X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেন্ডার সম্পর্ক এবং পরিবার বিষয়ে মার্ক্স || মূল: হিদার ব্রাউন || ভাষান্তর: অদিতি ফাল্গুনী

.
০৫ মে ২০১৬, ১৮:৫৯আপডেট : ০৫ মে ২০১৬, ১৯:২৪

কার্ল মার্ক্স (৫ই মে, ১৮১৮ – ১৪ই মার্চ, ১৮৮৩) বহু নারীবাদী তাত্ত্বিকই মার্ক্স এবং মার্ক্সবাদের সঙ্গে বড়জোর এক ধরনের অস্বচ্ছ সম্পর্কে জড়িত থেকেছেন। এর ভেতর মার্ক্স বা এঙ্গেলস সম্পর্ক নারীবাদীদের বিতর্কের একটি বড় এলাকা।
গিওর্গ লুকাচ, টেররেল কার্ভারসহ অনেক তাত্ত্বিকের আলোচনাতেই দ্বন্দ্বশাস্ত্র-সহ নানা বিষয়ে মার্ক্স এবং এঙ্গেলসের মধ্যে মত পার্থক্যের বেশ খানিকটা প্রমাণ পাওয়া যায়। মূলত সেসব আলোচনার উপর নির্ভর করেই আমি লৈঙ্গিক সম্পর্ক এবং পরিবার প্রশ্নে মার্ক্স এবং এঙ্গেলসের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য বিষয়ে আলোকপাত করেছি। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত, নারীবাদী তাত্ত্বিকরা মার্ক্স এবং এঙ্গেলসে ‘অর্থনৈতিক নির্দ্ধারকবাদ’ বিষয়ক ভাবনাকে সমালোচনা করে যে বিতর্কগুলো তুলছেন সে বিষয়ে এ আলোকপাত প্রাসঙ্গিক। যাহোক, লুকাচ এবং কার্ভার উভয়েই ‘অর্থনৈতিক নির্দ্ধারকবাদ’ প্রসঙ্গে মার্ক্স এবং এঙ্গেলসের ভেতরে মত পার্থক্যের কিছু সীমা খতিয়ে দেখেছেন। দু’জনেই মার্ক্সের চেয়ে এঙ্গেলসকে অধিকতর ‘বৈজ্ঞানিক’ এবং ‘একমুখী’ মনে করেন। রায়া দ্যুনায়েভস্কায়া প্রথম জেন্ডার প্রসঙ্গে মার্ক্স এবং এঙ্গেলসের দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য তুলে ধরেন। এঙ্গেলসে অধিকতর ‘বৈজ্ঞানিক’ এবং ‘একমুখী’ অবস্থানের পাশাপাশি জেন্ডার-সম্পর্কের বিষয়ে মার্ক্সের অধিকতর দ্যোতনা সম্পন্ন এবং দ্বন্দ্বমূলক বোঝা-পড়ার কথাও দ্যুনায়েভস্কায়া স্বীকার করেছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেন্ডার এবং পরিবার বিষয়ে মার্ক্সের লেখা-পত্র নিয়ে কমই আলোচনা হয়েছে। তবে, ১৯৭০ এবং ’৮০-এর দশকগুলোতে এ লেখাগুলো নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। ন্যান্সি হার্টসক এবং হেইদি হার্টম্যানের মত নারীবাদী তাত্ত্বিকেরা মার্ক্সের সামগ্রিক তত্ত্বকে সাইকো-এ্যানালিটিক এবং নারীবাদী তত্ত্বের অন্য নানা আঙ্গিকের সঙ্গে একত্রীভূত করেছেন। এই তাত্ত্বিকেরা মার্ক্সের তত্ত্বকে প্রাথমিক ভাবে জেন্ডার বিষয়ে অন্ধ হিসেবে খারিজ করেছেন এবং বলেছেন যে, জেন্ডার-সম্পর্ক বুঝতে আর একটি বাড়তি তত্ত্ব প্রয়োজন। যাহোক, এই দুই তাত্ত্বিক অবশ্য ‘উৎপাদন’কে বুঝতে মার্ক্সের ঐতিহাসিক বস্তুবাদের প্রয়োজনকে সূচনা বিন্দু হিসেবে স্বীকার করেন। এছাড়া, আরো অনেক মার্ক্সবাদী নারীবাদীই ১৯৬০ এবং ’৮০-র দশকে বিশেষত রাজনৈতিক অর্থনীতি বোঝার জন্য প্রভূত অবদান রেখেছেন। এদের ভেতর মার্গারেট বেনস্টন, মারিয়া রোসা ডাল্লা কস্টা, সিলভিয়া ফেদেরিচি এবং ওয়ালি সেকোম্বের কথা বলা যায় গৃহশ্রমকে পুনর্মূল্যায়ন করতে চেয়েছেন। এছাড়া, লিস ভোগেল রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং সামাজিক পুনরুৎপাদনের একটি একক অবধারণের জন্য দ্বৈত ব্যবস্থার উর্ধ্বে উঠেছেন। ন্যান্সি হলস্ট্রম আরো দেখিয়েছেন যে, নারীর প্রকৃতির ঐতিহাসিক বুঝতে মার্ক্সকে ব্যবহার করা যায়।

১৯৭০ এবং ’৮০-র দশকে পিতৃতন্ত্র এবং পুঁজিবাদকে নিয়ে ‘দ্বৈত-ব্যবস্থাতত্ত্ব’ ছিল সমাজতন্ত্রী নারীবাদের একটি সাধারণ আঙ্গিক যা ১৯৯০-এর দশক এবং তারপরে একটি ব্যর্থ প্রকল্প হিসেবে অনেকের কাছে প্রতীয়মান হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতন সমাজতন্ত্রী নারীবাদের জনপ্রিয়তায় ধস নামায়। আইরিস ইয়ং যেমন ইতোমধ্যে তর্ক তুলেছেন যে দ্বৈত-ব্যবস্থাতত্ত্ব আসলে তত্ত্ব হিসেবে অপর্যাপ্ত যেহেতু সমাজের খুব পৃথক দুই তত্ত্বের উপর এটি নির্ভরশীল— একটি সমাজের ঐতিহাসিক গতিশীল বিকাশ বিশেষত সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত বিকাশ এবং অন্যটি মানব স্বভাবের স্থির, মানসিক মতাদর্শের উপর নির্ভর করে। এই দুই তত্ত্ব; উভয়ের মাঝের পারষ্পরিক দূরত্বের কারণেই সন্নিবেশিত করাটা খুব কঠিন। যাহোক, মার্ক্সের নির্দ্ধারকবাদ, জেন্ডার-অন্ধ ক্যাটেগরিসমূহ এবং পুনরুৎপাদনের মূল্যে উৎপাদনের উপর ঝোঁক এসবই মার্ক্সের কাজ নিয়ে আমার পুনর্মূল্যায়নের কাজের সূচনাবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়— আর একাজে অপরাপর মার্ক্সিস্ট নারীবাদীদের কাজের পাশাপাশি মার্ক্সের রচনাবলীর নিবিড় পাঠ ছিল আমার অবলম্বন।

মার্ক্সের কাজ ভিক্টোরিয়ান মতাদর্শকে ধারণ করলেও তাঁর সমগ্র রচনাবলী জুড়ে জেন্ডার এবং পরিবার বিষয়ে প্রচুর আগ্রহোদ্দীপক ভাবনা-চিন্তা রয়েছে। ১৮৪৪ সালে ‘অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পান্ডুলিপি’ (Economic and Philosophical Manuscripts)-এ মার্ক্স এই যুক্তির অবতারণা করেছিলেন যে, সমাজে নারীর অবস্থান গোটা সমাজের প্রগতির মাপক হতে পারে। অবশ্য এমন বক্তব্য তাঁর কাছ থেকেই প্রথম এসেছে এমনটি নয়— চার্লসফ্যুরিয়ের এ বক্তব্যের প্রথম প্রেরণাদাতা বলে বিবেচনা করা হয়— তবে মার্ক্সের জন্য, এটা মানবীর অবস্থান বদলানোর জন্য মানবের প্রতি একটি সাধারণ আহ্বান মাত্র ছিল না। বরং মার্ক্স সমাজ বিষয়ক তাঁর সামগ্রিক তত্ত্বের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এমন একটি দ্বন্দ্বমূলক যুক্তি তৈরি করছিলেন। পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক কাঠামোর উর্ধ্বে সমাজের অগ্রগতির জন্য নতুন সামাজিক সম্পর্ক গঠন করা প্রয়োজন ছিল যা পুরোটাই মূল্যের গঠনের একটি ক্রুর, বিযুক্ত রূপের উপর নির্ভরশীল নয়। মানুষকে পরষ্পরের মূল্য বুঝতে শিখতে হবে, শুধুই একজন আর একজনকে কি দিতে পারে তার নিরিখে নয়। এ বিষয়ে মেয়েদের কথা বিশেষভাবে বলতেই হয় যেহেতু সব সমাজে না হলেও অধিকাংশ সমাজেই তারা একটি প্রান্তিক গোষ্ঠি হয়ে থেকেছে। এভাবে নর এবং নারী প্রগতির সেই বিন্দুতে উপনীত হবে যেখানে ব্যক্তি নর না নারী এমন কোন বিমূর্ত ক্যাটেগরিতে বিভক্ত না হয়ে তার নিজের গুণেই মূল্যায়িত।

এছাড়া, মার্ক্স জেন্ডারকে কোন স্থির ক্যাটেগরির চেয়ে গতিশীল ক্যাটেগরি হিসেবেই দেখতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট দাবি না করলেও ১৮৪৪ সালে ‘ম্যানুস্ক্রিপ্টস’ এবং ‘জার্মান ইডিওলজি’-তে প্রকৃতি ও সামজ দ্বৈততা বিষয়ক সনাতনী, দ্বৈতবাচক দৃষ্টিভঙ্গির তিনি তীব্র বিরোধিতা করেন। প্রকৃতি এবং সমাজ পরষ্পরের সঙ্গে মেলামেশা করে পরষ্পরের সারবত্তার খুব একটা বদল না করেই এমন মতবাদের বদলে মার্ক্স এই যুক্তি দেখান যে, প্রকৃতি ও সমাজ পরষ্পর দ্বন্দ্বমূলকভাবে সম্পর্কিত। যেহেতু মানুষ তার শ্রমের মাধ্যমে প্রকৃতির সঙ্গে যোগ সাদৃশ ঘটায়, ব্যক্তি এবং প্রকৃতি উভয়েই শ্রমের সংস্পর্শে বদলে যায়। এটা ঘটে থাকে কারণ মানুষ মূলত প্রকৃতির অংশ হিসেবে বিরাজ করে আর শ্রম প্রক্রিয়া এই স্বল্পকালীন একাত্মতার অবলম্বন হিসেবে কাজ করে থাকে। যেহেতু সমাজ এবং প্রকৃতি উভয়েই কোন স্থির সত্ত্বা নয়, সেহেতু মার্ক্স বলেন যে ‘প্রাকৃতিক’ বলে কোন বহু-ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে না। বরং ‘প্রাকৃতিক’ বিষয়টিও নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক অবস্থার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। যদিও কারোরই উচিত নয় প্রকৃতি বা সমাজ দ্বৈততা বা নর বা নারী দ্বৈততার ভেতর খুব ঘনিষ্ঠ কোন সমান্তরাল রেখা টানা— এমন কিছু করাটাও এই ক্যাটেগরিগুলোকে পুনরায় আকার দেয় যা আমরা বদলাতে চেয়েছি— জার্মান ইডিওলজিতে মার্ক্স এবং এঙ্গেলসের শ্রমের জেন্ডার বিভাজন নিয়ে আলোচনায় প্রকৃতি বা সংস্কৃতি দ্বৈততা বিষয়ে মার্ক্সের দ্বন্দ্বমূলক ভাবনা প্রকাশিত হয়। জার্মান ইডিওলজিতে মার্ক্স এবং এঙ্গেলস এটাই বলতে চেয়েছেন যে, মানব ইতিহাসের একদম সূচনার দিকের পরিবারগুলোতেও যে শ্রম বিভাজন দেখা যায় তা পুরোপুরি ‘প্রাকৃতিক’ নয়। বরং পরিবার নিয়ে তাঁদের মিশ্র আলোচনায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শুধুমাত্র অত্যন্ত অবিকশিত উৎপাদন সম্পর্কেই এই জেন্ডার ভিত্তিক শ্রম বিভাজন ‘প্রাকৃতিক’ যেখানে নারীর ভিন্ন ধরনের জৈবিক গড়ন তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রকৃতির দৈহিক শ্রম করাটা কষ্টকর করে তোলে। এ কথার অর্থ এই যে, নারীর যে হীন অবস্থান সমাজে ধরে নেওয়া হয় তা সমাজ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলায়। এছাড়া, যখনই কোন সামাজিক উপাদান জড়িত থাকে, প্রযুক্তিগত বিকাশের চেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তাহলো নিজেদের অবস্থান বদলানোয় মেয়েদের নিজেদেরই কাজ করা।

মার্ক্স তাঁর সূচনার দিকের রচনার দু’টো জায়গায় পুঁজিবাদী সমাজে নারীর অবস্থান আলোচনা করেছেন। ‘দ্য হলি ফ্যামিলি’তে ‘লেইস মিস্ত্রেস দ্যু পাহি (দ্য মিসট্রেসেস অফ প্যারিস)’ উপন্যাসে পারি নগরীর পতিতাদের নিয়ে ইউজিন স্যু’র নীতিবাগিশ ভাষ্যের সমালোচনা করেন। এ উপন্যাসে ফ্লর দ্যু মাহি নামে একটি মেয়ে দারিদ্র্য এবং ‘পতিতাবৃত্তি’র হাত থেকে উদ্ধার পায় এক কিশোর জার্মান রাজপুত্রের সহায়তায়। রাজপুত্র তাকে এক ধার্মিক নারী এবং এক যাজকের প্রযত্নে রাখে যারা দু’জনেই তাকে তার অতীত জীবনের ভ্রষ্টাচার কতটা মন্দ ছিল তা বুঝতে সাহায্য করে। ধীরে ধীরে মেয়েটি একটি সন্ন্যাসিনী আশ্রমে স্থান পায় এবং কিছুদিন পর মারা যায়। এখানে মার্ক্স স্যুকে ক্যাথলিক সামাজিক মতাদর্শের নিঃশর্ত গ্রহণের জন্য স্যুকে সমালোচনা করেছেন। এই ক্যাথলিক মতাদর্শ নৈতিকতার এক বিমূর্ত ভাষ্যের উপর জোর দেয় যা কখনোই অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ শুধুই আধ্যাত্মিক সত্ত্বা নয় যারা তাদের দৈহিক বাসনা অনুকম্পা করতে পারবে। ফ্লর দ্যু মাহির জন্য এ ছিল বিশেষভাবে সত্য যেহেতু জীবিকার জন্য পতিতাবৃত্তি ছাড়া তার কাছে আর কোন পথ খোলা ছিল না। যাহোক, উপন্যাসে দেখা যায় যে, যাজক তাকে তার অতীতের নৈতিক অধঃপতনের জন্য বকেছেন এবং মেয়েটিকে বলেছেন তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হতে; যদিও আসলে তার এ বিষয়ে কোন সত্যিকারের পছন্দ অপছন্দ করার মত কিছু ছিল না। আর এভাবেই এ রচনায় মার্ক্স শ্রমজীবী নারীর জন্য তাঁর গভীর সহানুভূতিই ব্যক্ত করেন। এছাড়া, ক্রিশ্চিয়ানিটির একদেশ দর্শীতাকেও তিনি সমালোচনা করেন যা কিনা নিরেট দেহের উপর নিরেট মনের অবস্থানকে তুলে ধরতে চায়।



মার্ক্স অবশ্য পুঁজিবাদী সমাজে নারীর অবস্থা শুধুই শ্রমজীবী নারীর আলোচনাতেই নিবদ্ধ রাখেননি। আত্মহত্যা বিষয়ক পোশ্যেতের কাজ বিষয়ক একটি প্রবন্ধ বা অনুবাদে ১৮৪৬ সালে মার্ক্স দেখাচ্ছেন উচ্চবর্গের সমাজে নারীর প্রতি পারিবারিক নির্যাতনের রূপ। চারটি কেসস্টাডির ভেতর তিনটিতেই মেয়েরা আত্মহত্যা করছে পারিবারিক নির্যাতনের কারণে। প্রথম ঘটনায় এক বিবাহিতা নারী আত্মহত্যা করছে তার ঈর্ষাকাতর স্বামী তাকে ঘরে বন্দী রেখে প্রায়ই দৈহিক এবং যৌন নির্যাতন করছে বলে। দ্বিতীয় ঘটনায় একটি বাকদত্তা মেয়ে তার প্রেমিকের ঘরে রাত কাটিয়ে আসার পর তার বাবা-মা সবার সামনে তাকে অপমান করলে সে জলে ডুবে মরে। শেষ ঘটনাটিতে একটি মেয়ে তাঁর এক পিতৃব্যের সঙ্গে গর্ভবতী হয়ে পড়লে গর্ভপাত করতে না পেরে মেয়েটি আত্মহত্যা করে। এখানে দু’টো ঘটনায় মার্ক্স এই নারীদের দুর্দশায় গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি পোশ্যেতের রচনা থেকে কিছু স্তবক উদ্ধৃত করেন এবং সেই সঙ্গে নিজের মন্তব্য জুড়ে দেন। এছাড়া মার্ক্স পোশ্যেতের রচনা থেকে বুর্জোয়া পরিবারের একটি সামগ্রিক বদলের প্রয়োজনের উপর আলোক-সম্পাত করেন : ‘রেভল্যুশন সব স্বৈরাচারের উর্ধ্বে উঠতে পারেনি। সমাজের যে নিপীড়ক শক্তিগুলোকে আমরা মন্দ বলি, তা পরিবারে বিরাজ করে এবং প্রায়ই নানা সংকটের সৃষ্টি করে, রেভল্যুশনের আগে সৃষ্ট সংকটগুলোর মতোই।’ এভাবে মার্ক্স বুর্জোয়া পরিবার কাঠামোর নিপীড়নমূলক দিকটির দিকে আমাদের দৃষ্টি ফেরান যা একটি উন্নততর সমাজের জন্য বদল করা খুবই প্রয়োজন।

দ্য কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো বা কমিউনিস্ট ইশতেহার-এ মার্ক্স এবং এঙ্গেলস বুর্জোয়া পরিবারের সমালোচনায় ফেরেন। তাঁদের যুক্তি এই যে, পরিবাবর তার বুর্জোয়া কাঠামোয় মূলত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা এবং হস্তান্তরের উপর প্রাথমিকভাবে নির্ভরশীল যা ধ্বংসের মুখে ছিল। পরিবারের এই বিশেষ নবকাঠামো যে, বস্তুগত কারণে হয়েছে তা ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছিল যেহেতু সন্তানকে দেবার মত কোন সম্পত্তি সর্বহারার নেই বা ছিল না। কখনো হয়তো এই সর্বহারা পরিবারগুলো ছিল ছোট কৃষক পরিবাবর। তবে, নানা কায়দায় যখন তাদের জমিগুলো বেহাত হতে লাগলো এবং তারা বাধ্য হলো দূর শহর আর কারখানাগুলোয় জীবিকার জন্য পাড়ি জমাতে, তখনই পরবর্তী প্রজন্মকে দেবার মত জমি তাদের আর থাকলো না। মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীদের দেবার মত আর কোন উত্তরাধিকার না থাকায় এবং জীবদ্দশায় পরিবারের শ্রম-শক্তি বণ্টনে আর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পরিবারে পিতার কর্তৃত্ব ভয়ানক হ্রাস পেলো যা জন্ম দিল ভিন্ন ধাঁচ বা আঙ্গিকের পরিবারের। মার্ক্স এবং এঙ্গেলস অবশ্য এরপর আর বিশদ ব্যাখ্যা দেননি যে, অতীতের পরিবার কাঠামো ভেঙ্গে যাবার পর নতুন কোন ধাঁচের পরিবার দেখা দেবে?

যদিও ‘ক্যাপিটাল’ রাজনৈতিক অর্থনীতির সমালোচনায় নিবেদিত, তবু ‘জেন্ডার’ এবং ‘পরিবার’ বিষয়ে এই গ্রন্থে যথেষ্ট পরিমাণ আলোচনা রয়েছে। দ্য কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো বা কমিউনিস্ট ইশতেহার-এ মার্ক্স পরিবারের উচ্ছেদ বা ঔফহেবাং-এর কথা বলেছেন। কারখানায় যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ চালু হবার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকের দৈহিক শ্রম আগের মত অতটা দরকারী থাকে না এবং সেক্ষেত্রে নারী এবং শিশুও কারখানায় গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক হতে পাবে। পুঁজি এই শ্রমিকদের বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে যেহেতু নারী ও শিশুরা সমাজের সেই নিপীড়িত শ্রেণি থেকে আসে যারা আরো কম মজুরির বদলে কাজ করতে বাধ্য হয়।

ক্যাপিটাল-এ আরো কিছু স্তবক দেখায় যে, কিভাবে মার্ক্স শ্রম শক্তিতে নারীর অবস্থান নিয়ে আরো অনেক বেশি দ্যোতনা সম্পন্ন ভাবনা ভেবেছেন যা আজকের অধিকাংশ নারীবাদীই স্বীকার করেন। উদাহরণস্বরূপ, মেয়েরা যখনই কাজে থাকে তখনই ব্যক্তি জীবনেও তাদের অনেকখানি শক্তি অর্জিত হয় যেহেতু তারা পরিবারের কল্যাণে টাকা ব্যয় করতে পারে এবং দিনের অধিকাংশ সময় তারা আর তাদের বাবা বা স্বামীর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এখানে মার্ক্স এই বিকাশের দুটো দিকই দেখান। একদিকে, দীর্ঘ সময় এবং এমনকি রাতেও কাজ সনাতনী পরিবার কাঠামোর ছাঁচ বদলে দেয় যেহেতু মেয়েরা তাদের কাজের মাধ্যমে ‘পুরুষালী’ হয়ে ওঠে এবং অতীতের মত তারা তাদের বাচ্চাদের খুব বেশি যত্ন নিতে পারে না। অন্যদিকে, পরের একটি স্তবকে, মার্ক্স দেখাচ্ছেন যে ‘প্রথাগত নারীত্বের এই অবনমন’ সম্ভব করে তোলে ‘উন্নততর পরিবার’ যেখানে নর ও নারী হবে সমান।

(সংক্ষেপিত)

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী