X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মস্কোতে মনে পড়লো নেপালের দিনগুলো

শাকিলা সিমকি
২২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৫আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৭

মস্কোতে মনে পড়লো নেপালের দিনগুলো এক চুলায় ভাত রান্না হচ্ছে তো আরেক চুলোয় স্যামন মাছের স্যুপ। একটাতে শূকরের মাংসের কিমা ভাজা হচ্ছে তো অন্যটাতে সবজি সেদ্ধ। রাশিয়ার মস্কোতে বাঙালি, চীনা, রুশ, আফ্রিকানসহ বিভিন্ন জাতের নানান দেশের ছেলেমেয়েদের বসবাস। তাই খাবারও ভিন্ন। দুপুর কিংবা রাতে প্রতিদিন চলে এমন রান্নাবান্না।

মস্কোর পলেসেভিয়া এলাকায় নয় তলা ভবনের পঞ্চম তলায় আমাদের কক্ষ। রুম আলাদা হলেও এখানে রান্নাঘর শেয়ার করতে হবে জেনে মাথায় বাজ পড়লো! প্রথম দু’সপ্তাহ রান্না করতেই যাইনি। খাবার কিনে খেয়েছি। এখন ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি। রান্নাঘরে তেমন কোনও ঝামেলা নেই। আট চুলো। যার যার সুবিধামতো ঝামেলাহীন রান্নাবান্না চলে।

মস্কোতে এসে হোস্টেলে থাকা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। তবে মাস্টার্সে মিডিয়া কমিউনিকেশনের ওপর একটা সেমিস্টার করতে নেপালের কাঠমান্ডুতে থাকতে হয়েছিল বেশ কিছুদিন। সেটাই আমার প্রথম ঢাকার বাইরে একা থাকা। ওখানে কিছুটা হোস্টেল লাইফের স্বাদ পেয়েছিলাম। তবে রান্নাবান্নার ঝামেলা কী তা টের পাইনি। আমরা সহপাঠীরা মিলে রিসোর্টের মতো একটি বাড়িতে ছিলাম। নয়টা-পাঁচটা ক্লাসের পর বান্ধবীরা মিলে ছুটতাম মার্কেটে। ঘুরেফিরে রিসোর্টে ঢোকার আগে সামনের হোটেল থেকে রাতে ভাত অথবা রুটি দিয়ে ডিনার সেরে নিতাম।

আমরা বাঙালিরা যেমন অপরিচিত মধ্যবয়সী নারীদের খালা বলি, নেপালিরা তেমন কাউকে দেখলে ডাকে দাই। এমন একজন দাইয়ের দোকান থেকে এক গ্লাস গরম দুধ পান করে রুমে ঢুকতাম। নেপালে সন্ধ্যা সাতটা হলেই বিদ্যুৎ চলে যেত। তাই দোকানপাট সাড়ে সাতটার মধ্যে বন্ধ করে দিতো। আমরাও খেয়েদেয়ে রুমে ফিরতাম সাড়ে সাতটার মধ্যে। চার্জের আলোয় লেখাপড়া আর গল্পগুজব করে দিতাম ঘুম। সকালে উঠে দাইয়ের দোকানে নাশতা করেই চলে যাই ক্লাসে। উচ্চশিক্ষার জন্য আবারও ছাত্রজীবন শুরু করে নেপালের কথা মনে পড়লো।
মস্কোতে মনে পড়লো নেপালের দিনগুলো মস্কোর প্রতিটি ভবন মজবুত। প্রত্যেক রুমে একটি করে বিশাল আকৃতির জানালা রয়েছে। এগুলোর একটি অংশ শুধু খোলা যায়। তবে খুব একটা দরকার পড়ে না। কারণ জানালা খোলামাত্র হু হু করে ডাকাতের মতো গা হিম করা বাতাস ঢুকে পড়ে। তখন চোখ বন্ধ করলে মনে হতে পারে বুঝি হিমালয়ে বসে আছেন!

তবে কোনও বারান্দা নেই। বরফপড়া হিমশীতল এই দেশে চাঁদের জোছনা, হিমেল হাওয়া কিংবা বৃষ্টি নিয়ে বিলাসীতার সুযোগ নেই। বাতাস ছাড়া ঘর হলেও দম আটকে যায় না। জানালা দিয়ে তুষারপাত দেখলে ভালো লাগে। মনে পড়ে যায় বাংলাদেশের বৃষ্টির কথা। মাঝে মধ্যে জানালা খুলে তুষার ধরার চেষ্টা করি। ভিনদেশের ছোট্ট এক কামরায় এটাই আমার একমাত্র ভালোলাগা।

মস্কোতে মনে পড়লো নেপালের দিনগুলো আরও কিছু ভালোলাগা যুক্ত হয় মাঝে মধ্যে। যখন পাশের রুম থেকে রুশ ছাত্রদের গানের সুর ভেসে আসে। গিটারে রুশসঙ্গীত মনে ভালোলাগার ঢেউ তোলে। ভাষা ভিন্ন, তবে সুরের মাঝে কী যেন এক মায়া আছে! কাজাখস্তানের কিছু মুসলমান ছাত্র আছে করিডোরে কিংবা রান্না ঘরে দেখা হলেই সালাম দেয়। পলিয়ানা নামের এক রুশ মেয়ে আমার সঙ্গে দেখা হলেই হাসে। অকারণে হাসে। মিষ্টি মেয়ে পলিয়ানা। ওর সঙ্গে গল্প করি মাঝে মধ্যে।

রুশ মেয়েদের এই একটা জিনিস ভালো লাগে— অকারণে হাসে! তারা দুই-তিনজন একত্র হলেই রিনিঝিনি হাসির শব্দ শুনি। নিস্তব্ধ ডরমেটোরিতে যখন-তখন রুশকন্যাদের হাসির শব্দে শীতের নিঃশব্দতা ভাঙে। এমনিতে সারারাত খোলা থাকে ডরমেটোরির ফটক। যার যখন ইচ্ছে বের হচ্ছে কিংবা ঢুকছে। তবে বাইরের কারও ঢোকা সহজ নয় এখানে। ডরমেটোরিতে সবাই নিজের মতো করে থাকে। কেউ কারও বিষয়ে নাক গলায় না।

মস্কোতে মনে পড়লো নেপালের দিনগুলো বিদেশে সবখানে নিজের কাজ নিজে করতে হয়। বুয়া নামক কিছু নেই। প্রত্যেক রুমের ছাত্রছাত্রীদের মাসে একবার রান্নাঘর আর লম্বা করিডোর পরিষ্কার করতে হয়। ঘরের ময়লা পর্যন্ত নিজে বয়ে নিচে নেমে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে আসতে হয়। নিজের দেশে আমরা এসব কাজকে ছোট করে দেখি। অথচ এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সবাই সব কাজকে সম্মান করে, সমানভাবে দেখে। ক্লাসে শিক্ষিকাকেও দেখেছি— টেবিল কিংবা চেয়ার অথবা কলমটা পড়ে গেলেও নিজের হাতে তোলেন। অন্যকে আদেশ দেওয়ার নিয়মটা এখানে দেখিনি বললেই চলে।

মস্কোতে পা রাখার প্রথম দিকে নিজের বদভ্যাসগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে মেনে নিতে না পারলেও এখন এসব নিয়ম আমাকে প্রতিনিয়ত শিক্ষা দিচ্ছে। বাসা কিংবা হোস্টেল, জীবনের সবরকম যাপনকে উপভোগ করতে হয়। হোস্টেল জীবনও আমাকে নতুন অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। ভিনদেশে অনেক কিছু শেখার আছে। শুধু মনটা খোলা রাখতে হয়।
ছবি: লেখক

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা