে চালানো ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭০ জনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন আরও তিন শতাধিক মানুষ।
রবিবার সন্ধ্যায় আল্লামা ইকবাল টাউনের গুলশান-এ-পার্কে ওই বিস্ফোরণটি ঘটে। নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। স্থানীয় সবগুলো হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সালমান রফিক জানিয়েছেন, হাসপাতালে বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে জরুরি ভিত্তিতে সার্জারি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘নিহতের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
ইকবাল টাউনের পুলিশ সুপার ড. মোহাম্মদ ইকবাল জানান, রবিবার সন্ধ্যায় শিশু পার্কে আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটে। এ সময় সেখানে অনেক শিশু ও নারী উপস্থিত ছিলেন। বিস্ফেরণস্থলটি লাহোরের একটি অন্যতম আবাসিক এলাকা। বিস্ফোরণটি ঘটে পার্ক থেকে বের হওয়ার গেটের কাছেই। ইস্টার সানডে উপলক্ষে পার্কে ছিল প্রচুর মানুষের উপস্থিতি।
ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের একাংশ জামাতুল আজহার। এক বিবৃতিতে ওই অংশের মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান বলেন, ‘খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়। আমরা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের কাছে এই বার্তা দিতে চেয়েছি যে, আমরা লাহোরে প্রবেশ করেছি। তিনি যা খুশি চান তা-ই করতে পারেন, কিন্তু তিনি আমাদের আটকাতে পারবেন না। আমাদের বোমা হামলাকারীরা এমন হামলা চালিয়ে যাবেন।’
ডিআইজি (অপারেশন) ক্যাপ্টেন (অব.) মুহাম্মদ উসমান আত্মঘাতী বোমা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হামলাকারীর বিচ্ছিন্ন মাথা খুঁজে পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে বল বেয়ারিংও উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ডন নিউজকে জানিয়েছেন, পার্কের ভেতর রক্ত আর রক্ত। চারদিকে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে আছে। যেদিকেই দেখা যাচ্ছে আহত ও নিহত মানুষ পড়ে আছেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা আহতদের রিকশা ও ট্যাক্সিতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীরা। উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করতে সেনাবাহিনীও যোগ দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে আহতদের ‘বিশেষ স্বাস্থ্য সেবা’ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ওই হামলায় আমার সন্তানদের, ভাই এবং বোনদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।’ হামলার পরপরই পাঞ্জাব সরকার তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে। শহরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ওই হামলায় নিন্দা জানিয়েছে। হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে পাকিস্তানের জনগণ এবং সরকারের পাশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা পাকিস্তান এবং ওই অঞ্চলে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে সন্ত্রাসের শেকড় উপড়ে ফেলতে কাজ করে যাব।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছেন। মোদি যে কোনও সহযোগিতায় পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন বলে এক টুইটার বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ নিশ্চিত করেছেন।
পাকিস্তানে বোমা বিস্ফোরণ, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানি তালেবানের একাংশ সরকারের সাথে আলোচনায় সম্মত হলেও কয়েকটি অংশ সম্প্রতি বেশ কিছু আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছে দেশটিতে। সূত্র: রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি, ডন।
/এসএ/