X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

জাদুকাটার জাদুর জলে

রিয়াসাদ সানভী
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:০০আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৩০

জাদুকাটা নদী সুরমা নদীতে নির্মিত আবদুস জহুর সেতুর ওপরে উঠলেই টের পাওয়া যায় এখানকার প্রকৃতির বিশালতা। সুনামগঞ্জের ভেতর এখনও প্রকৃতির রাজত্ব কিছুটা হলেও বজায় আছে। ফলে শহুরে হাওয়ার বিষবাষ্প এখানকার আলো-বাতাসকে কব্জা করতে পারেনি। নগরায়ন হচ্ছে ঠিকই। আধুনিকতাও এসেছে। কিন্তু অবারিত প্রকৃতির আহ্বান এখনও সুনামগঞ্জে তার অহংকার ধরে রেখেছে।

খোলা প্রান্তরের ভেতর দিয়ে সোজা চলে গেছে পাকা রাস্তা। এই পথ ধরে তাহিরপুরের বিশ্বম্ভরপুরের দিকে যেতে হয়। কিছুদূর গেলেই মোটামুটি হাওরের অস্তিত্ব বোঝা যায়। এখানে কাছাকাছি অনেক বড় হাওর আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য টাঙ্গুয়ার হাওর। যদিও এবার আর টাঙ্গুয়া আমাদের মূল গন্তব্য নয়।

রাস্তা কোনও জায়গায় মসৃণ, কখনও এবড়োথেবড়ো। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাটগুলোর এ যেন চিরায়ত বাস্তবতা। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দিগন্তে টের পাওয়া গেলো কালো রেখার উপস্থিতি। মেঘের কারণে ভালো বোঝা যাচ্ছে না। তবে এ যে মেঘালয়ের পাহাড় সারি তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

জাদুকাটা নদী বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ সমভূমি গিয়ে শেষ হয়েছে একেবারে ভারতবর্ষের খাসিয়া জৈয়িন্তা পাহাড় সারির পায়ের কাছে। এই সমতল ভূমি হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে উর্বর ফসলি ভূমি। বাংলাদেশের শষ্যভাণ্ডার বলা চলে এই হাওর অঞ্চলকে। এখানকার প্রকৃতির মতোই ফসলের ক্ষেতেও সৃষ্টিকর্তা দু’হাত ভরে দিয়েছেন উর্বরতা। এই অঞ্চলে সৃষ্টিশীল মানুষেরও কমতি নেই। হাজারো বাউল কবি-সাধকের জন্মভূমি এই অঞ্চল। হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিম, দূরবীন শাহ, রাধা রমণ এখানকার সন্তান। হাওরের মুক্ত বাতাস গায়ে মেখেই তারা সৃষ্টি করেছেন এমন কথা, সুর ও দর্শনের, যা বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতিকে দিয়েছে বিশ্বজনীন রূপ।

জাদুকাটা নদী এমন সব ভাবতে ভাবতে আমরা বিন্নাকুলি বাজার হয়ে লাওরের গড়ের দিকে এগোচ্ছি। পাশেই জাদুকাটা নদী। এর গল্প শুনছি অনেক আগে থেকেই। রূপের নদী, জাদুর নদী জাদুকাটা। ভারত থেকে এসে এই নদী বাংলাদেশের মেঘনা কুশিয়ারায় মিশেছে। সঙ্গে করে বয়ে নিয়ে আসছে বালি পাথর। এই সম্পদের এখন অনেক মূল্য। যদিও যথেচ্ছার উত্তোলনে নষ্ট হয় পরিবেশের ভারসাম্য। প্রথম দেখায় জাদুকাটা গল্পের মতো অতটা মুগ্ধ করলো না। কিন্তু পুরোটা দিন জুড়ে তার মোহ ঘোরগ্রস্ত করে রেখেছিলো। শেষ বিকালে এসে মনে হলো তার প্রেমে পড়েছি। শীতের সময়ে জাদুকাটার প্রবাহ ক্ষীণ থাকে। বর্ষায় এই নদী হয়ে ওঠে প্রমত্তা। পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায় দু’কূল। বড় সাহসী মাঝিও নৌকা নামাতে ভয় পান।

লাওরের গড় থেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে সিএনজি রাখলো চালক। এখান থেকে বালিয়াড়ির দিকে যেতে হবে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে। সূর্যের হালকা রূপ কখনও দেখা দিয়ে ফের মিলিয়ে যাচ্ছে। ভালোই হলো। সূর্য এখানে পূর্ণ শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হলে আর প্রশান্তি নিয়ে কিছু দেখা হতো না। এই ধূধূ বালিয়াড়ি একবার ঠিকমতো তেতে উঠলে কাবু করতে পারে যে কাউকে।

জাদুকাটা নদী নদীর ঘাট এখান থেকে এখনও অনেকটা দূরে। দিগন্তের এক কোণে অনেক গাছের সারি। সেখানে লেগেছে লালের ছটা। জাকির ভাই জানালেন, এটাই সেই বিখ্যাত শিমুল বাগান। ফাল্গুনের কাছাকাছি সময়ে গাছে ফুল এলে যার রূপের ছটায় আলোকিত হয় চারপাশ। আর তার টানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজারো সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ। আমরা সেদিকেই যাবো।

জাদুকাটা নদী আজকের দিনে আমাদের প্রথম গন্তব্য শিমুল বাগান। হাঁটতে হাঁটতে আমরা চলে এলাম জাদুকাটা নদীর ঘাটে। ইচ্ছে হলে হেঁটেই পার হওয়া যাবে, নদী এখন এমনই স্তিমিত। খানিকটা অবাক হলাম নদীর মূল দু’পাড়ের দূরত্ব দেখে। বর্ষায় এই নদীই পায় অকূল দরিয়ার চেহারা। সেই নদীরই কিনা অকালে এমন চেহারা। এখানে চলছে এখন বালু উত্তোলনের উৎসব। জানি না এটি আইনসিদ্ধ কিনা। হাতের ডানে দুই-তিন কিলো গেলেই ভারত সীমান্ত। দেখলে মনে হবে যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে মেঘালয়ের পাহাড়। হালকা মেঘেরা ধোঁয়াশা ছড়িয়ে রহস্যময় চেহারা দিয়েছে সেই গিরিশ্রেণীকে। তার একফাঁক গলে বেরিয়ে এসেছে জাদুর নদী জাদুকাটা। আমাদের জন্য এ এক আশীর্বাদ। তার সম্পদ ও রূপের বাহারকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটিই হয়ে উঠতে পারে পর্যটন ও অর্থনীতির আরেক মেলবন্ধন।

রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে এখানে চলাচলের প্রধান বাহন মোটরসাইকেল। নৌকায় মানুষের চেয়ে মোটরসাইকেলই বেশি বলে ভ্রম হলো। পানি পুরোপুরি স্বচ্ছ। চুনাপাথরের কারণে কোথাও কোথাও পান্না সবুজ রঙ ধারণ করেছে নদীর জল। স্বচ্ছ ও পান্না সবুজ জলের মিলনে মনোমুগ্ধকর রঙ। মিনিট দুই-তিনেকের মধ্যে আমরা ওপারে পৌঁছে গেলাম। ঘাটের ওপরেই আরও খানিকটা উঠলে জনপ্রিয় বারিক্কা টিলা।

জাদুকাটা নদী যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের শ্যামলী, হানিফ ও এনা পরিবহনের বাস চলাচল করে। ভাড়া ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে। সুনামগঞ্জ শহর থেকে জাদুকাটায় কয়েকভাবে যাওয়া যায়। সুরমা সেতুর কাছ থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল ও সিএনজি দুটোই মিলবে মোটেরসাইকেল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। সিএনজি সারাদিনের জন্য জাদুকাটা নদীর ঘাট পর্যন্ত ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। একটি সিএনজিতে পাঁচ জন যাওয়া যায়।

ছবি: লেখক

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ