X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বুকশপ ক্যাফে: কফি আর বইয়ের সঙ্গে একান্তে কিছুক্ষণ

সুরবি প্রত্যয়ী
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:১৪আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৩৭
image

অলস দুপুরে ছিমছাম কোনও জায়গায় বসে প্রিয় বইটি পড়তে পারলে কেমন হয়? সঙ্গে যদি থাকে ধোঁয়া ওঠা গরম এক মগ কফি, তাহলে তো কথাই নেই! বইপ্রেমীদের জন্য এমনই চমৎকার ব্যবস্থা করেছে নগরের বেশ কয়েকটি কফি শপ। গত এক বছরে ঢাকা জুড়ে বইপ্রেমীদের জন্য গড়ে উঠেছে এই বুকশপ ক্যাফেগুলো। ভাষার মাসেই কেবল বই পড়ার উৎসব চলবে কেন? উৎসবটা এখন চলুক বছর জুড়েই। বইপ্রেমীদের জন্য ক্যাফেতে বসে বই পড়তে পড়তে সময় কাটানো, আড্ডা দেওয়া কিংবা চা-কফি খাওয়া তো উৎসবই বটে! জেনে নিন বুকশপ ক্যাফেগুলোর খোঁজখবর।

বেঙ্গল বই

বেঙ্গল বই

ধানমন্ডিতে এমন একটি বইয়ের দোকানের জন্য হাহাকার ছিল বহু বছর ধরে। আর ‘বেঙ্গল বই’ তো কেবল বইয়ের দোকান নয়, যেন গোটা একটি লাইব্রেরি। ‘বইয়ের মাঝে ডুব’- স্লোগান নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে উদ্বোধন করা হয় চমৎকার ইন্টেরিয়রে সজ্জিত এই বুকশপ ক্যাফে। এখানে রয়েছে ‘বারান্দায় কফি’, ‘বইয়ের হাট’, ‘আকাশ কুসুম’ এবং ‘বৈঠকখানা’ নামে চারটি অংশ। আগামী মার্চে শুরু হতে যাচ্ছে ‘চিলেকোঠায় কাবাব’ নামে ভবনের ছাদে আরেকটি আয়োজন। তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলাজুড়ে আছে দেশি-বিদেশি বই। নিচতলায় সব শ্রেণির পাঠকের জন্য আছে পুরনো বই ও ম্যাগাজিন। দোতলার বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে গল্প করা যাবে। বেঙ্গল বইয়ের স্থাপত্যশিল্পী তাহমিদা আফরোজ পুরো ভবনজুড়ে রেখেছেন সবুজের ছোঁয়া, রেখেছেন একটি সবুজে ঢাকা ঝুলন্ত বাগানও। অসুস্থরা হুইল চেয়ারে পুরো জায়গা ঘুরে নিজের পছন্দমাফিক বই কিনতে পারবেন এখান থেকে।

বেঙ্গল বই

এখানে নিয়মিত পাঠচক্র, কবিতা পাঠের আসর, নতুন লেখা ও লেখকের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা, প্রকাশনা উৎসব, চিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন রয়েছে। বেঙ্গল বইয়ের ‘বৈঠকখানা’য় কেউ পুরনো দুটি বই ডোনেট করলে পুরনো সংগ্রহ থেকে একটি নিতে পারবেন। এখানে প্রতি সপ্তাহান্তে শুক্র ও শনিবার ভোর ৭টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত নাস্তার ব্যবস্থা থাকে, আর অন্যান্য দিন সকালে থাকে চা-সিঙারা। প্রতিদিনই সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যে কেউ এখানে এসে বই পড়তে পারবেন। সেক্ষেত্রে কোন ফি দেওয়া বা রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না।

বাতিঘর

বাতিঘর

লাল ইটের দেয়ালের মতো সাজানো হয়েছে বইঘরের দেয়াল। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বই পড়ুয়ারা। কেউ বই খুঁজছেন, কেউ পড়ছেন। চলছে বই নিয়ে আলোচনা। প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে, লক্ষাধিক বই নিয়ে ঢাকার বাংলা মোটরে অবস্থিত বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অষ্টম তলায় হয়েছে বাতিঘর। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ে ১০০ বর্গফুটের ছোট পরিসরে চালু হওয়া বইবিপণি বাতিঘর ২০১২ সালে তিন হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে স্থানান্তরিত হয় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে, প্রশংসিত হয় বইপ্রেমীদের কাছে। অভ্যন্তরীণ সজ্জায় মুঘল স্থাপত্য বিশেষত লালবাগ কেল্লার আদলে নির্মিত ঢাকার ‘বাতিঘর’ এ পাঠকরা তাদের পছন্দের বই নিয়ে পড়তে পারবেন সেখানে বসেই। তাদের জন্য চেয়ারগুলো সাজানো হয়েছে মুঘল রীতি অনুযায়ী। বাতিঘরে রয়েছে একটি ছোট্ট মঞ্চ, যেখানে বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়, প্রতি মাসেই থাকে কোনও না কোনও আয়োজন। মঞ্চটি নির্মিত হয়েছে লালবাগ কেল্লার পরীবিবির মাজারের আদলে। সেলস কর্নারটি সাজানো হয়েছে ফতেহপুর সিক্রির মতো করে, যেখানে বসে গান করতেন সংগীতজ্ঞ তানসেন। শিশু কর্নারটি সাজানো হয়েছে কাঁচ ও কাঠ খোদাইয়ের বাহারি নকশায়। বাতিঘর থেকে একসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকার বই কিনলে দেওয়া হবে একটি প্রিভিলেজ কার্ড। এই কার্ডটি দিয়ে গ্রাহক এক বছর বই কেনায় মূল্য ছাড় পাবেন। চাইলে সারাদিন ধরে আপনি এখানে বসেই বই পড়তে পারেন, কেউ বাধা দেবে না। তবে গ্রাহকরা এখান থেকে কোনও বই বাসায় নিয়ে পড়তে পারবেন না। সপ্তাহে সাত দিনই সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে বইপ্রেমীদের ‘বাতিঘর।’

দীপনপুর

দীপনপুর

প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের ৪৫তম জন্মদিনে এলিফ্যান্ট রোডে যাত্রা শুরু করে বইঘর ‘দীপনপুর’। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত হন প্রকাশক দীপন। দীপনের মৃত্যুর পর তার সহধর্মিনী ডা. রাজিয়া রহমান জলি দীপনের স্মৃতি ও চেতনাকে ধরে রাখতে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠা করেন ভিন্নধর্মী বুকশপ ক্যাফে ‘দীপনপুর।’ এলিফ্যান্ট রোডের ২৩০ নম্বর ভবনে প্রায় তিন হাজার স্কয়ার ফুটের বিশাল পরিসরে এই বুকশপ ক্যাফে করা হয়েছে। ঢুকতেই চোখে পড়বে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের মৃত্যুর সময়কালে তিনি যে চেয়ারে বসেছিলেন সেটি, সঙ্গে টেবিল এবং রক্তাক্ত পান্ডুলিপি ও কলম এবং অন্যান্য জিনিসপত্র।

দীপনপুর
দীপনপুরে বই ছাড়াও রয়েছে ‘দীপনতলা’ নামের অনুষ্ঠানস্থল। চাইলে যে কেউ এখানে সাহিত্য, কবিতা পাঠ, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে পারবেন। রয়েছে ‘ক্যাফে দীপাঞ্জলি।’ এখানে বই পড়া ও দেখার পাশাপাশি চা, কফি ও ফ্রেশ জুস পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তা। রয়েছে শিশু-কিশোরদের জন্য স্বপ্নরাজ্য ‘দীপান্তর।’ শিশুরা এ কর্নারে বই পড়তে পারবে, আঁকতে পারবে। পাশাপাশি খেলতেও পারবে। সপ্তাহে দু’দিন এখানে বসছে শিশুদের জন্য ছবি আঁকার স্কুল। থাকছে শিশুদের জন্য গল্প বলার আসর এবং বরেণ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে শিশুদের মতবিনিময় সভা।

দ্য নার্ডি বিন কফি হাউজ
দ্য নার্ডি বিন কফি হাউজ
ধানমন্ডিতে অবস্থিত ‘দ্য নার্ডি বিন কফি হাউজ’ নিঃসন্দেহে ইংরেজি সাহিত্য পড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। ভিনটেজ স্টাইলে করা ইন্টেরিয়র আর পরিবেশে এই কফি শপে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইংরেজি বইয়ের সমাহার। কফির কাপে ধোঁয়া, হালকা স্ন্যাক্স, আড্ডা, হাতে বই, সবটুকু মিলিয়ে বইপ্রেমীদের কাছে খুব কম সময়েই প্রিয় হয়ে উঠেছে জায়গাটি। সব বয়সী মানুষের জন্যই এখানে রয়েছে বই। মাঝে মাঝে লাইভ মিউজিকের আয়োজনও থাকে এই বুক অ্যান্ড কফি শপে। তবে এখানকার বই কেবলই পড়ার জন্য, কেনার জন্য নয়।

দ্য নার্ডি বিন কফি হাউজ
ছবি: সংগৃহীত




/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ